তিন পাপড়িযুক্ত বুনো হলদে ফুলের বাঙ্ময় হয়ে উঠা কোমলতাকে দেখি।
সে যেন তিন পয়গাম্বরের প্রতীক।
ঐ নিচে; গূঢ় স্তব্ধতার কায়া নিয়ে তিনি শুয়ে আছেন।
আমার প্রপিতামহ।
তার একখানা দুর্লভ ফটোগ্রাফও না থাকার যে নৈঃশব্দ্য'র ঝড়;
তার বয়ে যাওয়া বাতাস হীম করে তুলে হৃদয়।
প্যারালাল হয়ে বইতে থাকে, থামে না আর।
দগ্ধ মাটি ফুঁড়ে লতাগুল্মেরা বেড়ে উঠে এপিটাফ বেয়ে;
ধুলোমলিন, বিবর্ণ;
আলিঙ্গনাভিলাষী ইচ্ছা স্বাগত জানায়,
বুকে উন্মাদের মত ঘোড়া দৌড়েও সে ইশারা মধুসূদনের সনেট মনে হয়।
একটি লেজকাটা শেয়াল গোরস্থানে উঁকি দেয়,
সে কী প্রপিতামহকে পাহারা দেয়? না তো!
ওরা নাকি লাশ তুলে খায়!
অসীম উদাসীনতায় ভুগি।
প্রতি বৎসরে একবার প্রপিতামহের মাইয়্যেতের দিবস আমাকে পীড়া দেয় না,
ভেবে সুখি হই প্রিয় এই মানুষটার মাইয়্যেতের খবর আমাকে শুনতে হয়নি, খাটলি বয়ে কাফেলা দিয়ে হাটতে হয়নি।
হায় ঘাসেরা! কেউ কী প্রপিতামহের কবরে সরষে বীজ ছিটিয়ে দেয়নি?
ক্বিবলার দিকে তাকিয়ে প্রপিতামহের পোট্রেইট আঁকবার চেষ্টা করি। ব্যর্থতা শুধুই ব্যর্থতা।
ক্রোধের আর্তনাদ নক্ষত্রের মত খসে পড়ে,
হায়! কেউ তার একখানা ফটোগ্রাফ তুলে রাখেনি!
প্রপিতামহ অদেখা থাকার দরুন নীরব যে আর্তনাদ
প্রতি সেকেন্ডে লক্ষাধিকবার প্রতিধ্বনিত হয় আমার বুকে;
সে অনুভূতির তর্জমা করলে তোমরা শুধুই
সাদা পালক পড়ার দৃশ্য দেখবে। মনে বাজবে মাথুরার সুর।
অল্প বাতাসে হলদে ফুলের গাছ দুলে,
দৃষ্টির প্রাক্তন উজ্জ্বলতা কমলেও তিনি আমাকে দেখতে পাচ্ছেন।
তার কবরের নিকটেই দাঁড়িয়েছি।
পৃথিবীতে আজ বসন্ত।
পাখিরা চির মুখরিত।
বাগানের ফুলে ফুলে নবীন বাতাসের ঢেউ।
বাড়ি ফিরে আসি;
বিষণ্ণ তার দরজা
সিঁড়িতে আধার।
অনেকদিন চুনকাম না করা দেয়ালে বেরিয়ে আসছে স্মৃতিকাতরতা।
ঝুলে থাকা অসংখ্য পারিবারিক ফটোগ্রাফের মাঝে দুচোখ প্রপিতামহকে খুঁজে বেড়ায়।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৬