somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামের আলোকে প্রচলিত বাইবেল

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৩:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাত্র কিছুদিন আগেও আমার ধারনা ছিল খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ধর্মীয় গ্রন্থ পবিত্র বাইবেল বা বাজারে প্রচলিত ইঞ্জিল শরীফ হলো নবী ঈসা (আঃ) এর উপর প্রবর্তিত ধর্মগ্রন্থ। কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়। বর্তমানে যেই বাইবেল প্রচলিত এটা কোন ঐশ্বরিক গ্রন্থ নয়। বরং মহাভারত বা রামায়ণের মতো মানব রচিত ধর্মীয় গ্রন্থ।
খ্রিস্টধর্মমতে, ১৬০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ৪০জন লেখক বাইবেল রচনা করেছিলেন। এরা ছিলেন পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের বিভিন্ন লোক। যারা পবিত্র আত্বার সহায়তায় বাইবেল রচনা করেন। বাইবেল মূলত ৬৬টি পুস্তকের একটি সংকলন, যা দুটি প্রধান ভাগে বিভক্ত— ৩৯টি পুস্তক সম্বলিত পুরাতন নিয়ম বা ওল্ড টেস্টামেন্ট, এবং ২৭টি পুস্তক সম্বলিত নতুন নিয়ম বা নিউ টেস্টামেন্ট। ঈসা আঃ এর উপর নাযিলকৃত ইঞ্জিল যে এগুলো নয় তার বড় প্রমাণ হল এগুলোতে কিভাবে যীশুকে গ্রেফতার করা হল, বিচার করা হল,শুলে চড়ানো হল এবং কবর দেয়া হল ইত্যাদি সব বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ বোঝা যাচ্ছে তাকে “মেরে” ফেলার পরেই এগুলো লেখা হয়েছে।

মানুষ রচিত এই বাইবেলও যুগে যুগে পরিবর্তিত ও সম্পাদিত হয়েছে। বাইবেলের মূল কপি বা পাণ্ডুলিপির কোন হদিস মেলে না। যেগুলো বর্তমানে পাওয়া যায় এগুলো বারবার সম্পাদনার ফসল। আধুনিক যুগে বাইবেল পরিবর্তনের ইতিহাস দেখি- ১৬১১ সালে বৃটেনের রাজা জেমসের উদ্যোগে সর্ব প্রথম বাইবেলের ইংরেজী অনুবাদ প্রস্তুত ও প্রকাশিত হয়। তাকে “কিং জেমস সংস্করণ” বলা হয়। পরবর্তীকালের সকল অনুবাদের ভিত্তি এটিই। কিন্তু তাও অক্ষুন্ন থাকেনি। ১৮৮১ সালে Revised Version নামে সম্পাদিত একটি ইংরেজী অনুবাদ বাজারে আসে। মনে করা হয় হয়েছিল এটাই শেষ চেষ্টা। কিন্তু বাস্তবে তা ছিল না। ১৯৫২ সালে আমেরিকার ৩২জন খৃষ্টান গবেষক বাইবেলের পূণঃ সম্পাদনার প্রয়োজন বোধ করেন। এবার “ষ্ট্যান্ডার্ড রিভাইজড ভার্সন” নামে তাঁরা অপর একটি অনুবাদ প্রকাশ করেন। উক্ত অনুবাদে বাইবেলের নতুন ও পুরাতন নিয়ম থেকে ৪১টি পদ বিলুপ্ত করা হয়েছে।

বাইবেলে অসংখ্য যায়গায় তথ্যের গড়মিল ও অশ্লীলতা রয়েছে। যেখানে নারী-পুরুষের যৌন সম্পর্কের কদর্য বর্ননা দেয়া হয়েছে। মূলত লেখকগণ তাদের বিকৃত যৌন আচারের ধর্মীয় স্বীকৃত দিতেই এমনটা করেছে বলে ধরা হয়।

পৃথিবী ধ্বংস হবে? না হবে না? বাইবেলের কোন কথাটি সঠিক?
বাইবেলের বুক অফ হিব্রুর ১ম অধ্যায় ১০-১১ অনুচ্ছেদ,এবং বুক অফ শামের ১০২ অধ্যায়ের ২৫,২৬ অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে যে, “সর্ব শক্তিমান ইশ্বর আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন,আর এগুলি ধ্বংস হয়ে যাবে”।
আর বুক অফ একলেসিষ্ট ১ম অধ্যায়ের ৪ অনুচ্ছেদে আর বুক অফ শামের ৭৮ অধ্যায়ের ৬৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, “পৃথিবী কোনদিন ধ্বংস হবে না”।
এখন প্রশ্ন হল কোন কথাটি সঠিক? স্রষ্ঠার কথায় কখনোই এমন বিপরীতমুখী বক্তব্য সম্ভব নয়।

