আমি: সাগর রুনি কে চেনেন?
আপনি: অবশ্যই চিনি, সাংবাদিক দম্পতি, ৩ মাস আগে খুন হয়েছে ।
আমি: প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক পিটানোর খবর জানেন ?
আপনি: অবশ্যই, পেপারে ছবি দেখেছি। নিজেও ফেসবুকে জনমত গড়ে তুলেছিলাম।
আমি: গতকাল বিডিনিউজের সাংবাদিক কোপানোর ঘটনা ?
আপনি: হা, আমি নিজেও এর প্রতিবাদের যে মানব বন্ধন হবে তাতে যোগ দেবো।
আমি: তার মানে আপনি এই ঘটনার গুলোর বিচার চান?
আপনি: কেন না? অবশ্যই বিচার চাই।
আমি: আচ্ছা আপনি মানিক সাহা কে চেনেন ?
আপনি: না।
আমি: হুমায়ূন কবির বালু ?
আপনি: পরিচিত ঠেকছে।
আমি: গোলাম মাহমুদ কিংবা গৌতম দাস ?
আপনি: উহু....
আমি: তবে আর কি... ভুলে যান সাগর রুনি কিংবা ফটোসাংবাদিক প্রহারে ঘটনাও....
মানিক সাহা কিংবা হুমায়ুন কবির বালু, গৌতম দাস অথবা গোলাম মাহমুদ....সবাই নিহত সাংবাদিক। আট বছর আগে তারা নিহত হয়েছেন। তাদের বিচার কাজ কত দূর ?
আপনি: ধুরু মিয়া, আপনি তো লীগের টাকা খেয়ে ব্লগিং করছেন
আমি: কেন!!
আপনি: আপনি লীগ রে ভালো প্রমানের চেষ্টা করতেছেন তাদের দোষ ঢেকে।
আমি: আগের সরকারের আমলে কোন কিছু বলতে পারবো ?
আপনি: আরে ভাই রিসেন্ট ম্যাটারে থাকে, আগে কি না কি হইছে...
আমি: রিসেন্ট..... হুমমমহ... হলাম নাহয় আপনাদের চোখে পেইড ব্লগার.... অন্যায় কি আর বর্তমান অতীত মানে ?
আপনি: ভাই, আপনে বহুৎ প্যাচাইনা পাবলিক।
আমি: আচ্ছা, সাগর রুনির কথা কি আপনি আগামী ২ বছর পর মনে রাখবেন ?
আপনি: আপনের সাথে কোন কথা না, আপনে একটা দালাল।
আমি: আসলেই আমি দালাল.... তবে এই দালাল আগামী ২ বছর পর আবার সাগর রুনি নিয়ে পোষ্ট দেবে.... তখন লীগের আমল নামা পড়বেন আর আমাকে রাজাকার বলবেন.....
