প্রথম আলোর রম্য সাপ্তাহিক আলপিন এর তরুন কার্টুনিস্ট আরিফুর রহমান মুহাম্মদ নাম নিয়ে একাটা পুরোনো গ্রাম্য কৌতুকে অরতারনা করেছিল । শুরু হয়ে গেল ইসলাম রক্ষার আন্দোলন । এমনই একটা ভাব যে এই কার্টুনের কারনে ইসলাম ধ্বংসের পথে । ফলাফল : কার্টুনিস্ট আরিফ জেলে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায়, বিভাগীয় সম্পাদক কে ছাটাই আর মতিউর রহমান খতিবের কাছে মাফ চেয়ে এলেন । মিছিল হল প্রথম আলো বন্ধের ।
ঘটনা টা যখন ঘটলো তখন নিজেকে অনেক অসহায় মনে হয়ে ছিলো । কারন একই বিষয়বস্তু নিয়ে একটি কৌতুক ছাপা হয়েছিলো ইসলামী ছাত্রশিবিরের পত্রিকা কিশোর কণ্ঠের নভেম্বর ১৯৯৮ সংখ্যার ৮৭ নম্বর পৃষ্ঠায় হাসির বাকসো বিভাগে। ব্লগারদের জন্য সেই পত্রিকার প্রচ্ছদ ও সেই কৌতুকটি মূল পাতা থেকে স্ক্যান করে এখানে তুলে দিলাম।
আমরা কতিপয় ধর্মের লেবাস পড়া জঙ্গী দের হাতে বন্দী । আলপিনের নাম বদলে গেল ।
কথায় কথায় কুরআন কিংবা মহানবী কে অবমাননার দায়ে তারা মোটেও ধর্মপ্রীতি না, বরং পলিটিক্যাল এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যবহার করে আছে । আচ্ছা, একজন সাচ্চা মুসলমানের ঈমান কি এতটাই দূর্বল যে একটি কার্টুন দিয়ে তাকে বিপথগামী করা যাবে ?
২৩ নভেম্বর, ২০০৮।
চারদলীয় জোটের অন্যতম শরীক দল ইসলামী ঐক্যজোট এর প্রধন মুফতি ফজলুল হক আমিনী সমাবেশে বলেন " রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উদীচী ও ধূমকেতু নামে দুটি সাংস্কৃতিক সংগঠন "মান্দার" নাটকে মহানবী কে কুত্তার বাচ্চা বলে গালি দিয়েছে । ইসলামের বিধান অনুযায়ী যারা এটার প্রতিবাদ করে না তারা মুসলমান নয় । তারাও কুত্তার বাচ্চা । কিন্তু আমরা বিশ্বনেতার এইরূপ অপমান মুখ বুজে সহ্য করবো না । জঙ্গিবাদী মৌলবাদী বলে আমাদের এই আন্দোলন থামানো যাবে না।"
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদীচী এবং এর অঙ্গ সংগঠন ধূমকেতু "মান্দার" নামে একটি নাটক মঞ্চস্থ করে যেখানে একটি চরিত্রের নাম ছিল " রাসুল খান।" রাসুল খান নাটকের খলচরিত্রে । তো নাটকের অন্য একটি চরিত্র এই রাসুল খানে কে নাটকের প্রয়োজনে কুত্তার বাচ্চা বলে গালি দেয় । ব্যাস, কথা নাই আর, নাটকের ঐ চরিত্র কে তারা মহানবী বানিয়ে আয়োজক, কুশীলব দের দায়ী করেন এবং তাদের জনসম্মুখে হত্যার হুমকি দেয় আমিনী গং রা। তাদের স্পর্ধা দেখার মত, তারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গুড়িয়ে দেবার হুমকিও সমাবেশে প্রদান করে ।
২৩ তারিখের সমাবেশে "ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির'' নেতা আব্দুল আউয়াল ওয়অসি বলেন " নেতারা আমাদের শুধু হুকুম দেন ৭২ ঘন্টার ভেতর তাদের জিব্হা টেনে কেটে ফেলবো । আমরা নবীজির প্রেমিক, সবাই জীবন দিতে পারবো । জিহাদে তৈরী আছি আমরা।"
এইকই সমাবেশে কিমিটির মহাসচিব এবং ইসলামী ঐক্যজোটের ভাইস চ্যায়ারম্যান মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস বলেন " উদীচী ও ধূঞকেতু দেশের কোথাও অনুষ্ঠান করতে পারবে না । বাংলাদেশের কোন আইন এদের রক্ষা করতে পারবে না । যারা মহানবী কে কলঙ্কিত করতে চায় ইসলামী আইন অনুযায়ী তাদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড ।" ( প্রথম আলো, ২৪ নভেম্বর ২০০৮)
