সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে এমপি সাবকে ফুলের মালা দেওনের জন্য তিনটা স্কুল বন্ধ করে দিয়ে ছাত্রদের জড়ো করা হয়েছে। সরকারী আদেশ অবজ্ঞা করে বাচ্চা ছেলেমেয়েদের রাস্তার দুইপাশে দাঁড় করায় রেখে এই আয়োজন। চাটুকার আয়োজকরা আশায় আছে তবুও যদি এমপি'র ভাগ বাটোয়ারার তালিকায় নিজেদের নামটা উঠানো যায়।
আইন ভঙ্গ করা হইছে - তাতে কি এমপি'র ভয় পাওন উচিত ?
পাগল নাকি ! কিসের আইন ? এমপিই তো আইনের মা বাপ।
আবার শুনলাম ঢাকায় কোন মেয়র সাব পরিষ্কার রাস্তায় ময়লা ছিটাইয়া তারপর ময়লা পরিষ্কার সপ্তাহ উদযাপন করা শুরু করছে।
এইটা শুইনা একজন মন্তব্য করছে - ভাগ্যিস ওনারে বলা হয় নাই " অগ্নি নির্বাপক সপ্তাহ " উদযাপন করতে। তাইলে দেখা যাইতো তিনি ঢাকা শহরে আগে আগুন লাগায়া দিতো পেট্রল ঢাইলা - তারপর ফিতা কাইটা ওনার অনুভূতির কথা প্রকাশ করতে গিয়া ঘন্টা খানেক বকতিতা দিতে গিয়া পুরা ঢাকা শহর আগুনে পুইড়া ছাই কইরা দিতো।
আজকাল গর্দভদের আচরণ দেখে মনে হয়, সত্যি সত্যি কিন্তু এমনই কান্ড ঘটাইতো।
ভাল তো ভাল না !
মানুষ যখন ভোট ছাড়া মুফতে চেয়ার পায় আর তারপর আনটাচেবল হয়ে যায় তখন এমন আচরণ করা শুরু করবে, এটা স্বাভাবিক।
এবার চলেন দেখি, ডিমওয়ালার কি খবর সেইটা একটু জানি।
ওই যে ফাউল কথা কইছে শুইনা একটা পিচ্চি পোলা অস্ট্রেলিয়ার সিনেটরের মাথায় ডিম ভাইঙ্গা দিছিলো, তার কথা কই।
নিউজিল্যান্ডের মসজিদে শেতাঙ্গ সন্ত্রাসী হামলা করে পঞ্চাশজন নিরীহ নিরস্ত্র মুসুল্লীকে খুন করলো। আহত হল আরো শতাধিক মানুষ। খবরটা জেনে ঐ সিনেটর 'শামীম ওসমান' টাইপ মন্তব্য করে বসল। ঐযে শামীম ওসমান বলছিল - খেলা হবে।
সিনেটর সান্তনা বাক্য না বলে উল্টা বাঁকা কথা বলছিল - মুসলমানরা সন্ত্রাসী। তাদেরকে নিউজিল্যান্ড জায়গা দিয়ে ভুল করছে। তাই এমন কান্ড ঘটলো।
কিসের ভিত্রে কি, পান্তাভাতে ঘি !
বেকুব পাগলটায় কইলো কি ! সেও কি সাম হাও বিনা ভোটে জেতা এমপি নাকি আল্লাহ মালুম।
তার এমন ফাউল কথা শুনে একটা সতের বছরের বাচ্চা ছেলে পর্যন্ত সহ্য করতে পারে নাই। ক্ষেপে গিয়ে সিনেটরের মাথায় ডিম ভেঙ্গে দিল সবার সামনে।
যে যার দেশে আমরা মানে আমাদের বয়সীরা কম বেশী সবাই নষ্ট ভ্রষ্ট মারাত্বক রেসিস্ট জেনারেশন। শুধু নিজেরটা ছাড়া আর কারো কথা ভাবি না।
কিন্তু দেখেন এইতো গত বছর দেশে তাদের সহপাঠীর গাড়িচাপা পড়ে খুন হওয়ার কারনে স্কুলের বাচ্চারা রাস্তায় নেমে গিয়েছিল ড্রাউভারদেরকে ট্রাফিক আইন মেনে চলা শেখাতে। ওদের মনে কোন দুরভিসন্ধি ছিল না। ওরা সরল মনে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নেমেছিল নির্ভিকভাবে - যা আমার আপনার মত ভীতু লোভী এবং পাপী মানুষেরা করতে পারবো না।
দুনিয়ার সব দেশে সব বাচ্চারা এমন পবিত্র। ওদের মনে কোন পাপ নাই। বৈষম্য নাই। ওরা সব কিছু সরলরেখায় দেখে। নিজে শ্বেতাঙ্গ ক্যাথলিক বলে বাদামী চামড়ার মূললমানদের সন্ত্রাসী হিসাবের ভাবে না তারা। তাই অস্ট্রেলিয়ার সিনেটরের বাঁকা কথা সে সহ্য করতে পারে নাই। ডিম ফাটিয়ে দিয়েছে।
ভাগ্যিস ছেলেটা আমাদের দেশে এই কান্ড করে নাই কোন এমপি'র উপর। নইলে এমপি নিজেই হয়ত তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলত আর নাহয় ক্রসফায়ারে পাঠানোর ব্যবস্থা করতো।
অস্ট্রেলিয়ার সতেরো বছর বয়সের ছেলেটা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে ন্যাশনাল, উঁহু ইন্টারন্যাশনাল হিরো হয়ে গেছে। তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বটে। কিন্তু সাধারণ মানুষ তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
তার নাম হয়ে গেছে "এগবয়।”
তার পক্ষে আইনী লড়াই লড়ার জন্য সেই দেশের সবচেয়ে নামী দামী ডিফেন্স লইয়ার ঘোষণা দিয়েছে, বিনে মজুরিতে সে এগবয়ের পক্ষে লড়বে।
লইয়ার জানিয়েছে - দোষ ছেলেটার না, বরং সিনেটরের - যিনি একটা কম্যুনিটির এমন শোকের সময়ে সান্তনা না দিয়ে কুরুচিপূর্ন মন্তব্য করেছে। ছেলেটা যা করেছে এটা তার স্বাভাবিক রিফ্লেক্স। এজন্য তার শাস্তি না হয়ে সিনেটরের হওয়া উচিত। পুলিশ তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করা উচিৎ। নইলে সে পাল্টা মামলা করবে।
রাষ্ট্র পক্ষ এবার বিপদে পড়ে সিনেটরের আচরণ বিধি লংঘনের ব্যাপার খতিয়ে দেখছে।
এগবয় এখন আন্তর্জাতিক হিরো। সবাই তার ফান্ডে পয়সা ঢালছে সারা দুনিয়া থেকে। সে ঘোষণা দিয়েছে এই ফান্ড সে মসজিদ হামলায় প্রাণ হারানো মানুষদের পরিবারের জন্য দান করবে।
পৃথিবীটা আসলে অনেক সুন্দর। সেখানে আছে অল্প কিছু শক্তিশালী বিষাক্ত কীট। আর বেশীর ভাগই ভাল মানুষ। তাই সবাই এখনো সহাবস্থান করতে পারে তাদের মতভেদ থাকা সত্ত্বেও। যদি সংখ্যাটা উল্টা হত, তাইলে এতদিনে মানুষ মানুষকে কামড়ে খাওয়া শুরু করে দিত।
গড ব্লেস ইউ, এগবয় ! কামনা করি সবার ঘরের সন্তানেরা তোমার মত এমন প্রতিবাদী হোক।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:২১