শুরু করতে চাই ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমেদের আইনমন্ত্রী থাকাকালীন সংসদের করা একটি মন্তব্য দিয়ে-
"ফ্রিডম টু প্রেস মানে ফ্রিডম টু লাই "
মানিক সাহা :
নড়াইলের ছেলে মানিক সাহা ছাত্রাবস্থা থেকেই তিনি ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৭৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার প্রতিবাদে প্রচারপত্র বিলি করতে গিয়ে তিনি বিএল কলেজ থেকে গ্রেপ্তার হন। এ সময় ২৪ মাস কারাভোগ করেন। কারাগার থেকেই তিনি বিএ পরীক্ষায় অংশ নেন। এমএ ও এলএলবি পাস করেন।
১৯৯০ সালের দিক থেকে তিনি সাংবাদিকতায় বেশি সময় দিতে শুরু করেন। সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে সরে আসেন। কাজ করেছেন ইটিভির খুলনা বিভাগীয় প্রতিনিধি হিসেবে। বিবিসির সংবাদদাতা হিসেবে। নির্মমভাবে খুন হওয়ার মাত্র মাস দুয়েক আগে যোগ দেন ইংরেজি দৈনিক নিউ এজে।
২০০৪ সালের ১৫ জানুয়ারী খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে সন্ত্রাসীদের বোমা হামলায় নিহত হন দৈনিক সংবাদের খুলনা ব্যূরো প্রধান এবং প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মানিক সাহা।
বোমা হামলার পর নিহত সাংবাদিক মানিক সাহা
হত্যার কারন হতে পারে :
নির্ভীক সাংবাদিক মানিক সাহা হত্যার কারণ খুঁজতে গিয়ে অনেক বিষয় সামনে চলে এসেছে। তাঁর শত্রু হিসেবে যাদের মনে করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্রকারী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী, উগ্র মৌলবাদী চক্র, প্রেসক্লাবের আধিপত্য বিস্তারে অপচেষ্টায় লিপ্ত প্রতিক্রিয়াশীল কয়েক সাংবাদিক, পরিবেশ ধ্বংস করে চিংড়ি চাষে লিপ্ত প্রভাবশালী চক্র, চোরাচালানি-অস্ত্র ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ, সুন্দরবন ধ্বংসকারী এবং মংলা বন্দর লুটপাটকারীরা। রাজনৈতিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতার কারণে এদের বিরুদ্ধে মানিক
সাহা সব সময়ই ছিলেন সক্রিয়। তিনি আজীবন লড়াই করেছেন অসহায় দুর্বলের পক্ষে, স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতক মৌলবাদী চক্রের বিরুদ্ধে।
এই চিত্র স্পষ্ট ফুটে উঠেছে তাঁর সাংবাদিকতা, রাজনীতি ও অন্যান্য সামাজিক কর্মকান্ডে । তাই সর্বশেষ ২০০১ এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যখন দেশব্যাপী হিন্দু সাম্প্রদায়িক ও বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর বর্বর নির্যাতন শুরু হয়, তখন তিনি দৃঢ়তা ও সাহসিকতার সাথে দাঁড়িয়েছেন নির্যাতিতদের পাশে। বিবিসি, ইটিভি ও দৈনিক সংবাদে বস্তুনিষ্ঠভাবে নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেছেন। শুধুমাত্র এটুকু করে থেমে থাকেননি তিনি। সহকর্মীদেরকেও উদ্বুদ্ধ করেছেন সত্য প্রকাশে ভূমিকা রাখতে। মানিক সাহা কখনো কখনো প্রশাসনকেও এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য করতেন। সরকার ও প্রশাসন অনেক ঘটনায় ক্ষুব্ধ ছিলেন তাঁর উপর।
