আমার গল্প
❑
কোকিলের ডাক দিনেদিনে অসহ্যের কাছাকাছি চলে গিয়েছে;
রাতের গহীনে শ্রূতমধুর ডাক জন্ম দেয় হাহাকার এবং কিছুটা কৃপণতার,
বিলুপ্তিরর উৎসবে যে আত্মারা নেঁচে উঠেছিল
সেখাজে তাঁর (ঈশ্বরের) শেখানো বুলি এই মধ্যরাতে অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে তুলে;
আমি জানি,এ সবে শুরু,
ধীরে ধীরে তার রূপ বেরিয়ে আসবে,প্রসবের দিনে
যেভাবে নবজাতকটি হাত-পা ছুড়তে ছুড়তে পৃথিবীর আলো দ্যাখে
গোলাপের ভারে নুইয়ে পড়া গাছটি,
মগডালে শৈল্পিক বুননে তৈরি করা পাখির বাসা,
ব্যাকরণের মত ভয়ংকর জটিল দ্যাখাবে;
জানতে চাওয়া হবেনা উন্মুক্ত জলাচর
ডিঙ্গিয়ে নৌকার বৈঠা কেন আঘাত করেছিল (আমার হৃৎপিণ্ডে)?
নিস্তেজ ধর্মজ্ঞ মন নিয়ে ধাবিত হচ্ছি;
আলো হাতড়ে ফেরে অন্ধকারে...
প্রমাণিত হয়নি মরুভূমিতে পড়ে থাকা পাখির পালকের অস্তিত্ব।
কিন্তু এখন আমি পান করেছি রঙ-
প্রুফ রিডিঙের সময় হয়ত ধরা পড়ে যাবে মৃত্যু;
ছাপাখানার ভূতের তখন কল্পনাকে নিয়ে পালিয়ে বেড়াবে
কোন এক আধকানা পন্ডিতের কাছে ধরা পড়বে তারা
তখন আমার উল্লাস কেউ শুনতে পারবে না।
কেউ না!
কোকিল আবার ডেকে উঠবে তখন ভয়ংকর সুরে...
.
প্রশ্নপর্ব
❑
আমি মরে গেলে আমার লাশবাহকেরা
কি ক্লান্ত হয়ে পড়বে স্বল্পতেই?
প্রশ্নটি আপেক্ষিক -- জানি; তবু
মধ্যাহ্নের গুল্মীলতার মত বেড়ে উঠে জিজ্ঞাসু
কখনো ব্যকরণিক নিয়মে;
জীবনে দীর্ঘ পথে কোথাও মক্কার কোকিল দ্যাখিনি
কথায় শুনেছি-- তার ডাক নাকি হয় মধুর!
অথচ অবলীলায় আমার প্রতিটি কবিতায়
অযৌক্তিকভাবে কোকিল বিলাস স্বার্থক;
মিথ্যাচারেও ভালোবাসার কল্পনা লেগে আছে।
অনৈতিকতার সংজ্ঞা কি এভাবে দেয়া যায়?
নিস্তারিণীর মত (সুসময়ে) তোমাকে দ্যাখলে
নৃশংস প্রশ্ন চিহ্নের মত লাগে;
ধূলোমাখা মলাটের বই বুকে চেপে রইব--
উত্তরের আশায় মেলে ধরব না...
কখনোই না...
সবকিছুইই সাংবিধানিকভাবে করতে হয়?
শুকোনো পাউরুটি, জ্যাম-জেলি,বাটার,
ব্রেকফাস্টের রসায়ন,শব্দকোষের সংস্কৃতি,
অসম্ভব কিছু হাঁচি--
দুর্মূল্যের বাজারে সবকিছু পরিবর্তনীয় নয়:
কাব্য চর্চা একটি নিষিদ্ধ কর্ম
সেখানে ক্রোধ নেই, ভালোবাসা নেই নেই কোন সীমান্তের কাঁটাতার।
শৈল্পিক পদাবলি অবচেতন মনের সৃষ্টি।
অসম ঢালের মতই মসৃণ।
.
তুলে নেব অঞ্জলিতে
❑
আমি সূর্যের খুব কাছে চলে এসেছি--
মক্ত কারাগার থেকে,
কিছু তত্ত্বজ্ঞান সাথে করে নিয়ে এসেছি
আর্য-অনার্য সকলের জন্য; একই চক্রবাকে।
আমি সূর্যের খুব কাছে চলে এসেছি--
শুনতে পাওনি গিরিপথের দুর্গম স্লোগান?
খুব সহজে যার গা ঘেষে
প্রতিধ্বনিত হয় মেষবালকের বংশীধ্বনি!
আমি সূর্যের খুব কাছে চলে এসেছি,
খুব কাছে--
যতটুকু কাছে এলে তোমার দুঃখগুলোকে
দু'হাত ভরে তুলে নেয়া যায় অঞ্জলিতে
অথবা
মেঘেদের সাথে ভাসিয়ে দেয়া যাবে নিয়ম করে।
.
অভিলাষী বাণ
❑
দানশীল হতে পারিনি বলে ঘাসের বুকে শুয়ে আছি;
জীবনানন্দের ঘাস!
শুদ্ধচারী গাছের পাতা ঝরে পড়ছে
সদ্য সমাপ্ত শীতের ঝরা পাতা
প্রাণহীন, রঙহীন, খটখটে।
পরের জন্মে গাছের পাতা কি হবে?
নাহ্, থাক সে দর্শন।
আমি এখনো তোমার চন্দ্রলোকের অপেক্ষায়
আজকের মহারাত্রিতে স্মৃতির অলংকার পরে
হাটতে থাকব তোমার শহরে;
ঘাসের গন্ধে পাতার রঙে সাজব আমি।
আমার এই অভিলাষী বাণ তোমার জন্যে
নিয়ন বাতির রাস্তায় ঝড়ো হাওয়ায়
খোলা চুলে যদি পাই তোমারে আবার
.
সেই গ্রীষ্মে
❑
সেই গ্রীষ্মে নক্ষত্রের রাতে আমার ভুল ছিল কতই না দুষ্টুমিতে ভরপুর
প্লাবনের ডুমুরফুলে গান গাওয়া বাউল
আর মাথাচাড়া দেওয়া ধরাতল ছিল সাক্ষী।
আলস্যের কাঠগড়ায় দাড় করালে দোষী হতে পারি
কিন্তু বেলি ফুলের সঞ্জয়িতা থেকে যে প্রেরণা
জুগিয়েছিলে তা কেউ ভেবেও দ্যাখবে না!
প্রকৌশলী মনে ধরা গান গাওয়া থেকে সেদিন বাধা দেওনি
নক্ষত্রের গতিহীন যাত্রা হল উন্মীলিত উচ্ছ্বাস
তোমার মাথা যা বিষধর গোঁবরে পোকার মত যত্ন করে খায়!
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:১৭