somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মা কে নিয়ে গল্প

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুই পর্বের প্রথম পর্ব এখানে-
Click This Link

আজ শেষ পর্ব:
০৪
এখন যা করতে হবে তা হল দুটি মোবাইল কেনা। প্রায় সাত মাস হয়ে গেল সে মাকে দেখেনা। মা গত চিঠিতে লিখেছেন 'তার নাকি শরীরটা ভাল না। রাতে ঘুমুতে গেলে দু:স্বপ্ন দেখে জেগে ওঠেন। তারপর গায়ে জ্বর আসে। প্রচন্ড জ্বর। ফজরের আযান দেয়ার সাথে সাথে জ্বর সেরে যায়। রেহানের খুব টেনশন হয়। এবার বাড়িতে গেলে মাকে ভাল ডাক্তার দেখাতে হবে। তাদের গ্রামের আশেপাশে তেমন ভাল ডাক্তার নেই। গ্রাম থেকে প্রায় ন'মাইল দূরে মিজু হাটে এম.বি.বি.এস ডাক্তার বসেন। আগামী মাসের ০৩ তারিখ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৃত্তির টাকা পাবে সে। টিউশনি থেকে পাওয়া কিছু টাকা জমানো আছে। এসব দিয়ে মার জন্য মোবাইল আর ডাক্তার দেখানোর খরচটা হয়ে যাবে। মা চিঠিতে লিখেছে 'তার নাকি শরীরটা আরো খারাপ করেছে। আগে শুধু রাতের বেলায় জ্বর আসত, এখন দিনের বেলাতেও আসে'। রেহানের আর দেড়ি সয়না। কখন সে তার মায়ের প্রিয়মুখ টি দেখতে পাবে?


০৫
আজ পাঁচ তারিখ। রেহান রাতের ট্রেনে বাড়ি যাচ্ছে। এখন শীত বেশি পড়েছে। মার জন্য একটা চাদর কিনেছে সে। কেনার সময় দোকানি বলল- 'ভাই ভেড়ার পশম দিয়ে তৈরী। তাই দামটা একটু বেশি'। ভেড়ার পশম দিয়ে তৈরী না হলেও চাদরটা যে অনেক ভাল, তা গায়ে দিয়েই বোঝা যায়। চাদরটা গায়ে জড়ানোর সাথে সাথে এক ধরনের উষ্ঞতা তৈরী হয়। মা এটা পেলে খুবই খুশী হবে। আর মাকে কালই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। তার শরীর দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। চিঠিতে লিখেছেন 'তিনি নাকি শুনতে পান বাবা তাকে ডাকছে। কবরে একা থাকতে তার ভাল লাগেনা'। এসব কথা যে মা কেন লেখে! রেহানের বুক ফেঁটে কান্না আসে। এত সহজেই সে মাকে মরতে দেবে? আরো অনেকদিন মা বেঁচে থাকবেন। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে সে মায়ের মুখে কখনো হাসি দেখেনি। কি পরিমান কষ্ট আর সংগ্রাম করে সংসার চালাচ্ছেন তা মনে হলে রেহান ফুঁপে ফুঁপে কাঁদে। যিনি এত কষ্ট করলেন তার মুখে হাসি না ফুটিয়ে মরতে দেবে সে? কখনোই না। মা চায় রেহান নামাজ পড়ুক, আল্লাহর ইবাদাত ঠিকমত করুক। রেহানও ঠিক করে বাড়িতে গিয়ে নামাজ শুরু করে দেবে। মুনাজাতে সে আল্লাহর কাছে চাইবে- 'হে আল্লাহ, মাকে তুমি আরো অনেকদিন বাঁচিয়ে রাখো'।
ষ্টশন থেকে গ্রামে আসতে সকাল নয়টা বেজে গেল। মনটা খুব অস্থির হয়ে আছে। কতদিন মাকে দেখিনা। মায়ের মুখে 'বাবা' ডাক শুনিনা। 'আজ পথ শেষ হতে এত সময় লাগছে কেন? উফ, আর যে ধৈর্য্য বাঁধ মানছে না। কখন বাড়িতে যাব? কখন মায়ের মুখটি দেখতে পাবো? এসব ভাবতে ভাবতে বাড়ির উঠোনে চলে আসে রেহান।

আজ বাড়িতে এত মানুষ দেখা যাচ্ছে কেন? আর ঘরের ভিতর থেকেই বা মহিলাদের কান্নার শব্দ আসছে কেন? কি হয়েছে আমার মায়ের? আস্তে আস্তে ঘরের ভিতর যায় সে। দেখে পর্দার আড়ালে কাকে যেন খালি চকিতে পা থেকে মাথা পর্যন্ত সাদা কাপর দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। রেহান ডেকে ওঠে- 'মা, মাগো'। কে যেন পিছন থেকে এসে রেহানকে জাপটে ধরে। তোর মা আর নাইরে...... ।


০৬
এশার আযান দিয়েছে। রেহান পুকুর পাড়ে বসে আছে। বাদ জোহর মায়ের মাটি হয়েছে। তখন থেকেই এখানে বসে আছে সে। সন্ধ্যার দিকে আতিক ভাই এসে বাড়ির ভিতর নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। রেহান যায়নি। সে আকাশে তারা ওঠার অপেক্ষায় আছে। সে শুনেছে 'মানুষ মরে গেলে নাকি আকাশের তারা হয়ে যায়'। রেহান বসে আছে 'মা-তারা' দেখার জন্য। আকাশে অনেক তারা উঠেছে। এগুলোর মধ্যে নিশ্চই তার মা আছে। আতিক ভাই বলেছে- 'যে চলে যায়, সে আর ফিরে আসেনা'। রেহানের বিশ্বাস হয়না কথাটি। মা কোথায় যাবে তাকে ছেড়ে? কাল রাতেও তো ভাল ছিলেন। নিজে রান্না করেছেন, খেয়েছেন, নামাজ পড়েছেন। ঘুমুতে গিয়ে আর উঠবেন না, এ হতে পারেনা। মার জন্য নিয়ে আসা মোবাইল আর চাদর যে এখনো দেয়া হয়নি। আকাশের দিকে তাকিয়ে নক্ষত্র ও হাজারো তারার মাঝে সে তার মাকে খোঁজে। মনে মনে বলে- 'মা, তোমার মোবাইল আর চাদর নিয়ে যাও.......'।।
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×