হানাফী মাযহাব কি?
♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥
অনেকে "হানাফী মাযহাব" কি বুঝেন না,
তাদের জন্য অত্যন্ত সহজ ভাষায়
ব্যাখ্যা করা হলোঃ
ইমাম আবু হানীফা নামে একজন প্রসিদ্ধ
তাবে তাবেয়ী ছিলেন, যার জন্ম ৮০
হিজরীতে ও মৃত্যু ১৫০ হিজরীতে।
আবু হানীফা তার উপনাম ছিলো কারণ তার প্রথম সন্তান ছিলো মেয়ে যার নাম
ছিলো হানীফা (আবু হানীফা - হানীফার
বাবা). তার আসল নাম ছিলো নুমান বিন সাবিত।
আর "মাযহাব" শব্দের অর্থ হচ্ছে পথ বা চলার পদ্ধতি।
সুতরাং, হানাফী মাযহাব কথাটির দ্বারা উদ্দেশ্যঃ
হচ্ছে ইমাম আবু হানীফার মত, তার চলার পদ্ধতি বা তরীকা।
এখন প্রশ্ন হতে পারে, ইমাম আবু হানীফা
কিভাবে চলতেন?
এ প্রসঙ্গে তিনি নিজেই বলেন,
"ইযা সাহহাল হাদীস, ফাহুয়া মাযহাবি" - যখন
কোনো সহীহ হাদীস পাবে, সেটাই
আমার মাযহাব।
অর্থাৎ, তিনি কখনো কোনো ফতোয়া দিলে পরে দেখা গেলো সহীহ
হাদীস তার বিপরীত তখন - সহীহ
হাদীসটাই তার মাযহাব হবে।
কারণ, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের মাঝে আদর্শ হিসেবে কুরআন ও সুন্নাহকে রেখে গেছেন, কোনো ইমাম বা পীর
বুজুর্গকে রেখে যান নাই। তাই কুরআন আর সুন্নাহর বিপরীত সমস্ত কিছুই ভুল ও বাতিল।
সুন্নাহর লিখিত ফর্ম হলো - হাদীস।
হাদীসের মাঝে কিছু জাল ও জয়ীফ
হাদীস আছে যেইগুলো দলীল
হিসেবে গ্রহণযোগ্য না। এই জন্য ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) এই কথা বলেন নি যে, হাদীস পেলেই সেটা আমার মাযহাব।
বরং তিনি বলেছেন, যখন কোনো "সহীহ" হাদীস পাবে সেটাই আমার মাযহাব।
সমস্ত আলেমগণ এই ব্যাপারে একমত
(বেদাতী মূর্খ ছাড়া), বুখারী ও মুসলিমের
সবগুলো হাদীস সহীহ।
সুতরাং, বুখারী ও
মুসলিমে কোনো হাদীস যদি ইমাম আবু
হানীফার মতের বিরোধী হয়
বা বিপরীত হয়, সেক্ষেত্রে বুখারী মুসলিমের হাদীসই তার মত হবে, এটাই ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) এর মাযহাব।
♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥
এবং কেন হানাফী মাযহাব সেরা?
♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥
ঈমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর জন্ম ৮০হিজরী মৃত্যু ১৫০হিজরী। ঈমাম বুখারীর জন্ম ১৯৪হিজরী মৃত্যু ২৫৬হিজরী। আবু হানিফার মৃত্যু আর ইসমাঈল বুখারীর জন্মের মাঝে ব্যবধান ৪৪বছর। জন্মের পর শৈশব কৈশর এবং ইল্ম হাসিল করতে আরো কমপক্ষে ২০বছর লেগে যাবে এটা স্বাভাবিক। এরপর হাদিস নিয়ে গবেষণার কাজে লেগে যাবে আরো কয়েক বছর এটাই স্বাভাবিক। কারন ইমাম বুখারীর ওপর ওহী নাযিল হয়নি আর সেটা সম্ভবও না। কঠোর মেহনত করেই ইল্ম অর্জন করতে হয়েছে। হিসাব করলে দেখা যায় ইলম অর্জন, গবেষণা, সব কিছু মিলিয়ে ৩০ থেকে ৪০ বছর লেগে যাওয়ার কথা। তাহলে কি বুঝা যায়? ঈমাম বুখারীর ঈলমের দরজায় পৌছাতে পৌছাতে পার হয়ে যায় কমপক্ষে ১৬০হিজরী।
এখন আমার প্রশ্ন সাহাবা আজমাঈন গণ কত হিজরী পর্যন্ত দুনিয়ায় ছিলেন? ঈমাম বুখারীর জন্ম ১৯৪ হিজরী পর্যন্ত কোন সাহাবা বেঁচে ছিলেন? ইমাম আবু হানিফার জন্ম ৮০হিজরীতে সাহাবা দুনিয়াতে ছিলেন বা তারপরেও ছিলেন। এতে দেখা যায় আবু হানিফা সাহাবাদের পেয়েছেন। সাহাবাদের না পেলে তাবেঈ হলেন কি করে? ধরে নিলাম সাহাবাদের পাননি,তারপরেও সহিহ হাদিস সংগ্রহের দিক দিয়ে আবু হানিফা এগিয়ে কারন মর্যাদা সম্পন্ন এবং নির্ভরযোগ্য মুহাদ্দেছ তাবেঈ তিনি অবশ্যই পেয়েছেন।
এখন প্রশ্ন কে বেশি নির্ভর যোগ্য আবু হানিফা না বুখারী?
এবার আসি ইমাম মুসলিম প্রসঙ্গেঃ
জন্ম ২০৪হিজরী মৃত্যু২৬১হিজরী। আবু হানিফার মৃত্যু থেকে ৫৪ বছর পরে জন্ম নিয়েছেন। ১৫০ ৫৪=২০৪হিজরী ব্যবধান সাহাবাদের থেকে। মুহাদ্দিস হতে আরো ৩০বছর লাগলে হিজরী সন দাড়ায় ২৩৫থেকে২৪০হিজরী। আবারো প্রশ্ন আবু হানিফা বেশি নির্ভরযোগ্য না ইমাম মুসলিম বেশি নির্ভরযোগ্য? হাদিস সহিহ বা জয়ীফ এটা নির্ণয় করা হয় রাবী অর্থ্যাৎ বর্ণনা কারীর গ্রহণ যোগ্যতার উপর। সে হিসাবে ইমাম আবু হানিফা বেশি নির্ভর যোগ্য রাবী পেয়েছেন। ইমাম বুখারী আর ইমাম মুসলিমের সময়ে নির্ভর যোগ্য অনেক রাবি মৃত্যু বরণ করেছেন। সুতরাং বুখারী বা মুসলিম শরিফে জয়িফ হাদিস একেবারেই নেই একথা ভাবার অবকাশ নেই। আর ইমাম আবু হানিফার একটি উক্তি নিয়ে শুভংকরের ফাঁকি স্টাইলে ফাঁকিবাজি করে কিছু লোক। আবু হানিফার উক্তির অর্থ হয় সহিহ হাদিসই আমার মাযহাবের ভিত্তি। এখানে কিছু ধুরন্ধর লোক অতিরিক্ত একটি শব্দ জুড়ে দিয়েছে সেটা হলো "পাবে"। আবু হানিফার উক্তিতে "পাবে" শব্দটি কোথাও নেই।
সুতরাং নির্দ্বিধায় নিঃসংকোচে আবু হানিফার মাযহাব অনুসরণ করা যাবে এবং সবচেয়ে বেশি পরিমানে সহিহ হাদিসের আমল করা সম্ভব হবে।