চার্লস বুকস্কি এক মাতাল মাদারচ, লুচ্চা জুয়াড়ি আর দিন শেষে এক ক্লান্ত কবি; যে কিনা একজন লেখক হইতে চাইত। কিন্তু তার লেখারে আ*দা তকমা দিয়া বিভিন্ন ম্যাগাজিন, পত্রিকা, জার্নাল বা প্রকাশনি রিজেক্ট কইরা দিত। রিজেকশনের ব্যর্থতায়, হতাশায় সে ক্রমেই মদে ডুবে ডবে জল খাইতে লাগল। বলতে গেলে বাকী জিন্দেগী সে এভাবেই কাটায়।
একটা পোস্ট অফিসে চিঠি বাছার কাজ করত সে আর মাস শেষে অল্প টাকা । কিন্ত এই টাকার বেশিরভাগই যেত মদের তলে আর যা বাঁচত তাও বাজিতে লাগাতো। রাতে কিছু একটা লেখত আর নেশার চোটে ফ্লোরেই ঘুমিয়ে পড়ত।
ত্রিশ বছর এভাবে মাতলামি, মাগিবাজি আর জুয়াড়ির মত কাটালো। অতঃপর এক জীন্দেগীর ব্যর্থতার পর সে যখন পঞ্চাশ বছরের বুড়ো তখন ছোট্ট একটা প্রকাশনির সম্পাদক তার প্রতি অদ্ভূত আগ্রহ দেখায়। সম্পাদক তাকে অনেক টাকার লোভ দেখায় নাই, বেস্ট সেলিঙের কথা দেয় নাই বরং সে এক মাতাল লুজারের প্রতি রহস্যময় আকর্ষণের লাইগা তার বই ছাপাইতে চায়।
ওইটা ছিল বুকস্কির লাইগা পয়লা অফার। জিনিশটা তারে ভাবালো। এবং সে বুঝলো তার কাছে দুইটা অপশন আছে। হয় ওই পোস্ট অফিসে বা* ফালানি নয় এর থেকে মুক্ত হইয়া লেখালেখি কইরা উপোস থাকা। কেননা সে জানত তার লেখায় ভাত জুটব না তবু সে উপোস থাকারই সিদ্ধান্ত নিলো।
এরপর সব ঠিকঠাক কইরা তিন হপ্তায় সে তার পয়লা উপন্যাস লেখলো। নাম দিলো "পোস্ট অফিস" । উৎসর্গ পত্রে লেখলো - Dedicated to nobody.
এভাবে করতে করতে করতে সে আরো ছয়টা উপন্যাস আর শ'খানেক কবিতা লেখে যা বিশ লাখেরও বেশি বিক্রি হয়। নিজের এই জনপ্রিয়তা অন্যান্যদেরও হার মানালো, সে তো নিজেই অবাক।
বুকস্কির এই গল্প বেঁচে মোটিভেশনাল স্পিকাররা ভাত খায়, আম্রিকার পাব্লিকদের স্বপ্নরে একীভূত করে: সে নিজের ইচ্ছার লাইগা লড়াই করছে, হাল ছাড়ে নাই।
আমরাই বলি, "দ্যাখো সে হার মানে নাই। চেষ্টা চালাই গেছে। নিজে যা চাইছ তাই হইছে। তার এই জেদ তারে সবার থেইকা আলাদা করছে!"
কিন্তু কোনো এক অদ্ভূত কারণে তার এপিটাফে লেখা, চেষ্টা করো না। Don't try.
