"চৈত মাসে হালার বাপের জন্মে এত মেঘ দ্যাখি নাই" পাশের এটিএম বুথের চৌকিদার বলে উঠে। শহর জুড়ে অন্ধকার। বিদ্যুৎ চমকে,সে আলোয় আমি তার বেঢপ ফুলে থাকা পেট দেখি। মনে মনে গালি দিচ্ছে। আমিও দিই। দুই ঘন্টা আছি দাঁড়িয়ে। একটা রিক্সা সিএনজিও নাই। চা খেতে পারলে মন্দ হত না কিন্তু দোকানপাট বন্ধ। আমার হাতে দামী কিছু আর্টপেপার ভিজে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কিন্তু তা আমার মাথা ঘামাচ্ছেনা। একটি সিএনজি থামতে দেখে দৌড়ে গেলাম। মধ্যখানেই ধপাস করে আছাড় খেয়ে পড়ে গেলাম। ছোটকাল থেকেই যেখানে সেখানে আছাড় খাওয়ার অভ্যাস। বিব্রতবোধ না করে কাঁদামাখা শরীর নিয়ে উঠে বসলাম সিএনজিতে।
সিএনজি চলছে। বাইরের বাতাসে আমার শরীর শুকাতে লাগল। আমি রাস্তার পাশে উঁচু উঁচু বিল্ডিং কততলা গুনতে থাকি। ছোটকালের স্বভাব। আব্বার সাথে শহরে আসলে উঁচু বিল্ডিং গুনতে গিয়ে মাথা উলটে কতবার যে পড়েছি আমি স্বরণ করতে থাকি।
স্মৃতি স্বরণ করতে গিয়ে গুনে যাওয়া বিল্ডিঙের সংখ্যা ভুলে যাই। আমি আবার নতুন করে গুনতে থাকি। পুরানা লয় আর যায় না। যার যে লয় বুড়া অইলে আরো অয়। আমারও হয়েছে।
ঠান্ডা হাওয়া লাগে। আমার লোম খাড়া হয়,হালকা আলোয় লোম গুনার চেষ্টা করি। পারিনা। চেয়ে থাকি।
খেয়াল করি আমার পাশে যুবতী মেয়ে বসা। আমি তার বয়েস আন্দাজ করি। কত হবে? চব্বিশ পঁচিশ? মিলাতে পারিনা। ভাবলাম জিগেস করব। কিন্তু মেয়েদের বয়েস জিগেস করা পাপ। আমার আর জিগেস করা হয় না। দমকা হাওয়ায় তার বুকের ওড়না সড়ে যায় সে ঠিক করে,আবার সড়ে যায় সে আবারো ঠিক করে। এভাবে চলতে থাকে। আমি তার কামিজের আড়ালে ভেসে থাকা সাদা ব্রা দেখতে পাই। মধ্যবিত্ত পরিবারের সাদা ব্রা। ছোটবেলা দেখতাম মা পরতেন। হকার্স মার্কেটের সস্তা ব্রা।
মেয়েটি ভিজে একাকার। ভয়ংকর অবস্থা; সে কাপছে। ঠান্ডা বাতাস এড়াতে আমার দিকে চেপে বসলে সমাজবিধিক লজ্জা পেয়ে বসে,আমি গলা খাঁকারি দিই। বুঝাই- হে রাতের ভ্রম,তোমার মুক্ত বিহঙ্গের ডানা ঝাপ্টানো আমার সীমান্তের কাঁটাতার উপড়ে ফেলছে। মেয়েটি সাবধান হয়ে সরে যায়।
আমার মধ্যে কবিবোধ কাজ করে। পথেঘাটে আমার কবিত্ব ফুটছে; নিমগ্ন অন্ধকার আর ছায়ার তলে। সম্রাট হুমায়ুনও হাতির পিঠে চড়তে চড়তে শের লিখতেন। আমার মনে পড়ে ছোটকালে কবি হবার বাসনা ছিল খুব। ছয় টাকা দিস্তার নিউজপ্রিন্ট কাগজের পাতার পর লাতা লিখতে লিখতে ভরিয়ে ফেলতাম। পত্রিকায় পাঠাতাম,বন্ধুদের পড়ে শুনাতাম; বিদ্রূপ করে আমাকে কবি বলত তারা। আমি বুঝতাম না সেসব। আমাকে কবি বলত,আমিও কবি। গর্বে বুকটা ফুলে উঠত। কৈশোরে স্কুলের বিষাদগ্রস্ত প্রেমিকারা স্বপ্নের একাংশ দখল করে থাকত। বয়ঃসন্ধিতে পরিবর্তন,ফুলে উঠা স্তনের দিকে তাকিয়ে কত কবিতা লিখেছি মনে পড়ে! কত কিছুইনা এখন মনে পড়ছে। আমি আর সেসব মনে করতে চাইনা। পাশের মেয়েটিকে নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করে।
আমার ঘুম পাচ্ছে। আমার চারপাশে মাদকতা সৃষ্টি হয়। হঠাৎ উৎকট গন্ধ নাকে লাগে। কেউ বায়ু নির্গত করেছে!
ড্রাইভার? গাড়ির আয়নায় আমি ড্রাইভারের মুখ দেখার চেষ্টা করি। যারা নিভৃতে বায়ু নির্গত করে তারা নাক কুচকে শুকে দেখে গন্ধটা কেমন। ড্রাইভার তাই করছে। আমি মেয়েটির দিকে তাকাই। সে বাইরে মুখ বের করে বিশুদ্ধ বাতাস গ্রহনের চেষ্টা করছে বিরক্তিকর ভাবে। দেখে আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। দূষিত বাতাসে আমার কোন পরিবর্তন হয়না। মেসের দশজনের এক টয়লেট যারা ব্যবহার করে তাদের কাছে এসব কিছুনা। তবু যখন খেয়াল হল মেয়েটি আমাকে লক্ষ্য করছে আমিও তারমত বিরক্তি নিয়ে মুখ বের করে বিশুদ্ধ বাতাস নিই (যদিও ততক্ষণে গন্ধ একদম চলে গেছে)। মেয়েটি আমার দিকে তাকি অদ্ভুত হাসি দেয়। রহস্যময় লাগে। আমার চারপাশে আবারো মাদকতা সৃষ্টি হয়। তন্দ্রা আসে। টলতে টলতে গাড়ি চলছে। আশ্চর্য তন্দ্রায় আমি মেয়েটিকে স্বপ্নে দেখি; সে আমার সাথে হকার্স মার্কেটে গিয়ে সস্তা ব্রা দরদাম করছে। তন্দ্রা কাটে ড্রাইভারের ডাকে।
পাশের মেয়েটিকে আর দেখতে পাইনা। ভাড়া দিয়ে আর্টপেপার হাতে নিয়ে চলে আসি।
পেছন থেকে শুনি,"শালা মাতাল মাদারচোত।"