বাবা আজ আমি তোমার আগেই বাসায় ফিরেছি। বাসায় ফিরেই বুঝতে পেরেছি তুমি এখনও ফেরোনি। মার পায়ের ব্যাথাটা মনে হয় কমেনি। কারন বাসায় ঢোকার সময় আজ মাকে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখিনি। সোজা মার রুমে গেলাম। আমাকে দেখা মাত্র মা বলল, আজ পায়ের ব্যাথাটা একটু কম। এটা আমাকে বুঝতে না দেবার একটা বাহানা। না বোঝার ভান করে আমার রুমে ফিরে এলাম। খানিক পরেই মা শরবতের মগ নিয়ে আমার পিছে ঘুর ঘুর শুরু করে দিবে। তাই মগটা হাতে নিয়েই ঢক ঢক করে গিলে ফেললাম। পিসি বাবুকে অন করলাম। মনিটর বাবাজী নষ্ট হয়ে এতোদিন হাসপাতালে ছিল। আজই সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরল। আহারে!! কতদিন পর আজ মোলাকাত হবে!!! এতোক্ষনে বাবা বাসায় ফিরেছে। বাসায় ফিরেই বাবা আমার রুমে এসে দেখে আমি মনিটরের মেনু বাটন গুতাগুতি করি। মনিটরের কোমরটা বাকা হয়ে গেছে। বাবা আমার পিছনে এসে বলল, কিরে মনিটর ঠিক হয়ে গেছে ??
-হুম।
মনিটরটা নষ্ট হওয়াতে বাবা বেশ খুশি হয়েছিল। কারন ওই কয়েকটা দিন আমি খুব তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়তাম। বাবা আর কথা না বাড়িয়ে মাকে বলল বেশি করে পেয়াজ মরিচ দিয়ে ডিম ভাজতে। আজব একটা লোক। মা দেখি রান্না ঘরের দিকে গেল। খানিক পরেই ডিম ভাজার ঘ্রানে নাক খুশ খুশ করতে লাগল আমার।
বাবা আমরা দুই ভাই শুধু তোমার চেহারাটা পেয়েছি। তোমার মত ধৈর্য, মনবল, সাহস এসব কিছু পাইনি। এমনকি রক্তের গ্রপটাও পাইনি। বাবা তুমি আমাকে খুব তাড়াতাড়ি বুঝতে পার। মাস শেষে আমার পকেট শুন্য হলে তুমি সবার আগে টের পাও। গোপনে আমার পকেটে চকচকে এক হাজার টাকার নোট রেখে দাও। সেদিন রাতে আমি যখন পুরান নষ্ট টেবিল ফ্যানটা চালানোর চেষ্টা করছিলাম সেটা তুমি কখন খেয়াল করেছিলে জানিনা। পরদিন অফিস থেকে ফিরে দেখি আমার রুমে কার্টুনে মোড়ানো সিলিং ফ্যান। আমার পিছন পিছন তুমি রুমে ঢুকে বললে, ফ্যানটা লাগিয়ে নিস। কয়েক মাস আগে একবার তোমার বুকে ব্যাথা হয়েছিল। এত করে বলেও তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিতে পারিনি। জানিনা বাবা পরে আর কখনো ওরকম ব্যাথা হয়েছে কিনা। সিগারেটটা ছেড়ে দিতে বলেছি তোমাকে। তুমি যে আজকাল ব্যলকনিতে দাঁড়িয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে সিগারেট খাও সেটা আমি বুঝতে পারি। ছোট বেলায় দেখতাম শীত শুরু হলেই তুমি ব্যাডমিন্টন খেলতে। আর এখন শীতকালে তুমি কম্বলের ভিতরেই থাক। তোমার ব্যাডমিন্টনটা আমি রেখে দিয়েছি। ছোট বেলায় আমি ভাবতাম আমিও বড় হয়ে তোমার মত ব্যাডমিন্টন খেলব। ছোট বেলায় মাঝে মাঝেই তোমার শার্ট প্যান্ট পরে থাকতাম। যেটা দাদী দেখলে খুব বিরক্ত হত। তোমার হাত ধরেই আমার প্রথম স্কুলে যাওয়া, তোমার হাত ধরেই আমার সাইকেল চালান শেখা, তোমার হাত ধরেই আমার প্রথম পাহাড়ে ওঠা, তোমার হাত ধরেই আমার সাতার শেখা। এখন পর্যন্ত ছায়া হয়ে আছো।
বছর চারেক আগে আমার একবার জন্ডিস হয়েছিল। তখন তুমি টানা পনের দিন অফিস যাওনি। যে মানুষটা কিনা নিজে অসুস্ত হলেও অসুস্ত শরীর নিয়ে অফিস করে। সারা দিন আমার পাশে পাশে থাকতে। এমনকি রাতের বেলাও তুমি আমার পাশে থাকতে। এসব ঋণ কোনদিনও শোধ হবে না। আমি এত বড় হয়ে গেছি তুমি এখনও আমার জুতা কালি করে দাও, কাপড় আয়রন করে দাও।
বাবা, আমি যেদিন বাবা হব ঠিক তোমার মত করেই আমার সন্তানকে আগলে রাখব।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৩৩