মৌলবাদীদের পত্রিকা "আল ইহসান" এ লেখা হয় - " কাজেই দেরি নয়, এই নরপশু ইহুদি নাসারা দের নরপিচাশ ধুমকেতু নাট্যপশু উদীচীর কুকুরছানাদের যেখানেই পাওয়া যাবে সেখানেই কতল, হত্যা, মস্তক ছিন্ন ভিন্ন করার জন্য সকল মুসলমান কে যার যেটা আছে তা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়তে হবে।... এক্ষেত্রে যে দেশ, যে দল, যে গোষ্ঠী, যে সরকার, যে শাসক, এই নরাধম পশুদের দালালি করবে,পক্ষপাত করবে, আশ্রয় দেবে মনে করতে হবে তারাই এ কাজের হোতা , তাদেরও যেখানে পাওয়অ যাবে কতল করতে হবে ।খতম করতে হবে।" (আল ইহসান, ১৯ নভেম্বর) ( উদ্ধৃতি: মান্দার নিষিদ্ধ কিন্তু তারপর ?, উপসম্পদকীয়, সমকাল , ২৫ নভেম্বর ২০০৮)
পত্রিকাটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক হজরত ইমাম সাইয়্যিদ মুহম্মদ দিল্লুর রহমানের (যার আরেক নাম মুর্দ্দা জিল্লুহুল আলী) উদ্ধৃতি দিয়ে চাররঙে যে ভাষ্য ছাপা হয়েছে সেটাও শিউরে ওঠার মতো। ধূমকেতু নাট্য সংসদ এবং ‘মান্দার’ নাটকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ‘মুরতাদ’ ঘোষণা দিয়ে বলা হয় : ‘যে ব্যক্তি এই সকল মুরতাদকে কতল বা হত্যা করতে পারবে তাকে আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাতের পক্ষ থেকে উপযুক্ত পুরস্কারে পুরস্কৃত করা হবে।"
এই জঙ্গী দের তুষ্ট করতে ধূমকেতু কে নিষিদ্ধ করা হয় । তবুও থামেনি তারা । শিবির চালিয়েছে তান্ডব রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে । বিমানবন্দরের সামনের ভাষ্কর্য ভেঙ্গে ফেলেছে আমিনী এবং তার শিবির চেলারা ।
এবার আসি সাম্প্রতিক রামু'র ঘটনায় । প্রথমেই বলবো এটা অবশ্যই ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের ইন্ধন এবং রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণ ছিল । কেন বলবো ? শুনি তাহলে রাজবন বিহার এর আবাসিক পরিচালক প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষুর মুখে - " মুসলমানদের সঙ্গে আমরা এতোদিন ধরে পাশাপাশি বসবাস করে আসছি। তারা আমাদের ওপর হামলা করতে পারেন তা আমাদের কল্পনারও বাইরে ছিল। এতো ছোট ঘটনার জন্য এতো বড় হামলা বিশ্বাস করা যায় না"
সবাই বলছেন স্থানীয় ক্ষুদ্ধ জনতা এই কাজ টা করেছে । তবে আক্রান্ত বড়–য়া পাড়ার বাসিন্দা নিকাশ বড়ুয়া বলেন, “হঠাৎ করে কেন এমন হলো তা আমরা বুঝতে পারছি না। রাম-দা হাতুড়ি নিয়ে এসে তারা হামলা চালায়। কারা করেছে তাও আমরা জানি না।” অর্থ্যাৎ হামলাকারী রা বহিরাগত, নতুবা তারা তাদের চিনতে পারতেন ।
ঘটনায় হতবাক রামুর মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনও। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ওপর এ ধরনের হামলার কোনো যুক্তিই তারা খুঁজে পাচ্ছেন না।
রামু সদরের রিকশাচালক ছলিম উল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কি জন্য এমন হলো বুঝতে পারছি না। আমরা সবাই তো একত্রে থাকি। ”
সংখ্যালঘু পল্লী ঘিরে রাতে জামায়াতে ইসলামীর কর্মীদের জড়ো হওয়া খবর পাওয়ার কিছু পরেই হামলার খবর পান কক্সবাজারের ঝিলংজা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান । যারা হামলা চালিয়েছে, তাদের কণ্ঠে শোনা গেছে ‘নারায়ে তকবির’ শ্লোগান।
দুইয়ে দুইয়ে চার মেলানো টা খুব কষ্টের হয় না । ভিশরাগত দের দিয়ে হামলা এবং নেপথ্যে কারা জড়িত তার সহজেই অনুমান করা যায় । এই ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন নয়।
এখনই সময়, শক্ত হাতে দমন করার । নিষিদ্ধ করা ধর্ম ভিত্তিক এই হিংস্র রাজনীতি । নতুবা এর পরিনাম আমাদের ভোগ করতে হবে চরম মূল্য দিয়ে।