কর্ণেল নকীব আমার বয়োজ্যেস্ঠ বন্ধু। একজন সদাহাস্যোজ্জ্বল মানুষ; প্রাণখোলা, অমায়িক তাঁর আচরণ; সুদর্শন; তাঁর সান্নিধ্যে আসামাত্র যে কেউ মুহূর্তেই তাঁর ভক্ত হয়ে যান- এমন একজন ব্যক্তিত্ব গত বছরের অক্টোবরে একদিন হঠাত আমাকে দেখেই বলে উঠলেন- হেই খলিল, কেমন আছো?....আমি তাঁকে চেনার চেষ্টা করি। তিনি বলেন, চিনতে পারো নাই? আমার নাম কর্নেল নকীব।
কর্ণেল নকীব নামটা শুনেই আমি খুব বিস্মিত ও লজ্জিত হই। এর আগে তাঁর সাথে সর্বশেষ দেখা হয়েছিল ২০০০ সনে। যশোর সেনানিবাসে আমার এক বন্ধুর (আর্মি অফিসার) বাসায় বেড়াতে গেলে তাঁর সাথে দেখা হয়েছিল ১৯৯৯ সনে। এরপর মোট ১০-১২ বার দেখা, আর এর মধ্যেই তিনি আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব হয়ে যান, শুধু তাঁর নিজের গুণেই।
২৫ ফেব্রুয়ারির সকাল। সাড়ে নয়টার মতো হবে। আমার আর্মি অফিসার বন্ধুর ফোন পাই- বিডিআর-এ গণ্ডগোল হচ্ছে রে, নকীব স্যার আটকা পড়েছেন। খবর ভালো না।
আমি তত্ক্ষণাত নকিব ভাইকে রিং করি। তিনি কল রিসিভ করে ফিসফিস করে ৫-৭ শব্দে কী যেন বললেন, কিছুই বুঝলাম না। কিন্তু ক্রমাগত ফায়ারিংয়ের আওয়াজ পাচ্ছিলাম। আমি আতংকিত। তাঁর নিরাপত্তার কথা ভেবেই আর রিং করি না। ঘণ্টা খানেক পর আবার রিং করি। কিন্তু এবার মোবাইল বন্ধ। আবারও করি কিছু পর, আবারও, প্রতি ১০-১৫ মিনিট পরপরই করি। কিন্তু এখনও তাঁর মোবাইল অন হয় নি। তিনি মুক্তিপ্রাপ্তদের দলে নেই। প্রাপ্ত লাশেও তাঁর নাম নেই। এখনও-নিখোঁজ ১৩৭ জনের মধ্যে নিশ্চয়ই তিনি থাকবেন। কেমন আছেন তিনি? জীবিত? মৃত? জানি না। বন্ধুর কাছ থেকে ভাবীর নাম্বার নিলাম। ভাবীকে রিং করি কাল রাত সাড়ে আটটার দিকে। ভাবী তো আনাকে চেনেন না, কিন্তু কল ধরেই কেঁদে উঠলেন- আপনার নকীবের খবর পেয়েছেন? নকীব কোথায়? আমাকে প্লিজ বলেন, নকীব কোথায়? ---এ অবস্থার কোনো সান্ত্বনাবাক্য নেই। আমি কথা বলতে পারছি না, কাঁপা গলায় বললাম, ভাবী, শান্ত থাকার চেষ্টা করুন, নিশ্চয়ই ইনশাল্লাহ ভালো খবর পাবেন। বলেই তড়িঘড়ি কল কেটে দিই।
এই পোস্টটি প্রকাশ করার আগেও আরেকবার নকীব ভাইয়ের মোবাইলে কল দিলাম, যদিই বা ধরেন....এই আশায়, কিন্তু বোবা মোবাই এখনও বোবাই পড়ে আছে।
আপনাদের জন্য মোবাইল নাম্বারটি দিলাম। ০১৭১১৮৮৩৩৯৯। আমি এই নাম্বারে একটা মেসেজ পোস্ট করে রেখেছি, মাঝে মাঝে মেসেজ বক্স চেক করে দেখি ডেলিভারি হয়েছে কিনা; এখনো হয় নি।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ দুপুর ১২:১৬