বিজয় দিবস উপলক্ষে ফেসবুকে প্রতিদিন wall picture হিসাবে দিয়েছিলাম একটা করে মুক্তিযুদ্ধের ছবি আর কবিতা। সে জন্য যখন ছবি সার্চ দিলাম, অনেক ছবি পেলাম। উপরে দেয়া ছবিটি তার মধ্যে একটা।
ছবিটা যতবার দেখি, অদ্ভুত লাগে। ছায়াচ্ছন্ন একটা ঘর-একজন মানুষের ছায়া দেখা যাচ্ছে, অন্যজন বেরিয়ে যাচ্ছেন যুদ্ধে। জানতে ইচ্ছা করে এই অসীম সাহসী মানুষটির পরিচয়। উনি কি শহীদ হয়েছিলেন?যদি না হয়ে থাকেন, তাহলে কোথায় আছেন উনি? কেমন আছেন? যদি শহীদ হয়ে থাকেন, কিভাবে কোথায় হয়েছিলেন? সবই জানতে ইচ্ছা করে। কিন্তু আজকে, ৩৮ বছর পর এর উত্তর পাওয়া এক রকম অসম্ভব বলেই মনে হয়। তবু প্রশ্নগুলো মনে হয়...
ছবিটি তুলেছেন ভারতীয় আলোকচিত্রী কিশোর পারেখ। যশস্বী ভারতীয় আলোকচিত্রী কিশোর পারেখের আলোকচিত্রের সাথে পরিচয় নেই এমন মানুষ বিরল এদেশে, হয়তো তাঁর নাম জানেন না কিন্তু ছবি ঠিকই দেখেছেন। পারেখ ১৯৬০ সালে আমেরিকার university of southern California-র filmmaking and documentary photography থেকে পড়া শেষ করার আগেই প্রচুর পুরুস্কারে সম্মানিত ছিলেন। সারা জীবন তিনি লড়াই করেছেন ফটো সাংবাদিকতাকে সামনে আনার জন্য। নিজের কাজ করে গেছেন যে কোন মূল্যে। শোনা যায় নেহেরু জেদি পারেখকে চড় মেরেছিলেন ফটোগ্রাফারের ভূমিকা পালনকালে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে পারেখ এসেছিলেন নিজেই। জোর করে হেলিকপ্টারে চড়ে বসেছিলেন এই শর্তে যে, ঢাকা নেমে তিনি নিজের দায়িত্ব নিজেই নেবেন। ২৪ দিন তিনি ঢাকায় ছিলেন, এবং আহার-নিদ্রা ত্যাগ করে প্রচুর ছবি তুলেছিলেন- আর এভাবেই তাঁর বই Bangladesh- a brutal birth সৃষ্টি হয়। ভারত সরকার তাঁর ছবি দেখে তাঁকে শাস্তি দেবার বদলে ২০ হাজার কপির অর্ডার দেন। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের অসীম সাহসের কথা।
১৯৮২ সালে হিমালয় পবর্তে ফটো তোলার সময়ে এই অসাধারণ মানুষটির জ়ীবনাবসান ঘটে।
কিশোর পারেখ
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৪৫