somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

০ প্রতিগল্পঃ একটি আমার রায় ০

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই যে ভাই, আমাকে চিনতে পেরেছেন? আমি হরং। পিতা আরব্য রজনীর গল্পের বিশেষ ভক্ত ছিলেন, বিধায় এক বাদশাহের সাথে মিলিয়ে পুত্রের নাম রেখেছিলেন হারুনুর রশিদ। সাথে পূর্ব পুরুষের লালিত প্রামাণিক উপাধি নামের শেষে যুক্ত হইয়া হারুনুর রশিদ প্রাং কৌতুকপ্রিয় লোকের ভালবাসায় ঈষৎ সংক্ষেপিত হইয়া হরং অবয়ব পাইয়াছে।


তো বাল্যকালে বাংলা পরীক্ষার প্রশ্ন পত্রের প্ররোচনায় সকলে খাতায়, নিকট অতীত গলঃধিত শিক্ষা বমি করে, হরং দা গ্রেট আমি সেখান থেকেও শিক্ষা লাভ করেছিলাম,
" সাধু ভাষা ও চলিত ভাষা মিশ্রণ অমার্জনীয় অপরাধ। "
আমার আশে পাশের মানুষের নিজ নিজ প্রাপ্ত শিক্ষা প্রয়োগ দেখে এত বেশি মুগ্ধ হয়েছি যে, এই ক্ষুদ্র রচনায় আমি ও তাহাদের মত নিজ লব্ধ শিক্ষা মানিয়া চলিব বলিয়া মন স্থির করিয়াছি।


এবার মুল ঘটনায় আসি। একবার নিজের কিছু গচ্ছিত টাকা দিয়ে আলু স্টক করেছিলাম। অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারে কৃত্রিম আলুর সংকট সৃষ্টি করে আলুর দাম বাড়িয়ে দিলে; আমি শতভাগ মানবিক উপায়ে আমার স্টক করা আলু বেশি দামে বেচিয়া স্থুল অংকের মুনাফা করিয়াছিলাম। আমি আবার ধর্ম কর্ম নয় জনকল্যাণ ও মহান মানবিকতায় বিশ্বাসী।


এক সাথে এত টাকা পেয়ে অসংযত অসামাজিক খরচে সব টাকা শেষ করে ফেলেছিলাম। মেজাজ টা এত বেশি খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে, থানায় গিয়েছিলুম নিজের নামে মোকদ্দমা করিতে।
থানায় অফিসারের কাছে সবিস্তারে খুলে বলতেই তিনি আমার মত তরল পাবলিকের কাছে থেকে আমার মত কঠিন পাবলিকের বিরুদ্ধে মামলা নিতে চাইলেন না। আমার মুনাফার টাকার উপভোগ রস অফিসার সাহেব ও স্থানীয় নেতাবাড়ি যাতায়াতের সুবাদে কিঞ্চিত লাভ করিয়াছেন। স্বভাবতই তিনি আমাকে কঠিন পাবলিকের কঠিন বন্ধুবর মনে করেছেন।

কি আর করা, আমার প্রদত্ত; শিক্ষিত চক্ষুর অন্তরালকৃত টাক্যরসে তাহার হৃদয় আদ্র হইলে মোকদ্দমা তুলিবার খাতাও আমার মত কঠিন পাবলিকের বিরুদ্ধে কলমের সহায়তায় ক্ষুব্ধ হইয়া উঠিল।

পেপার পত্রিকায় হাহাকার পড়িয়া গেল। মার্কেটিং গুরু রা ও হইত সন্দেহ করিবেন, আমি বিভিন্ন পত্রিকার সাথে আতাত করিয়া তাহাদের কাটতি বাড়াইতে এই ফন্দি আঁটিয়াছি।


নানা পত্রিকার হেডিং গুলো ও ছিল মাইন্ড সিকার টাইপ।


" সততার প্রবাদ প্রতিম পুরুষ, নিঃস্বতার হাহাকার, আমাদের মাঝে এবার আসছেন অতি বুদ্ধিমান নেতা, বিশ্বে প্রথমবারের মত কিংকর্তব্যবিমুঢ় বিচার ব্যবস্থা, আত্ত নিন্দন জনপ্রিয়তা, পাগলের প্রলাপে উৎসাহী বিচারবিভাগ - ইত্যাদি ইত্যাদি।


লোকে একটার বেশি দুইটা পত্রিকা পড়ে না। তাই নানা জনে নিজ নিজ পাঠ্য পত্রিকার সপক্ষে বিপক্ষে নানা গোত্রে বিভক্ত হইয়া দেশ ও জাতির সংকট মোচনে সুদৃঢ় বক্তব্যে একে অন্যের সাথে মনমালিন্য বাড়াইতে লাগিল।

এদিকে আমি আছি ফ্যাসাদে। নিজেকে বাঁচাইতে মোটা টাকা খরচা করে উকিল ধরতে হল। উকিল বাবু শিক্ষকের মত আমাকে নানা রুপ অসত্য শিখাইয়া দিলেন।
উকিল বাবু কইলেন, " মা লক্ষি আপনার মাঝে বিরাজ করে আমার দিকে প্রসন্ন হইলে, ভগবান ও আমার মাঝে বিরাজ করে আপনার সংকট মোচন করবে অবশ্যই।"

অন্যদিকে, নিজেকে মোকদ্দমায় জিততে আমাকে আবার উকিল ধরতে হল। পূর্ব অভিজ্ঞতার কারনেই বুঝলাম, উকিলেরা একই আইন পুস্তক চাটিয়া গতরে কাল গাউন চড়াইবার অধিকার লাভ করিয়াছেন।


উকিল বাবু ও আগের জনের মতই ধর্মপ্রাণ। আমাকে আশ্বস্ত করলেন, " চিন্তার কিছু নাই ভাই সাহেব। আল্লাহপাক ভরসা। আপনি শুধু আমার পেটের দিকে খেয়াল রাখবেন, আর তোতা পাখির মত যা শিখাইছি আওড়াইবেন। দেখেন আমরাই জিতব।"

যথারীতি পুলিশ বাবুদের ডজন ডজন কাগজ পত্রের সাথে চা বিড়ি খরচা হইয়া মোকদ্দমা আদালতে উঠিল।

লোকে লোকে লোকারণ্য আদালত। কেও আমারই পক্ষ নিয়া আমারই বিপক্ষে আন্তআলাপচারিতা করছিল। আবার কেও আমারই বিপক্ষ নিয়া আমার ই পক্ষে ভিন মতের গোত্রের সহিত মশার দন্দ করিতেছিল।

ধর্মাবতার আসনে বসলে বায়ুবেগে আলাপ চলতে লাগল। পক্ষ নিয়া উকিল বাবুর মস্তিস্ক প্রসুত কথা গুলো ছুড়ে দিলাম। আবার বিপক্ষ নিয়া আরেক উকিল বাবুর বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিলাম।

দুই উকিলে প্রবল বাক্যযুদ্ধ চলতে লাগল।

দুই পক্ষই সাক্ষাত অবতার সম শক্তিমান। কেও কারো চেয়ে কম নয়। জজ সাহেব পরবর্তী তারিখ দিলেন।


সময়ের সাথে যে গচ্ছিত ধন আর মানুষের আগ্রহের ক্রমান্বয় বিলুপ্তি হয়; তা নিজ পকেট আর আদালত প্রাঙ্গণের মানুষ দেখিয়া নিজে নিজেই সক্রেটিসের নিজ জানার মত শিখিয়া নিলাম।


যদি ও আমার ব্যক্তিগত তথা পারিবারিক জীবন কে আমি রচনা থেকে সযতনে আড়াল করেছি। তথাপি এটুকু বলা আবশ্যক মনে করি, মানব প্রদত্ত জীবন নিয়ে আমার মোকদ্দমা আমার কলেজ গামি সন্তানের চেয়ে ও বয়সে কিছু অগ্রজ হইয়াছিল। আর পরিবারকে অধিকাংশ সময় নিরামিষ খেয়ে দিন কাল কাটাইতে হইতেছিল; কারন মোকদ্দমার মত নিরীহ সন্তান একাই হস্তি সম ভরণ পোষণ শোষণ করিতেছিল।


আজ আমার বৃদ্ধ মোকদ্দমার রায়। কিন্তু পূর্বজ শিক্ষার আংশিক ভুল ধরা পড়ল। যদি ও আমার ধন কমতির ধারা বজায় থাকিল, তদাপি আজ মানুষের বাসি আগ্রহ পূর্বাপেক্ষা তিন- চার গুন বাড়িয়া নব যৌবন লাভ করিল। আদালত প্রাঙ্গণের কানায় কানায় যৌবন ছটা উত্রিয়া শোভা পাইতেছিল। বোধ করি প্রাঙ্গণের বাহিরের শোভা ও কম চিত্তাকর্ষক নয়।


জজ সাহেব বিরাজ হইলেন। জলতলের ন্যয় নিরব নিঃশ্বাসের গমগম শব্দে ঘোরের মত রুপ নিল আদালতের ভিতরের প্রাঙ্গন।


মোকদ্দমায় এ যাবত কালের সামগ্রিক যুক্তিতর্ক, সাক্ষ্য-প্রমাণ আইন দ্বারা ব্যবচ্ছেদ করিয়া ধর্মাবতার রায় পাঠ শুরু করিলেন।
আমার মত অজ্ঞের অবোধগম্য বিজ্ঞ বিজ্ঞ বিশ্লেষণ বর্ণনা শেষে আমাকে মানসিক ভারসাম্যহীন আখ্যা দিয়া মানসিক চিকিৎসালয়ে আরোগ্য লাভের নিমিত্তে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হইল।

আদালত প্রাঙ্গনে মশার দন্দ মাছির দন্দে রুপ নিল।

আমি বুঝতে পারলাম না, আমার জয় হল নাকি পরাজয় হল। তবু ও বিজ্ঞ আদালত আমার চেয়ে কোটি গুন বেশি বোঝেন, যাহা আমাদের মত সাধারন মানুষের বোঝার সাধ্য নাই ভাবিয়া সান্ত্বনা পাইবার চেষ্টা করিতেছিলাম। তবে সেখানেই অনেক সাধারণের মন অঙ্কিত মুখানুভুতিতে কারো হাসির রেখা, কারো দুঃখের রেখা দেখিয়া মনে হল, তারা আমার মত মূর্খ নন বলিয়াই বিষয় উপলব্ধি করিয়াছেন।



যদি ও মোকদ্দমা পূর্ব কালে যাহাদের পেছনে আমার লভ্যাংশের অর্থ ধন্য হইয়াছে, মানে আমার পরিচিত নেতাকূলের; বিরোধী দলিয় পরিচয় প্রকাশ করিতে হইয়াছে। আবার সেই অফিসার সাহেবের টাক্য রসে আংশিক স্নানের কথা ও বলিতে হইয়াছে। তবু ও সরকার বা বিরোধী দল বিজ্ঞ আদালত কে প্রভাবিত করিতে পারেন, এমন নিষ্ঠুর, জঘন্য, অমানবিক, নিতিহিন, বিবেকবর্জিত, বুদ্ধিহীন মিথ্যা অপ প্রচার যদি কেও কোন দুরভিসন্ধিতে করে থাকে- অবশ্যই তাকে অভিসম্পাত করিব। প্রাণ থাকিতে বিশ্বাস করিব না।





উদ্ভট মস্তিস্কের উদ্ভট গল্প ভাবনার সাথে অতীত বা বর্তমানের স্থান, কাল, পাত্র, প্রতিষ্ঠান এমনকি কোন সৃষ্টির মিল নাই। থাকলে লেখক দায়ি নয়। নিতান্ত কাকতালীয় ভাবিতে হইবে।
ইহা নিছক একটি গল্প রচনা চেষ্টা মাত্র।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৩৭
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×