রাজধানীতে শীতের আমেজ শুরু হয়ে গেছে। ঠান্ডা লাগুক আর নাই লাগুক মোড়ে মোড়ে ভাপা পিঠার ঘ্রান স্মরন করিয়ে দিচ্ছে শীতের আগমনের কথা। বিকেল থেকেই পিঠার দোকানগুলোর সামনে দেখা যায় শিশু থেকে বৃদ্ধ সকল মানুষের ভিড়। আর শীতকালীন পিঠার স্বাদ গ্রহনের অন্যতম জায়গা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পিঠাকেন্দ্র। শীতের হাওয়া বইতে না বইতেই এখানে শুরু হয়ে গেছে পিঠার উৎসব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলের সামনে লেকের পাশে রয়েছে পিঠার দোকানগুলি। বিকেল থেকে শুরু করে রাত ৯ টা পর্যন্ত পাওয়া যায় পিঠা। ভাপা পিঠা এই পিঠাকেন্দ্রের প্রধান পিঠা। মাত্র ৫ টাকায় পাওয়া যায় এক একটি ভাপা পিঠা। ভাপা পিঠার পাশাপাশি চিতই পিঠার কদরও কম না। বিভিন্ন রকম মশলার সাথে চিতই পিঠার মজাই আলাদা। ভাপা পিঠার মত চিতই পিঠার দামও প্রতি পিস ৫ টাকা। বন্ধুদের কেউ চায় ভাপা পিঠা, কেউ চায় চিতই পিঠা। এ যেন পিঠা খাওয়ার প্রতিযোগিতা। এছাড়াও রয়েছে পাটিসাপটা, মাংস পিঠাসহ বিভিন্ন ধরনের পিঠা। এগুলোর কোনটার দাম ৫ টাকা, কোনটার দাম ১০-১৫ টাকা আবার কোনটার দাম ২০ টাকা।
পিঠাকেন্দ্রের পাশে রয়েছে মেয়েদেরহ ল ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল। বান্ধবী নিয়ে পিঠা খাওয়া তাই অনেকের রুটিন হয়ে দাড়িয়েছে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকদেরও মাঝে মাঝে দেখা যায় পিঠা খেতে। বাইরে থেকে আসা দর্শনার্থীদের সংখ্যাও কম না। এমনিতেই সারা বছর বন্ধের দিনে দর্শনার্থীতে ভরে থাকে ক্যাম্পাস। শীতের সময় এই দর্শনার্থীর সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। কারন শীতের পাখি দেখার সাথে সাথে শীতের পিঠা খাওয়ার সুযোগ অনেকেই হাতছাড়া করতে চান না। অনেকটা রথও দেখা কলাও বেচার মত। তাই তো দেখা যায় অনেকে পরিবারসহ ভোরবেলায় উপস্থিত হয়েছেন পাখি দেখতে। এরপর সারাদিন ক্যাম্পাসে ঘুরে সন্ধায় ঠিকই উপস্থিত হয়েছেন এই পিঠাকেন্দ্রে। কেউ কেউ পিঠা খেয়ে যাচ্ছেন, আবার কেউ কেউ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়ির অন্যান্যদের জন্য।
শীতকাল মানে রুক্ষ- শুষ্ক অবস্থা, শীতকাল মানে গাছের পাতা ঝরে যাওয়া। এত বেদনার মধ্যে শীতের আনন্দ হল শীতের পিঠা। গ্রামের বাড়িতে শীত আসা মানে খেজুর রসে ভিজানো পিঠা। কিন্তু ব্যস্ত এই নগরীতে রস পাওয় কষ্টসাধ্য, তাই বলে তো আর পিঠা খাওয়ার মজাা থেকে দূরে থাকা যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পিঠাকেন্দ্র কিছুটা হলেও মনে করিয়ে দেয় গ্রামের কথা, যেখানে ছিল সকালে উঠে কাচা খেজুরের রস খাওয়া, সারারাত ধরে পিঠা বানানো এবং রসে ভিজানো আর সকালে উঠে সেই পিঠা খাওয়া।
‘পুরোনে সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়, ও সে চোখের দেখা প্রানের কথা সেকি ভোলা যায়’। ব্যস্ত শহরে এসেও সেই দিনের কথা ভোলা সম্ভব না। তার চেয়ে অসম্ভব সেই সময়ে ফিরে যাওয়া। তাই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর জন্য এই পিঠাকেন্দ্রে এত লোকের সমাগম। তাছাড়া এত কম খরচে পিঠা খাওয়ার সুযোগ ঢাকার অন্য কোথাও জায়গা নাই বললেই চলে। সেই সাথে রয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরূপ সৌন্দর্য। তাই ছুটির দিনে বন্ধু বা পরিবারসহ ঘুরে আসতে পারে জাবি’র এই পিঠাকেন্দ্রে।