এরকম একটি ঘটনা ঘটে ২০০২ সালের ডিসেম্বর মাসে। তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ‘খুলনা জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটি’র সভায় খুলনা প্রেসক্লাবের প্রতিনিধি হিসেবে মানিক সাহা অংশ নেন। তিনি তার আলোচনায় পত্র-পত্রিকার রেফারেন্সে ওই এলাকায় সংখ্যালঘু ও বিরোধী নেতা-কর্মীদের নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন। এক পর্যায়ে মন্ত্রী পত্র-
পত্রিকার খবরকে অতিরঞ্জিত আখ্যায়িত করে বলেন, নির্যাতনের সকল অভিযোগ সঠিক নয়। এসময় সাংবাদিক মানিক সাহা মন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ করে বলেন, ‘নির্যাতনের খুব কম চিত্রই পত্রিকায় এসেছে।’ তিনি মন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, ‘আমি এই নির্যাতনের প্রমাণ হাজির করতে না পারলে সাংবাদিকতা ছেড়ে দেবো। তবে, আপনাকেও ওয়াদা করতে হবে ঘটনার প্রমাণ পেলে আপনি মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করবেন।’ এতে ক্ষুব্ধ মন্ত্রী সভা শেষ না করেই দ্রুত সভাস্থল ত্যাগ করেন। অবশ্য জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে একাধিক
গোয়েন্দা সংস্থা মানিক সাহার ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখতো। দেশের বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ওই বছরের শেষে দিকে যখন দেশদ্রোহিতার অভিযোগ এনে গ্রেফতার ও হয়রানি করা হচ্ছিলো তখন একইভাবে হয়রানির চেষ্টা করা হয় সাংবাদিক মানিক সাহাকেও। স্বার্থান্বেষীরা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে মানিক সাহাকে প্রধান বাধা মনে করে তাঁর বিরুদ্ধে এসকল যড়যন্ত্র শুরু করে। দক্ষিণাঞ্চলের নিচু ফসলী জমিতে লোনা পানি ঢুকিয়ে অপরিকল্পিতভাবে পরিবেশ বিধ্বংসী চিংড়ি চাষ হয়ে আসছে গত প্রায় দুই যুগ ধরে। শহরের প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে ঘের দখল, জমি দখল করে অবৈধভাবে চিংড়ি চাষ, গরিব মানুষ সম্পদহীন আর প্রভাবশালীদের অধিক ধনী হওয়ার কথা অনেকেরই জানা। অনেকেই মনে করেন চিংড়ি চাষকে কেন্দ্র করেই এঅঞ্চলে সন্ত্রাসের সৃষ্টি হয়েছে।বিভিন্ন সময়ে খুন, ধর্ষণ, হাঙ্গামা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এই সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাহস ও দৃঢ়তার সাথে সর্বাগ্রে যিনি কলম ধরেছেন তিনি সাংবাদিক মানিক সাহা। যেখানে পরিবেশ বিধ্বংসী চিংড়ি চাষ ও প্রভাবশালীদের অত্যাচার নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে সেখানে
আট বছরেও হয়নি মানিক সাহা হত্যাকান্ডের বিচার:
আট বছর কেটে গেছে । হত্যার বিচার হয় নি । আমরাও ভুলে গেছি মানিক সাহার কথা।দীর্ঘ ৮ বছরেও সাংবাদিক হত্যার এই চাঞ্চল্যকর মামলাটির বিচার কাজ শেষ হয়নি।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌশুলি কাজি আবু শাহিন বাংলানিউজকে জানান, একুশে পদক প্রাপ্ত সাংবাদিক মানিক সাহাকে হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত ২টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে খুলনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে। মামলা ২টির যুক্তি তর্ক শুনানি ইতোপূর্বে শেষ হলেও পুনরায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। মামলাটির গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়ান আবদুল সামাদ এখনও সাক্ষ্য দিতে আসেননি।সাংবাদিক মানিক সাহার সহোদর প্রদীপ সাহা বাংলানিউজকে জানান, ২০০৪ সালের পর দীর্ঘ ৮টি বছর চলে গেছে। মামলার গুরুত্বপূর্ণ ৫ আসামি এখনও পলাতক রয়েছে।