একটি অবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতি
বুক অফ লেবিটিকাশ এর ১৪ নং অধ্যায়ের ৪৯-৫৩ অনুচ্ছেদে আছে যে, “কোন বাড়িকে প্ল্যাগ বা কুষ্ঠ রোগ মুক্ত করতে দু’টি পাখি নিয়ে একটিকে মেরে ফেলে চামড়া ছাড়িয়ে রেখে দিন। আর যেটি বেঁচে আছে সেটাকে পানিতে চুবান তারপর বাড়ির চারপাশে এগুলোকে ছড়ান”।
এরকম উদ্ভট চিকিৎসা কি খৃষ্টানরা করে থাকে?

ব্যভিচারিনী চিনার পদ্ধতি
বুক অফ নাহাম্বার ৫ নং অধ্যায়ের ১১-৩১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে-“যাজক একটি পাত্রে কিছু পবিত্র পানি নিবেন। মেঝে থেকে ধুলি নিবেন। সেটা পানিতে মিশাবেন। আর এটাই হল তেঁতো পানি। এই পানিকে অভিশাপ দিয়ে ঐ মহিলাকে দেয়া হবে। মহিলা সেটা খাবে। যদি মহিলা ব্যভিচার করে থাকে তাহলে তার পেটে সেই অভিশাপ চলে যাবে। ফলে পানিটা পেটে গিয়ে তার পেট ফুলে যাবে, উরু পচে যাবে। সকল মানুষ তাকে অভিশাপ দিবে। আর যদি সেই মহিলা ব্যভিচার না করে থাকে তাহলে তার কিছুই হবেনা। সে সুস্থ্য থাকবে”।
এই তেঁতো পানির পরীক্ষা দিয়ে কি কখনো কোন ব্যাভিচারিনী শনাক্ত করা গেছে?

ভুলে ভরা বই কি করে ঐশী গ্রন্থ হয়?

অর্থাৎ এই কথা স্পষ্ট যে, ঈসা(আঃ) এর উপর যে গ্রন্থ নাজিল হয়েছিলো তা বাইবেল নয়। বরং বাইবেল হলো তার বিকৃত রূপ যা বিভিন্ন যুগে মানুষ নিজের পছন্দমতো নিয়ম কানুন ঢুকিয়ে দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে বাইবেল বিকৃতির ব্যপারে একাধিক আয়াত রয়েছে। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন-
“ধ্বংস সেই সকল লোকের জন্য,যারা নিজ হাতে কিতাব লেখে, অতঃপর বলে এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে, যাতে তার মাধ্যমে সামান্য কিছু আয়-রোজগার করতে পারে। সুতরাং তাদের হাত যা রচনা করছে সে কারণেও তাদের জন্য ধ্বংস। এবং তারা যা উপার্জন করছে সে কারণেও তাদের জন্য ধ্বংস।“ {সূরা বাকারা-৭৯}

সুতরাং এইকথা পরিষ্কার যে, এই বাইবেল কোন কিছুতেই আল্লাহ প্রদত্ত গ্রন্থ নয়। এবং বর্তমান খৃস্টান ধর্মালম্বীরা ঈসা(আঃ) এর দেখানো দ্বীনের অনুসারী নয়।

সবচেয়ে বড় ব্যাপার পবিত্র কোরআনের ন্যায় বাইবেল কোন বৈশ্বিক গ্রন্থ না। কারণ গসপেল অফ মেথুয়ে এর ১০ নাম্বার অধ্যায়ের ৫ নং ও ৬ নং অনুচ্ছেদে লিখা হয়েছে-“তোমরা কেউ জেন্টাইলদের কাছে যেও না। তোমরা কেবল ইজরাঈলের কাছেই যাবে”।
এখানে জেন্টাইল বলতে ইহুদী ব্যাতিত অন্য সম্প্রদায়ের লোকদের বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ ইহুদী ব্যাতিত অন্য ধর্মালম্বীদের জন্য বাইবেল রচিত হয়নি। তাই কোন মুসলিম বা হিন্দুকে যদি কোন খ্রিষ্টান যাজক বাইবেল মানার আহবান করা হয় তাহলে তা হবে সয়ং বাইবেলেরই পরিপন্থী।


বি. দ্র.- আমি ধর্মীয় গবেষক নই। সবগুলো তথ্যই বিভিন্ন জায়গা থেকে নিয়ে আমি নিজের মতো করে সাজিয়ে লিখেছি। এই তথ্যগুলোর বিপরীতে কারো কোন অভিযোগ বা যুক্তি খণ্ডন একান্তকাম্য।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৩:১০
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×