তার সাথে কথা বলার সুবাদে যে অধিকারটুকু পাওয়া তার সৎ ব্যবহার আমি করেছিলাম। কথা বলা, ভাল লাগা আর তারপর ভালবাসা। কিন্তু কখনোই বুঝতে পারিনি এমন করে কেও রাস্তার ধুলার মত জীবন থেকে হারিয়ে যেতে পারে। তার সাথে আমার সর্ম্পক ছিলো প্রায় ৪ বছর। সে ছিল “সাদা গোলাপের রানী যা রাত হলেই ফুটতো।” কিন্তু তার সাথে সর্বশেষ যে রাতে দেখা হয় সেদিন সে ফুটেছিল! তবে অন্য কারো জন্য।
একটা দামি টেক্সিতে করে আমি আসছি, স্থান একটি কমিউনিটি সেন্টার। কারণ একটা বিয়ে? কার? চিন্তা গুলো তখন কেমন জানি ঝাপসা হয়ে গেলো। সময়ও শেষ হলো তখনি যখন গন্তব্য স্থলে উপস্থিত টেক্সিটা। কালো কাচের জানলা দেওয়া টেক্সিটার থেকে বাম পা প্রথমে দিয়ে নামলাম, আমার জীবনে এখন প্রথমে ডান বা বাম পা কি আর বেশি? টাকা দেওয়া শেষ করলাম, ড্রাইভারকে বললাম আপনি কি আমার জন্য কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে পারবেন? আমি আবার যাবো, এয়ারর্পোটে। ড্রাইভারটা হয়তো বুঝতে পারলো আবার না।
আমি আস্তে আস্তে ঘুড়ে এক পা, এক পা করে খুবেই সচেতন বা অস্থিতির সাথে এগিয়ে চলছি প্যান্ডেল এর দিকে। বাইরের আলো গুলো এমন ভাবে জ্বলছিলো আর নিভছিলো যেন হাসছে আমায় নিয়ে। তাদের কতই মজা। ভাবলাম মনে মনে।
হাটতে হাটতে এসে পড়লাম দরজার কাছে, বাইরে থেকে দেখলাম দূরে দাড়িয়ে (চেয়ারম্যান) মেয়ের ভাই ওর ছোট ভাইটাকে আমি চেয়ারম্যান বলেই ডাকতাম। কারণ চেয়ারম্যান যেমন একজন থাকে, তার এই একমাত্র ভাই সে কিছু মেয়ের সাথে হাসি আর কথায় ব্যস্ত। আরেকটু দূরে মুখ ঘুড়াতেই দেখলাম তার বোনকে, বোনটাকে আমি পিচ্ছি বলে ডাকতাম। পিচ্ছিটা কত ছোট ছিল, আর এখন কত বড় হল। মনে মনে ভাবলাম এটা কি রবীন্দ্রনাথের ইচ্ছাপূরণের ম্যাজিক!? আরে নাহ। আরেকটু তার দূরে আব্বু আম্মু আর চারপাশে অনেক অত্নিয়। কিন্তু সবার মধ্যমনি হয়ে বসে আছে তারা একটি মঞ্চের লাল গালিচার উপর, আর সাদা সুতি রেশমি কাপড়ে ঘেরা একটা রাজসিংহাসনের উপর। মনে হলো তারা যেন দুইজন রাজা ও রাণী বসে আছে, তাদের কেমন মানালো? কি জানি? আস্তে আস্তে হেটে হেটে গেলাম মঞ্চের দিকে কেও তো আমায় দেখছে না! কি জানি, আমি কি এখন একটা মৃত অতৃপ্ত আত্মা? আমার দামি বুট গুলো যেন মাটিতে সুপারগ্লু এর মত আটকে যাচ্ছে, খুব কষ্ট হচ্ছে বুট গুলো তুলে এগিয়ে যেতে। তাও আমি এগিয়ে যাচ্ছি, এমন দিন আমার জীবনে এই প্রথম আর এই শেষ। আমি মঞ্চের সামনে, একজন প্রফেশনার ফটোগ্রাফার ছবি তুলছে, এমন সময় আমার চির চেনা চোখ গুলো আমার দিকে। স্বভাবতই আমার চোখগুলোও তার দিকে, ফটোগ্রাফার বার বার বলছে ম্যাডাম প্লিজ লেন্সের দিকে তাকান। সে যেন তাকিয়েও চোখ ফেরায় ২টা ছবি দুইবারেই মিস। ফটোগ্রাফার যেন বললো আচ্ছা ছেড়ে দেন। সবাই নেমে গেল মঞ্চ থেকে শুধু বসে রইল দুইজন। আমি আস্তে আস্তে এগুলাম মঞ্চের সিড়ির দিকে, কাঠের সিড়ি আমার বুট গুলো ঠক ঠক শব্দ করছে, যা ওর একদমেই পছন্দ না। ধুর এসব চিন্তা করে এখন আর কি হবে? চারটা সিড়ি উঠতে আমার যেন চার যুগ লেগে যাচ্ছে। কিন্তু নাহ সহসাই শেষ, গেলাম তাদের কাছে দুইজনেই উঠে দাড়াল। সালাম দিল ছেলেটা মুচকি হাসলো, আর সে কি করলো? লক্ষ করিনি ছেলেটার হাসির প্রতি উত্তরে আমি হেসেছিলাম কিনা মনে পড়ছে না।
ছেলের সাথে আমার হ্যান্ডশ্যাপ হল আর তারপর..............
