আজ থেকে দুই বৎসর আগের ঘটনা । আমি তখন চাকুরীর সুবাদে টাঙ্গাইলে । ভাবলাম টাঙ্গাইলে যেহেতু আছি তখন দশ টাকার নোটে ছাপা আতিয়া জামে মসজিদ না দেখলে কেমন হয় ?
তারপর এক বিকেলে আমি আমার দুই কলিগ দুইটা মোটরসাইকেল নিয়ে আতিয়া জামে মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হলাম । টাঙ্গাইল থেকে পাথরাইল হয়ে গন্তব্যে পৌছলাম তখন বিকেল ৪টা । পুরো মসজিদ ঘুরে দেখলাম । দেখলাম ঐতিহাসিক কারুকার্য । মসজিদ দেখা শেষ করে ভালমতো শেষ করে আমরা আবার টাঙ্গাইলের পথে চললাম । তবে এবার যে পথে গিয়েছি সে পথে নয় । এবার আমরা আসছিলাম টাঙ্গাইল এলাসিন রাস্তায় । তখন সাড়ে ৫ টা কি ৬ টা বাজে । বেশ খানিকটা পথ আসার পর ভুরভুরিয়া নামক এক বাজারের কাছে আসার পর ঝড় শুরু হলো । আমরা মোটরসাইকেল বাজারে একটা দোকানের সামনে রেখে আমরা দোকানের ভিতর আশ্রয় নিলাম । প্রচন্ড ঝড়ে বেশ কয়েকটা দোকান ঘর উড়িয়ে নিয়ে গেল । এই ঝড়ের মধ্যে সেখানে একটি বেবী টেক্সী এস থামল । ঐ বেবী টেক্সীর ভিতরে ছিল প্রসবযন্ত্রনায় কাতর এক সন্তান সম্ভবা মা । কোনমতেই সম্ভব ছিল না এই ঝড়ের মধ্যে সামনে যাওয়া । গাড়ীটাও বাজারের কাছে দাড়িয়ে থাকল । সন্তান সম্ভবা ঐ মায়ের আর্তচিৎকারে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠছিল । ঝড়ের তীব্রতায় গাছপালা ভেঙ্গে পড়ছিল রাস্তার উপড়ে এবং রাস্তার পাশে । ঐ গাড়ীর সামনে এবং পেছনে অর্থাৎ বাজারের দুইপাশে বড় বড় গাছ ভেঙ্গে পড়াতে ঝড় থামলেও গাছ সরানো না পর্যন্ত যান চলাচল করা সম্ভব হচ্ছিল না । ততক্ষণে সেই প্রসূতি মা মৃত্যুর সাথে সাথে পান্জা লড়তে লড়তে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে । রাস্তা আরও কিছুটা সময় লাগল । তারপর তারা আবার গাড়ী ঘুরিয়ে সেই মায়ের লাশ নিয়ে বাড়ীর পথে রওনা হলো । প্রকৃতির কাছে আমরা কত অসহায় সেটা সেই দিনই প্রথম দেখলাম ।