কাহিনী হইল, এত বিখ্যাত হওয়ার পরেও সে একজন লুজার ছিলো। কিন্তু ক্যান? কারণ সে এটা জানত যে, সে লুজার।
তার এই সাফল্য লেখক হওয়ার ইচ্ছা থেকে আসে নাই। বরং সে জানতে সে একজন লুজার বৈ কিছুই না। আর এইটা মেনে নিয়েই সে লেখতে বসে। সে নিজে যেমন তাই হইতে চাইছিলো। নিজের বিভিন্ন মতবাদ প্রকাশ বা নিজেরে সাহিত্যের অনন্য আসনে বসানো তার প্রতিভা না। বরং জিনিশটা উল্টো । নিজেরে খুব সহজভাবে, সততার সাথে খোলাখুলিভাবে; বিশেষ কইরা নিজের সবচেয়ে খারাপ দিকটা কোনো প্রকার দ্বিধা-দন্দ্ব ছাড়াই প্রকাশ করাটা ছিলো তার প্রতিভা।
এটাই বুকস্কির আসল গল্প; নিজের ব্যর্থতারে নিজের সাথে মানিয়ে নেওয়া। বুকস্কি সাফল্যরে বেইল দেয় নাই। সাফল্যরে চু* নাই। এমনকি খ্যাতি লাভের পরেও পাব্লিকের কাছে নিজেরে যতটা পারছে তুলে ধরছে। আর পূর্বের মতই মাগিবাজি করে গেছে।
আত্ম-পরিবর্তন এবং সাফল্য প্রায়ই একি সাথে হয়। তার মানে এই না যে দুইটা জিনিশই এক।
আমাদের সমাজব্যবস্থাটা অবাস্তব ইতিবাচক প্রত্যাশার উপর কেন্দ্রীভূত হয়ে আছে। সুখী হও, সাস্থ্যবান হও, নিষ্ঠাবান হও, স্মার্ট হও, সুদর্শন হও, নিঁঁখুত হও।
দিনটা এমন হতে হবে যে সোনার চামচ মুখে দিয়ে শুরু আর তারপর বিবি-বাচ্চাদের বাই বলে নিজের কেনা গাড়ি চালিয়ে অফিসে যাও। যেখানে সারাদিন আপনারে বা* ছিঁড়তে ছিঁড়তে কাটিয়ে দিতে হয়।
কিন্তু একটু দম নিয়া চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন, এই প্রচলিত জীবনযাপন, এইসব ইতিবাচক চিন্তাধারা এবং গালভরা আত্ম-উন্নয়নমূলক গল্প আমরা হামেশাই শুনি; ওইটা আসল আপনার আসল চাহিদারে নষ্ট কইরা দিতাছে। ওইসব গল্প আপনার বিগত কালের ভুলত্রুটি, ব্যর্থতারে আপনার সামনে কেটে ফালিফালি করে তুলে ধরে। আপনিও লেগে পড়েন ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে টাকা কামাইতে কারণ আপনি ভুল করছেন তাই আপনি ফকিন্নি। ওইসব ভুলত্রুটি আপনেরে ফকিন্নি বানিয়ে ছাড়ে। যদিও এর আগে আপনি সুখী ছিলেন।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেরে সুন্দর বলতে থাকেন কেননা আপনি এইটা অনুভব করতেন যে আপনি পূর্বে সুন্দর ছিলেন না। অনলাইনে কিভবে মাইয়া পটাইত হয় আপনি ওইসব ফলো করতে থাকেন কেননা পর্বে আপনি অনূভব করতেন যে আপনি মাইয়া পটাইতে অক্ষম। আপনি একজন সফল ব্যাক্তি হবার বাদেও বোকা*দার মত কাজ করতে থাকেন এই ভেবে যে আপনি অসফল।
পরিহাসের বিষয় এই, যে, কে খারাপ কে ভাল কে তারচেয়েও ভাল এইসব কথাবার্তা আমাদের মনে করাইয়া দেয় আমাদের অভাববোধ, আমাদের ব্যর্থতা আর সবশেষে আমরা কী হইতে পারি নাই। হক কথা হইল প্রকৃত সুখী মানুষ কখনো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেরে বলে না যে সে সুখী।
একটা প্রবাদ আছে, "খালি কলসি বাজে বেশি।" কোন আত্মবিশ্বাসী লোকের প্রমাণের প্রয়োজন হয় না যে সে আত্মবিশ্বাসী । কোন ধনী লোকের প্রমাণ করা লাগে না যে সে ধনী। তেমনটা আপনারও প্রয়োজন নাই। যদি হয় আর এই জিনিশটার লাইগা দিনরাত স্বপ্ন দেখতে থাকেন, নিজেরে আরো বেশি সুখী প্রমাণের জন্য লেগে পড়েন তাইলে আপনি আসলেই একটা বোকা*দা।
মিডিয়া, বিজ্ঞাপন, মোটিভেশনাল স্পিকাররা একটা জিনিশই আপনারে গিলাতে চায়; ভাল জিন্দেগী মানে ভাল চাকরি বা দামী গাড়ি অথবা সুন্দরী গার্লফ্রেন্ড থাকা। পুরো দুনিয়া আপনার কানের কাছে গুজুর গুজুর কইরা সুখী জীন্দেগীর রাস্তা হিশাবে বলতে থাকব: বেশি বেশি, আরো বেশি, টাকা কামাও বেশি, ধন সম্পদ বানাও বেশি, চু* বেশি! আর আপনিও বেশি বেশি বলতে বলতে মারা খেতে থাকেন; বেশি কামাইতে, বেশি বানাইতে, বেশি চু*তে লেগে পড়েন।
ক্যান ভাই? যা বুঝতে পারছি, বেশি মানেই হইল সুন্দর গেবন। আপনার এই সুন্দর জীবনে কোন সমস্যা থাকতো না যদি না আপনি বেশি চু*তে চু*তে চু*না হইয়া যাইতেন। বেশি চাওয়া বেশি পাওয়ার লোভ আপনার নকল সুখের আশ্বাসে মরিচিকার পেছনে দৌড়ায়।
The Subtle Art of Not Giving a F*ck by Mark Manson অবলম্বনে ভাষান্তরীত।
চণ্ডাল ভাষার জন্য দঃখিত। বইটার মূল সুর এমনই।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫২