বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান রাতুল। নতুন গিটার কিনেছে সে। ভাল গান গান গায়। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন একদিস সে বড় গায়ক হবে। গিটার হাতে বাসায় ফিরছে আর ভাবছে বাবা-মাকেই প্রথম গিটার বাজিয়ে গান শোনাবে। সামনের বড় রাসÍাটা পার হলেই তার বাড়ি। কিন্তু বাবা-মাকে আর গান শোনানো হল না রাতুলের। ঘাতক বাস কেড়ে নিল তার গায়ক হওয়ার স্বপ্ন। সেইসাথে এক পিতা-মাতা হারাল তাদের বেচে থাকার একমাত্র অবলম্বনকে।
রাতুলের গল্পটি হয়ত কাল্পনিক। কিন্তু রাতুলের মত এমন অনেকেরই জীপনপ্রদীপ হারিয়ে যাচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনায়। সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের দেশে একটি স্বাভাবিক ঘটনায় পরিনত হয়েছে। সংবাদপত্র খুললে প্রায় প্রতিদিনই দেখা যায সড়ক দুর্ঘটনার খবর। কখনও গাড়ি চাপা পড়া, কখনও বা দুটি গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ আবার কখনও খাদে পড়ার খবর। কখনও বা ১/২ জন নিহত, আবার কখনও পুরো পরিবার ধরে নিহত হওয়ার খবরও আসে। আবার দুর্ঘটনায় বেচে থাকলেও দেখা যায় হয়ত কারও গলগ্রহ হয়ে থাকতে হয়, যা অনেক ক্ষেত্রে মারা যাওয়ার থেকেও কষ্টকর। রাস্তায় বের হলে মনে হয় এই বুঝি গাড়ি চাপা পড়ে জীবন দিতে হবে।
কিন্তু এই সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের জন্য কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এমন কোন সংবাদ পাওয়া যায় না। আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনার কারন অনুসন্ধান করলে দেখা যাবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চালকের অনভিজ্ঞতা বা অসাবধানতা দায়ী। কখনও দেখা যায় পেছনের গাড়ি আগে উঠে গেছে,ফলে শুরু হয় আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতা। আবার অনেক ক্ষেত্রে চালক বদলে কন্ডাকটরের হাতে চলছে গাড়ি। আর ফলসস্বরূপ সড়ক দুর্ঘটনা হয়ে গেছে নৈমত্তিক্য ব্যাপার। দুর্ঘটনার জন্য শুধু চালকরাই দায়ী নয়। অনেক ক্ষেত্রে পথচারীদের অসাবধানতায়ও দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। সময় বাচাতে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে রাস্তার মাঝ দিয়ে দৌড়ে পার হওয়া, জায়গা না থাকা সত্ত্বেও জোর করে গাড়িতে ওঠা এখন সব জায়গার চিত্র। তাছাড়া ফুটপাথগুলো পরিণত হয়েছে দোকানে। ফলে সাধারণ মানুষকে হাটতে হচ্ছে রাস্তর মধ্য দিয়ে। আর এসব কারনে সড়ক দুর্ঘটনায় হারিয়ে যাচ্ছে অনেক জীবন।
সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সবার আগে প্রশাসন ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন। আমাদের দেশে ট্রাফিক আইন কখনোই মানা হয় না। মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব হচ্ছে চালকেদের কাছ থেকে ঘুষ নেয়। আর এই ঘুষ দেয়ার মাধ্যমে রাস্তায় চলছে লাইসেন্স ও মেয়াদহীন গাড়ি আর সেগুলো চালাচ্ছে লাইসেন্সবিহীন চালক।
আর এসব দূর করতে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ট্রাফিক আইন যথাযথভাবে মেনে চলার ব্যবস্থা করতে হবে। বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে জনগন ও চালক উভয়কেই সচেতন করে তুলতে হবে। তাহলেই সম্ভব হবে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা। মনে রাখতে হবে একটি সড়ক দুর্ঘটনা মানে পুরো পরিবারের কান্না। আর তা না সম্ভব হলে রাতুলের মত অনেকেই হারিয়ে যাবে, হারিয়ে যাবে অনেক রাতুলের স্বপ্ন, তাদের স্বজনদের আশার প্রদীপ।