কিছুদিন আগে অনুপ দা একদিন আমাকে বলল, “সময় করে একদিন নীলক্ষেত যেতে পারবি?” আমি বললাম, পারব। অনুপ দা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছে। তার গবেষনার কাজে আরও কিছু বই দরকার। মূল্যবোধ বিষয়ক বই। কিন্তু নিজের ব্যস্ততার কারনে নীলক্ষেত যাবার সময় পাচ্ছি না। নিলক্ষেতে গেলে মূল্যবোধ বিষয়ক হাজারো বই মিলবে। কিন্তু আজ আমাদের মূল্যবোধ শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। সাধারনভাবে যদি বলি, মূল্যবোধ হল যে বোধ দিয়ে আমরা অন্য যে কোন জিনিস মূল্যায়ন করি সেটাই মূল্যবোধ। মুল্যবোধ একটি মানবিক গুণ। মানুষের বড় সম্পদ হলো মূল্যবোধ। সেই মূল্যবোধের শিক্ষা শুরু হয় পরিবার থেকে। আমাদের চারপাশের মানুষ গুলোকে হেয় করে আমরা বিনোদন পাই। খোচা দিয়ে কথা বলাটা যেন ইদানিং আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে। আগে আমরা রোজ সন্ধ্যায় আড্ডা দিতাম। আমাদের আড্ডায় রোজ আসত সিফাত। মোটা ফ্রেমের চশমা পরত। আমরা সমানে তাকে কানা বলে ক্ষেপাতাম। সে ভেতরে ভেতরে কষ্ট পেত কিন্তু সেটা আমরা বুঝতে পারতাম না। পরে একটা সময় সে আড্ডাতে আসা কমিয়ে দিল। রাস্তায় দেখা হলেও খুব তাড়া দেখায়। বেচারা বছর দুয়েক আগে স্কলারশিপ নিয়ে দেশের বাইরে চলে গেছে। যাবার সময় আমাদের কাউকে বলেনি। এটা আমরা জেনেছি অনেক পরে ওর বড় বোনের কাছ থেকে। সেদিনই জানতে পারলাম কেন সে আমাদের আড্ডাতে আসত না, কেন এড়িয়ে চলত আমাদের। আমরা সরি বলার সাহস টুকু হারিয়ে ফেলেছি। ওর বড় বোনের সাথে দেখা হয়ে গেলে আমারা বন্ধুরা লজ্জায় কাচুমাচু করি। বিবেক আমাদের তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। সিফাত খুব ভাল ভাবেই নিজেকে আমাদের থেকে আড়াল করে নিয়েছে। আমরা মানুষকে মূল্যায়ন করতে পারিনা বলেই আমাদের সমাজে ঐশীদের জন্ম হয়, তনুরা হারিয়ে যায়, রাজনরা নিভে যায়, পাঁচ বছরের শিশুর যৌনাঙ্গ কেটে বড় করে তাকে ধর্ষণ করা হয়, এভাবেই প্রতিদিন অনেক প্রান নিভে যায়। আমি বলছি না যে, আপনার চারপাশ বদলান। শুধু নিজেকে বদলান দেখবেন চারপাশ অটোমেটিক্যালি বদলে গেছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:০৬