আমি ঃ অভিনন্দন
ছেলে ঃ ধন্যবাদ
আমিঃ আপনি অনেক সৌভাগ্যবান এমন কেও জীবনে পেয়েছেন। তাকে কোন দিন কষ্ট দিবেন না। মেয়েটা কাদলে কেও বুঝে না, বা কাউকে বুঝতে দেয় না। আপনি তার কষ্টটা বুঝে চোখের পানি পড়ার আগেই তা মুছে দিবেন।
ছেলে ঃ একটু মুচকি হাসলো, আর তার দিকে তাকাল।
আমি ঃ তার দিকে তাকানোর সাহস হচ্ছে না। অনেক কষ্টে তাকালাম আর জিজ্ঞাস করলাম, “অন্ধকার কেমন আছো?” আমি যেন সেই ঝড়ের রাতের না বলা কথার মায়ায় দিয়ে, দুই দিন বা চার বছরের একটু একটু করে সাজানো একটা বক্তব্য বলে এক নির্মিষেই বলে ফেললাম।
মেয়েঃ “ভাল”। ২ মিনিট চুপ আবার “ভাল”।
আমি ঃ ছেলেকে বললাম, আপনি কি করেন?
ছেলে ঃ ব্যবসা করি। অনেক বড় ব্যবসা, বিশাল প্রোপার্টি। সব তারেই দেখাশোন করতে হয়।
আমি ঃ তেমন বড় কিছু না, কানাডায় থাকি আর সেখানেই একটা পেট্রোল পাম্পে আছি।
পকেট থেকে প্লাটিনাম এর রিং বক্সটা বের করে দিলাম। ভালবাসা আর আমার উপহারটা রাখবেন। মাথা নাড়িয়ে ছেলেটা সায় দিল।
আমি ঃ আচ্ছা তাহলে আমি আসি, ভাল থাকবেন। সারা জীবন যাতে ভাল আর ভালবাসায় কাটে।
মেয়ে ঃ অবশ্যই খেয়ে যাবা কিন্তু।
আমি ঃ রোজার মাসের একদিন রাতে আমি খাইনি আজো হয়তো তেমন। আর কিছু বলল না।
মঞ্চ থেকে নামলাম চলে যাবো এমন সময় মেয়ের কিছু বন্ধু আমাকে আগে চিনতো তারা খুব কথা, আর আড্ডা শুরু করলো। বিষয়টা যন্ত্রনা দায়ক হলেও ইচ্ছা করেই ১০ মিনিট হজমের পর, সবার অলক্ষেই বের হয়ে আসলাম আমার জীবিত কালের দোজখ থেকে। দেখলাম টেক্সিটা এখনো আছে? বাহ, বাংলাদেশে এখনো এমন লোক আছে? গেলাম বসলাম। ব্যাক মিরর এ ড্রাইভার আমায় দেখলো, বললো কারো বিয়ে ছিল? হুম, ভাই মন খারাপ করবেন না। জীবনটা আসলে এমনেই!!! যারে বেশি ভালবাসবেন সেই দেখবেন চলে যাইব। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ড্রাইভারের ব্যাক মিররের দিকে তার চোখ গুলোও আমার মতই ছলছল করছে। গাড়ি র্স্ট্যাট হল যাচ্ছে এয়ারর্পোট এর দিকে আর আমি ভাবছি, ড্রাইভার এতকিছু কিভাবে বুঝলো? lOG এর অংকের মতো সূত্র ধরে অংক শেষ করলাম, এই পৃথিবীতে আমিই একা না আরো অনেকেই আছে।