মা,
তোমার ছেলে আজ তোমার জন্য কিছু লিখতে বসেছে। এর আগে তোমায় নিয়ে একটি কবিতা লিখেছিল। সেটি শোনার পর অনেক্ষণ তুমি কথা বলতে পারনি। দূরে থেকেও সে তোমার চোখে পানি দেখেছিল। বলতো মা
তোমার ছেলেটি এখন কেমন হয়েছে? অনেকগুলো বসন্ত পেরিয়ে এসে তোমার পাগল ছেলেটি আজ অনেক কিছু ভাবতে শিখেছে। আনন্দে হাসতে শিখেছে, ব্যাথায় শিখেছে কাঁদতে ।
দেখনা কিছুদিন আগে সে স্কুল পাশ করে কলেজে ভর্তি হয়ে মেসে উঠল, তার মাত্র এক সপ্তাহ পরেই বাড়ি এসে তোমার আঁচল গেড়ে বসে রইল। জান দেবে তবু তোমায় ছেড়ে শহরে গিয়ে থাকতে পারবেনা। বাবার শত চোখ রাঙানী উপেক্ষা করে নিজের সিদ্ধান্তে স্থির রইল। যেতে বাধ্য হল যখন মাথায় আদরের পরশ বুলিয়ে বললে- "আমার দোয়া সব সময় তোমার পাশে আছে"। সেদিন কি যে কষ্ট হয়েছিল মা; চেনা পরিবেশ আর মাটির গন্ধের মায়া ছেড়ে অচেনা গন্তব্যে পাড়ি জমাতে!!
অথচ দেখো আজ প্রায ছ'মাস ধরে সে ঢাকায় পড়ে আছে। সে যে এখন বড় হয়েছে। বুঝতে শিখেছে- চাইলেই সে তোমার কোলে মাথা রাখতে পারবেনা, পারবেনা তোমার হাতে ভাত খেতে, কিংবা পকেট খরচের টাকাটা নিতে।
তোমার কষ্টটাও সে একটুখানি বোঝে মা। ঘুমের মাঝে ছেলের জন্য তোমার ক্রন্দন চোখ সে দেখতে পায়। তার আশায় পথ চেয়ে থাকা অনুভব করে।
সবকিছু ছাপিয়ে মা-ছেলের এই মৌনতা পূর্ণতা পায়না সম্ভবত যশ খ্যাতি অর্জন আর সমাজের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য।
তাইনা মা?
তুমি স্বপ্ন দেখতে তোমার সন্তান মানুষের মত মানুষ হবে। এ কারনে একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি তাকে কুরআন শিক্ষা দিয়েছ, নামাজ পড়া শিখিয়েছ, চেষ্টা করেছ ধর্মীয় মানসিকতায় গড়ে তোলার।
তোমার সন্তান এ চাওয়া থেকে তোমায় বঞ্চিত করবেনা মা। সে চেষ্টা করছে ইসলামের সকল শাখায় বিচরন করতে, কুরআনের তাফসির পড়তে, মহান আল্লাহ তায়ালা নির্দেশিত ও রাসূল (সা এর দেখানো পথ অনুসরন করতে। আর এভাবেই সে জেনেছে প্রিয়নবী (সা এর সেই বানী-
"মহিলাদের উপর সবচেয়ে বড় হক তার স্বামীর আর পুরুষদের উপর সবচেয়ে বড় হক তার মায়ের"।
"মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত"।
রাস্তার দুরত্ব মনের বন্ধনে কখনো প্রভাব ফেলতে পারেনা। এ কারনে তার মনের সম্পূর্ণ দেয়াল জুড়ে ছড়িয়ে আছো তুমি। সমস্ত সত্তায় মিশে আছে শুধু তোমার জন্য ভালবাসা। হয়ত মুখ ফুটে সে বলতে পারবেনা কোনদিন, কিন্তু ঠিকই বুঝতে পারবে একদিন। শুধু তোমার পায়ের নিচে তোমার পাগল ছেলেটির জন্য একটু জায়গা রেখো......।।