somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গান নিয়ে হযবরল

১৭ ই জুলাই, ২০০৯ রাত ১১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাইস্কুলে ভর্তি হবার পর প্রথম বার্ষিক ক্রীড়াপ্রতিযোগিতার দিন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন ইভেন্টের প্রতিযোগিতা হলো। এরপর প্যান্ডেলের সামনে ছেলেমেয়েরা অর্ধ চন্দ্রাকারে ঘাসের উপর বসে পড়লো- একদিকে ছেলেরা, আরেক পাশে মেয়েরা। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শুরু হবে। তার আগে গান ও কবিতা।

দশম শ্রেণীর যে মেয়েটি প্রথম গানটা গাইল, আমি আজও তার সুরের মাধুর্য ভুলতে পারি নি। সে গেয়েছিল-

ওরে ও ও পরদেশী
ও ও পরদেশী
যাবার আগে দোহাই লাগে একবার ফিরা চাও
আবার তুমি আসবে ফিরে আমায় কথা দাও

এতো সুন্দর গলায় আমাদের স্কুলের মেয়েরা গান গাইতে পারে! আমি খুব বিস্মিত হয়েছিলাম। স্কুলে মেয়েদের ছিল সকালের শিফ্‌ট, আর ছেলেদের মধ্যাহ্নের শিফ্‌ট। মেয়েদের ক্লাস ছুটি হয় যখন, তখন সচরাচর আমরা সড়কে স্কুলমুখি থাকি। দশম শ্রেণীর ঐ আপুকে কখনো রাস্তায় দেখে ফেললে আমি তার দিকে তাকিয়ে থাকতাম; আপু আমাদের অতিক্রম করে চলে গেলে বারবার পেছন ফিরে আপুকে দেখতাম; আর ভাবতাম, কি সুন্দর গলায় গান গায় আপু। অমন একটা আপুর জন্য আমার খুব মন কাঁদতো।

তারপর ঐ গানটা মাইকে অনেক শুনেছি। রেডিওতে শুনেছি। এটা একটা ছায়াছবির গান। আসামী হাজির। কণ্ঠ সাবিনা ইয়াসমিন। ছবিটা দেখার খুব ইচ্ছে ছিল, কিন্ত সুযোগ হয় নি। তবে আজও এ গানটা যখন শুনি, সেই আপুর কথা মনে পড়ে যায়। আপুর নাম জানি না, ঠিকানা জানি না। আপুকে চিনি না।

সাবিনা ইয়াসমিনের গানের অরিজিনাল রেকর্ড আমি খুঁজছি বহুদিন ধরে। একি সোনার আলোয়, অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান, গীতিময় সেইদিন, শুধু গান গেয়ে পরিচয়, আমি আছি থাকবো- এই স্বর্ণসঙ্গীতমালা কোথাও পাওয়া যায় না; পাওয়া যায় রিরেকর্ডেড গানগুলো, যাতে অরিজিনাল সিঙিঙের মাধুর্য নাই বললেই চলে।

হাইস্কুলের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মেয়েরা কয়েকটি রবীন্দ্র সঙ্গীত খুব বেশি গাইত:

আমার সকল দুঃখের প্রদীপ জ্বেলে দিবস গেলে
না সজনি না, জানি জানি সে আসিবে না
যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে
আহা আজি এ বসন্তে এতো ফুল ফোটে
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে

ভারতীয় বাংলা গান ছিল ছেলেদের খুব প্রিয়। জগন্ময় মিত্রের 'তুমি আজ কতো দূরে' তো ছিল কমন। এই সিরিজের সবগুলো গানই গাইত তারা। একটা ছেলে গাইত 'মা, আমার সাধ না মিটিল, আশা না পুরিল' গানটা খুব সুন্দর করে। আরেকটা ছেলে গাইত হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান। আর আব্দুল আলীমের গানগুলো অবিকল সুরে গাইত ছোট্ট একটা ছেলে।

যখন দশম শ্রেণীতে, তখন হিরো টাইপের এক বাংলা শিক্ষক এলেন। তাঁর চেহারা দেখে মেয়েরা প্রথম দিনেই মুগ্ধ ও অভিভূত। স্যার জানালেন তিনি গানও গাইতে পারেন। মেয়েরা আরো কৌতূহলী হয়ে পড়ে স্যারের প্রতি। তার কয়েকদিন পর রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী। বালক-বালিকারা একে একে রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইছিল, স্যার প্রত্যেকের গান শুনে বিদগ্ধ মন্তব্য ঝাড়ছিলেন। সবশেষে স্যারের গান গাওয়ার পালা। তুমুল করতালি যোগে আমরা স্যারকে মঞ্চে স্বাগত জানালাম। স্যার গাইলেন :

আমারও পরাণও যাহা চায়
তুমি তাই তুমি তাই গো

এ গান গেয়ে স্যার আশানুরূপ আসর জমাতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু স্কুল জুড়ে গানটা জনপ্রিয় হয়ে উঠলো। দুষ্টু ছেলেরা মেয়েদের দিকে টিটকিরি ছুঁড়ে দেয় গানের ভাষায় : আমারও পরাণও যাহা চায়। আর দজ্জাল মেয়েগুলো তেড়ে এসে ওদের টেংরি গুঁড়ো করে দেয়।

ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার পর মাস ছয়েক ধরে শিল্পী, লাকী আর স্বপন- এই তিন ভাইবোনকে পড়াই। ওরা দশম, অষ্টম আর ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে। ওদের বড় ভাই লিটন কলেজে আমার এক ক্লাস সিনিয়র এবং আমরা হোস্টেলে এক রুমে থাকতাম। দ্বিতীয় জন মিলটন ঢাকা কলেজেই আমার ক্লাসমেট, তবে আমি সায়েন্স আর ও কমার্সে। তৃতীয় জন লিপি ইন্টারে সেকেন্ড ইয়ার, বদরুন্নেসায় পড়ে। ইন্টারেস্টিং হলো, যাদের টিউটর তাদেরকে পড়ানোর সুযোগ পাই খুব কম। লিটন ভাই ঢাবিতে একাউন্টেন্সি পড়ে। তাকে ম্যাথ বোঝাতে হয়, যেগুলো ইন্টারমিডিয়েট লেভেলের এ্যালজেব্রা। লিপিকে বাংলার নোট করে দিতে হয়, আর ফিজিক্সের অংক। মিলটন এসে ওর প্রেমে ছ্যাঁকা খাওয়ার গল্প জুড়ে দেয়। আসল ছাত্রছাত্রীদের পড়াবার জন্য হাতে বেশি সময় থাকে না।

কি হয়েছিল, আমার কোনো ক্যাসেট প্লেয়ার ছিল না, তবে কয়েকটা নির্বাচিত গানের ক্যাসেট ছিল। এগুলো আমার ভালো লাগা গানের সংগ্রহ। কোথাও গেলে প্রায় সময়েই সাথে করে নিয়ে যাই, যদি কোথাও বাজাবার সুযোগ পেয়ে যাই এই আশায়।

লিটন ভাইদের বাড়িতে বেশি শুনতাম একটা ক্যাসেট। মিলটন বা লিটন ভাই ওটা রেখেও দিত মাঝে মাঝে। একবার ক্যাসেটটা খুঁজে পাওয়া গেলো না ওদের বাসায়। কোথায় গেলো! কোথায় গেলো! সারা বাসা তন্ন তন্ন করে খোঁজা হচ্ছে। লিটন ভাই আর মিলটন ওদের সবার সাথে রাগারাগি শুরু করে দিল। ওদের ভাবখানা এমন- এ বাড়িতে জীবনেও আমি কোনো ক্যাসেট আনি নি।

কিছুদিন পর। ওদের পড়িয়ে ফিরছি। পেছন থেকে ডাক পড়লো : স্যার!
ঘুরে তাকিয়ে দেখি লিপি। সে তার হাত বাড়িয়ে বলে, এই যে আপনার ক্যাসেট। আমার হাতের মুঠোয় ক্যাসেটটা প্রায় ছুঁড়ে দিয়ে সে চলে গেলো।

আজ থেকে প্রায় তেইশ বছর আগের কথা। কী কী গান ছিল সেই ক্যাসেটে তার পুরো তালিকা মনে নেই। তবে নিচের গানের বেশিরভাগই ছিল বলে বিশ্বাস। কারণ, এগুলো বরাবরই আমার প্রিয় গান। আপনারাও শুনতে পারেন ডাউনলোড করে।

আমার মন মানে না

আমার প্রাণের মানুষ

সুন্দর বটে তব অঙ্গ দুখানি

তুমি কি কেবলি ছবি

ডাকবো না ডাকবো না

ঐ মালতীলতা দোলে

তোরা যে যা বলিস ভাই আমার সোনার হরিণ চাই

তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা

এরা সুখের লাগি প্রেম করে

তোমরা হাসিয়া খেলিয়া

পুরনো সেই দিনের কথা

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ দুপুর ২:৪৯
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের সেকাল এবং একালের ঈদ

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৪:১৩



কানাডার আকাশে ঈদের চাঁদ উঠেছে কিনা সেটা খুঁজতে গতকাল সন্ধ্যায় বাসার ছাদে বা খোলা মাঠে ছুটে যাইনি। শৈশবে সরু এই চাঁদটা আকাশে দেখতে পেলেই দেহকোষের সবখানে একটা আনন্দধারা বয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাঁটুতে ব্যথা, তাই সুঁই এ সুতা লাগানো যাচ্ছে না

লিখেছেন অপলক , ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৪:৩৭

শুরুতেই একটা কৌতুক বলি। হাজার হলেও আজ ঈদের দিন। হেসে মনটা একটু হালকা করে নেই।

"কোন এক জায়গায় স্বামী স্ত্রী ঘুরতে বেরিয়ে বাইক এক্সিডেন্ট করে। জ্ঞান ফিরলে স্বামী নিজেকে হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঈদ মোবারক!

লিখেছেন নাহল তরকারি, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:০৪



ঈদ মোবারক!

ঈদ উল ফিতরের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন! এক মাসের সংযম ও আত্মশুদ্ধির পর এসেছে খুশির ঈদ। ঈদ মানেই আনন্দ, ভালোবাসা ও একসঙ্গে থাকার মুহূর্ত। আসুন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্লোবাল ব্রান্ডঃ ডক্টর ইউনুস....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৯

গ্লোবাল ব্রান্ডঃ ডক্টর ইউনুস....

রাজনৈতিক নেতাদের সাথে, ক্ষমতাসীনদের সাথে তাদের কর্মী সমর্থক, অনুগতরা ছবি তুলতে, কোলাকুলি করতে, হাত মেলাতে যায় পদ-পদবী, আনুকূল্য লাভের জন্য, নিজেকে নেতার নজরে আনার জন্য। আজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির ব্যক্তিটি কোন আমলের সুলতান ছিলেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩১ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪১



বাংলাদেশে এবার অভিনব উপায়ে ঈদ উৎসব উদযাপন করা হয়েছে। ঈদ মিছিল, ঈদ মেলা, ঈদ র‍্যালী সহ নানা রকম আয়োজনে ঈদ উৎসব পালন করেছে ঢাকাবাসী। যারা বিভিন্ন কারণে ঢাকা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×