হুমায়ুন কবির বালু :
দুই নিহত সাংবাদিক । বামে মানিক সাহা এবং ক্রেস্ট নিচ্ছেন হুমায়ুন কবির বালু
২০০৪ সালের ২৭ জুন। দিনটি ছিল সাংবাদিক বালু পরিবারের জন্য আনন্দের। সাধারণ আর ১০টি দিনের চেয়ে ভিন্নতর। বালুর দ্বিতীয় সন্তান হুসনা মেহরুবা টুম্পা উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছে। মাতৃহীন সন্তানরা বালুর খুবই প্রিয়। তাই উচ্ছ্বাসটা তাঁর একটু বেশি। নিজ সন্তানের এই সাফল্যগাথার অংশীদার তিনি তাঁর (বালু) মাকে করাতে চান। তাই মাকে মিষ্টি খাওয়ানোর জন্য ইকবালনগরে যান। বালু তাঁর সন্তানদের নিয়ে থাকতেন খুলনা মহানগরীর শান্তিধাম মোড়ের (সাবেক ইসলামপুর রোড) বাড়িতে। ওই বাড়ির নিচতলা ও দোতলায় দৈনিক 'জন্মভূমি' এবং সান্ধ্য দৈনিক 'রাজপথের দাবি'র কার্যালয়। তৃতীয় তলায় তিনি থাকেন। আর মা থাকতেন তাঁদের পুরনো বাড়ি ইকবালনগরে। বালুর অন্য ভাইরাও ওই বাড়িতে থাকেন। তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে বালু মাকে মিষ্টি খাইয়ে ফেরেন। তখন দুপুর ১২টার কিছু বেশি হবে। অফিস তথা বাড়ির তৃতীয় তলা ভবনের নিচে এসে তাঁর প্রাইভেট কারটি থামে। নেমে যায় মেয়ে টুম্পা ও ছোট ছেলে আশিক। বড় ছেলে আসিফ ও বালু নামেন পরে। বালু সবার পেছনে। তাঁরা গেট দিয়ে বাড়ির ভেতর যাচ্ছেন। গেটের মুখেই বিকট শব্দে বোমা বিস্ফোরণ। বোমাটি সরাসরি বালুর কোমরে আঘাত হানে। বোমার স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত হন একটু সামনে এগিয়ে থাকা তাঁর বড় ছেলে আসিফ কবির।
আসিফ কবির ওই দিনের ওই সময়কার বর্ণনা দিয়ে এক জায়গায় লিখেছেন, 'কোনো আশঙ্কা বা সন্দেহ ছাড়াই অবসন্ন স্টেশন ওয়াগনটায় চড়ে আমরা বাড়ির সামনে এসে থেমেছিলাম। তখন তাতানো দুপুর। রাস্তায় লোক-গাড়ি-রিকশা ছিল না তেমন। এ সময় হঠাৎ বোমা নিক্ষেপ করা হয় আমাদের বাবা হুমায়ুন কবির বালুর ওপর। আমি তাঁর কিছুটা দূরে ছিলাম। আমি অনুভব করলাম, একটা ঢিলের মতো কিছু এসে আমার পেছনে পায়ের ওপরের অংশে লাগল। পরে বুঝেছিলাম, ওটা ছিল বোমার অংশ।' বোমার আঘাতে ছয় ফুটেরও বেশি দীর্ঘ বালুর কোমরে ক্ষত তৈরি হয়। মাত্র পাঁচ মাস ১২ দিনের মাথায় খুলনা শহরে আরো একজন পরিচিত সাংবাদিক খুনের শিকার হন।
হত্যা মামলার অসাধারন রায় :
২০০৪ সালের ২৭ জুন আততায়ীদের বোমা হামলায় হুমায়ুন কবির বালু নিহত হন। ২০০৮ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হয়। রায়ে ৭ আসামি বেকসুর খালাস পায়।
২০০৪ সালের ১৫ জানুয়ারি খুন হন সাংবাদিক মানিক সাহা। এর পাঁচ মাস পর ২৭ জুলাই খুন হন সম্পাদক হুমায়ুন কবির বালু।
আরও কয়েকটা নমুনা
মুকুল হত্যার বিচার
কাজ ১৪ বছরেও শেষ হয়নি
১৯৯৮ সালের ৩০ আগস্ট রাত ১০টা ৫ মিনিটের দিকে যশোর শহর থেকে পিয়ারীমোহন রোডের বাড়ি ফেরার পথে চার খাম্বার মোড়ের অদূরে দুষ্কৃতকারীদের ছোঁড়া বোমার আঘাতে প্রাণ হারান যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক রানার পত্রিকার সম্পাদক এমআর সাইফুল আলম মুকুল। এই ঘটনার ১৪ বছর পেরিয়েছে। কিন্তু আজও মামলার কার্যক্রম শেষ হয়নি।
১৫ বছরেও বিচার হয়নি
আলাউদ্দিন হত্যাকাণ্ডের
সাতক্ষীরা থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা স ম আলাউদ্দিন ১৯৯৬ সালের ১৯ জুন নিজ পত্রিকা অফিসে কর্মরত থাকা অবস্থায় দুষ্কৃতকারীরা তাকে গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই স ম নাসির উদ্দিন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এক বছর তদন্ত শেষে ১৯৯৭ সালের ১০ মে সিআইডির খুলনা জোনের এএসপি খন্দকার ইকবাল হোসেন সাতক্ষীরার চিহ্নিত সন্ত্রাসী গডফাদারসহ ১০ জনের নামে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। যদিও বিভিন্ন আইনগত জটিলতা সৃষ্টি করে প্রায় ১৪ বছর চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম উচ্চ আদালতের নির্দেশে বন্ধ ছিল। তবে সম্প্রতি মামলাটির পুনরায় বিচার শুরু হয়েছে এবং বাদীর সাক্ষী সম্পন্ন হয়েছে। তবে মামলার আসামিদের প্রভাব এবং সাক্ষীদের নিরাপত্তার অভাবজনিত কারণে গত কয়েকটি তারিখে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে কোনো সাক্ষী উপস্থাপন করতে পারেনি।
আরও কিছু পরিসংখ্যান:
২০০৪ সালের ২ মার্চ কেরানীগঞ্জে দি নিউ এজের সাংবাদিক আব্দুল লতিফ পাপ্পু নিহত হন;৪. ২০০৪ সালের অক্টোবর মাসে বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক দুর্জয় বাংলার নির্বাহী সম্পাদক দীপাংকর চক্রবর্তী নিজ বাসায় নিহত হন; ২০০৪ সালে আরো খুন হন দৈনিক সংগ্রামের খুলনা প্রতিনিধি বেলাল হোসেন; ২০০৫ সালেল ২৯ মে কুমিলস্নার দৈনিক মুক্তকন্ঠের রির্পোটার গোলাম মাহমুদ নিহত হন; ঠিকাদারী চক্রের বিরম্নদ্ধে লাগাতার রিপোর্ট করে ২০০৫ সালের ৫ নভেম্বর দৈনিক সমকালের ফরিদপুর ব্যূরো প্রতিনিধি গৌতম দাস খুন হন।
রিপোর্টারস উইথ-আউট বর্ডারস এর রিপোর্টে বলা হয়:
The arrival in power of the Bangladesh Nationalist Party (BNP), in early October, led to a serious outburst of violence. জোট সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম তিন মাসে হত্যাসহ ৫০ জন আক্রমণের শিকার হয়।
জোটসরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর দলীয় মদদে মানিক সাহার মতো সাংবাদিকদের হত্যাকাণ্ড বা শাহরিয়ার কবীর, মুনতাসীর মামুন, হুমায়ুন আজাদদের মতো স্বনামধন্য ব্যক্তিদের উপর দমন নিপীড়নের প্রসঙ্গ না এনে তাদের ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম এক মাসে সাংবাদিক নির্যাতনের যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তার একটি খতিয়ান দিচ্ছি। পাঁচ বছরের হিসাব টানলে বড় একটি প্রকাশনা হয়ে যাবে।
২০ অক্টোবর ২০০১: দৈনিক সমাচারের সংবাদদাতা আবদুল ওহাবকে বেদম প্রহার করা হয়। সাতক্ষীরার কলারোয়ায় বাংলার বাণীর মোসলেম আহমেদকে জোট সরকারের নেতাকর্মীরা প্রহার করে এবং পুলিশ প্রতিকারের পরিবর্তে কোন কারণ না দেখিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।
৬ অক্টোবর ২০০১ : প্রথম আলো সংবাদদাতা জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল কর্তৃক প্রহৃত হয়। মাথায় প্রচণ্ড আঘাতের কারণে তার মানসিক সমস্যাও দেখা দেয়। যুগান্তরের সাংবাদিক জাহিদুল ইসলামকে হুমকি দিয়ে সাবধান করে দেয়া হয়।
৭ অক্টোবর ২০০১ : ডেইলি স্টারের সংবাদদাতা আবু আহমেদকে প্রহার করা হয়।
৮ অক্টোবর ২০০১ : বাসস এর সংবাদদাতা স্বপন বসুকে ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মারাত্মকভাবে প্রহার করে, তার দুটি দাঁত ভেঙ্গে দেয়া হয়। এ ঘটনার ছবি তোলার সময় ফটোগ্রাফার জিয়া ইসলাম ও এস.,এম গোর্কিকে প্রহার করে ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়া হয়।
৮ অক্টোবর ২০০১ : দৈনিক যুগান্তরের বরিশাল প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম রবকে আগৌইলঝরা বাজারে চাঁদাবাজি সংশ্লিষ্ট রিপোর্ট লেখার কারণে প্রহার করা হয়। স্থানীয় নেতাদের প্রভাবে প্রশাসন থেকে হুমকি দেয়ার কারণে সে আক্রমণকারীদের চিনেনা বলে বিবৃতি দেয়। পরবর্তীতে সে তার লেখা কলামে ঘটনায় বিএনপির সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করে।
১৬ অক্টোবর ২০০১ : প্রথম আলোর মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি অরূপ রাইকে ছাত্রদল নির্মমভাবে প্রহার করে। স্থানীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম থানায় অভিযোগ দাখিল করলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
২০ অক্টোবর ২০০১: জনকণ্ঠের সাংবাদিক জালাল চৌধুরীর নেতৃত্বে কয়েকজন সাংবাদিক চাঁদপুরের শাহদেবপুরে সংখ্যালঘু নির্যাতনের সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে বিএনপির নেতাকর্মীরা তাদের বন্দি করে নির্যাতন চালায়। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। সাংবাদিক অপহরণকারী ২ বিএনপি নেতাকে গ্রেফতার করা হলেও পরে ছেড়ে দেয়া হয়।
দৈনিক সমাচারের পটুয়াখালী প্রতিনিধির বাসায় আক্রমণ করা হয়।
২২ নভেম্বর ২০০১: সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করায় প্রখ্যাত সাংবাদিক ও মানবাধিকার নেতা শাহরিয়ার কবিরকে গ্রেফতার করে সরকার ন্যাক্কারজনভাবে যে নির্যাতন চালায় তা কোন গণতান্ত্রিক দেশে কল্পনা করা যায় না।
দৈনিক সংবাদের কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি মোখতার হোসেন গোলাপকে অস্ত্রের ব্যবসা নিয়ে রিপোর্ট করায় প্রহার করা হয়। পুলিশ মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়।
২৬ নভেম্বর ২০০১:দৈনিক জনকণ্ঠের হবিগঞ্জ সংবাদদাতা রফিকুল ইসলাম তুহিনকে সংখ্যালঘু নির্যাতনের উপর প্রতিবেদন প্রকাশের কারণে প্রহার করে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। পুলিশ বিএনপির আক্রমণকারীদের গ্রেফতার করলেও পালানোর সুযোগ করে দেয়।
৩ নভেম্বর ২০০১ : আজকের কাগজের ফটোগ্রাফার সোহেল রানাকে চট্টগ্রামে শিবিরের নেতাকর্মীরা প্রহার করে ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়।
সূত্র:
প্রেস ফ্রিডম ওয়াচডগ গ্রুপ মিডিয়াওয়াচ
রিপোর্টারস উইথ-আউট বর্ডারস (জাতিসংঘের UNHCR কর্তৃক প্রকাশিত)
সবশেষে দুইটা জোকস:
হামলাকারীদের গ্রেপ্তার শিগগির: সাহারা খাতুন
“এই ঘটনা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি এবং সাংবাদিকদের ওপর ক্রমবর্ধমান হামলার আরেকটি ন্যক্কারজনক নজির।” - খালেদা জিয়া
খালেদা জিয়া বলেন, “এই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় প্রমাণ করে দেশে আজ আর কোথাও কারো নিরাপত্তা নেই।”