: ভাই দুইডা টাকা দেন
: টাকা দিয়ে কি করবি
: খাব। খিদা লাগছে। সারাদিন কিছু খাই নাই।
: কি খাবি?
: খিচুড়ি
: ২ টাকায় তো খিচুড়ি হবে না
: আরো মাইনসের কাছে যামু। টাকা পাইলে তারপর কিনুম
: আর মানুষের কাছে যাওয়া লাগবে না। চল আজ আমি তোরে খাওয়বো।
এই কথাগুলো আমার সাথে ছিল না। ছিল পাশের একজন পথশিশুর সাথে আমার পাশে বসা মানুষটার যখন আমরা পড়ার ফাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনের দোকান থেকে খিচুড়ি খাচ্ছিলাম। এরমকম টাকা চাওয়া বা এক চামচ খাবার চাওয়ার চিত্র এখানের প্রতিদিনই দেখা যায়।
কিন্তু সংলাপগুলো সবসময় এরকম হয় না। সেখানে থাকে ঘৃণামিশ্রিত হুমকি- সর এইখান থেকে অথবা সামনে থেকে যা। অথচ এই বয়সে তার হাতে থাকার কথা ছিল বই। আর স্কুল থেবে ফিরে এসে মায়ের হাতে খাওয়া। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে তাদের হাতে থাকে অন্যে খাবারের ময়লা প্লেট আর মুখে থাকে খাবারের আকুতি।
শুধ ক্যাম্পাসেই নয়, এমন চিত্র ঢাকা শহরের সবখানেই পরিচিত। এসব শিশুদের মধ্যে কেউ কেউ ফুল, চকলেট, সংবাদপত্র বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। এদের অধিকাংশেরই বাবা-মায়ের কোন খোজ থাকে না। প্রতিটি পদেই তারা হয় বঞ্চনার শিকার। কারন তাদের একটাই দোষ তারা পথশিশু।
আর এর মধ্যে কেউ যখন তাদের কিছুটা সমাদর করে তাদের চোখের কোনে ফুটে ওঠে খুশির ঝলক। তেমনি ঝলক দেখেছিলাম সেদিন যখন ছেলেটি শিশুটিকে খাবার কিনে দিয়েছিল। শুধু শিশুটির চোখে নয় ছাত্রটির চোখে দেখেছিলাম এক প্রাপ্তির ঝলক, যা অন্য সবার চোখে দেখা অসম্ভব।
এমটি হয়ত আমিও করতে পারতাম। কিন্তু করি নাই। শুধু আমি না আমার মত অনেকেই করতে পারে। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন সদিচ্ছা। ছেলেটির কার্যক্রমে অভিভূত হয়ে তার সাথে কথা বলার লোভটা সামলাতে পারলাম না।
তার কাজের প্রশংসা করতেই সে বলে এটা তো সামান্য। এরকম হাজারও পথশিশু দিনের পর দিন না খেয়ে থাকছে। তাদের জন্য তো কিছু করতে পারলাম না। এদের দেখলে খবি খারাপ লাগে। প্রতি সপ্তাহে এক-দুইজন শিশকে খাওয়ানোর চেষ্টা করি।
ছেলেটি হয়ত তার সাধ্য যা ছিল তাই করেছে। তার প্রেচেষ্টা ক্ষুদ্র কিন্ত্র উদ্দেশ্য মহৎ। কিন্তু তার মত যদি আরও অনেকেই একটু প্রচেষ্টা চালাত তবে এসব শিশুদের একটা ব্যবস্থা করা অসম্ভব হত না। কারণ ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র থেকেই বৃহৎ এর সৃষ্টি।