লাবিবের অদ্ভুত কাণ্ডকীর্তি
ছেলেটা খুব চিকন না অবশ্য। তবে সব বাচ্চার মতোই লাবিবকে নিয়ে সমস্যা- সে খেতে চায় না। খাবারের সময় তাকে জোর করে কোলে নিয়ে খাওখাতে উদ্যত হলেই সে কিছু কমন ডায়লগ ছাড়ে….আব্বুর কাছে খাবো। আমি হয় তখন অফিসে অথবা বাসায় অন্য কাজে ব্যস্ত। এটা লবিবের চালাকি, সময় ক্ষেপনের। আমার কোলে এনে যেই খাওয়াতে যাব, অমনি সে বলে ওঠে- আব্বু কমোড দেন… হাগু করবো…..অথবা, আমার কোলে আসার পর এক লাফে নেমে গিয়ে সে বলে……আমার খিদে লাগে নাই।…….তবু পাইলট আর ঐশীর চেয়ে ওদের আম্মু অনেক গুণ স্বস্তির সাথে লাবিবকে পালন করে আসছে। বড় দুজনের কথা অন্য সময়ে।
পাইলট আর ঐশীর মতো, আপনাদের সবার বাচ্চার মতো লাবিবও কিভাবে যেন কার্টুনের পোকা হয়ে গেছে। খেলতে খেলতে হঠাত টিভির কথা মনে পড়লেই সে টিভির সামনে এসে রিমোট হাতে নিয়ে চ্যানেল ঘোরাতে থাকে। অনেক সময় লাবিব নিজে কার্টুন চ্যানেল বের করতে পারে না; তখন আমাদেরকে বের করে দিতে বলে। আমাদের অন্য কোনো প্রিয় প্রোগ্রাম থাকলে চালাকি করে কার্টুন চ্যানেল না দিয়ে বলি, 'কার্টুন এখন বন্ধ।' আর লাবিবও তার স্বভাবসুলভ বলিষ্ঠতায় সক্রন্দন গলা ফাটিয়ে তার কার্টুন চ্যানেলের জন্য সোচ্চার দাবি জানাতে থাকে এবং কার্টুন চ্যানেল দিলেই তবে 'বিদ্রোহী রণক্লান্ত' শান্ত হয়।
টম এন্ড জেরি কার্টুনের জন্য লাবিব প্রচণ্ড পাগল। ঘড়ির সময়জ্ঞান তার ঠিকই নেই, কিন্তু আশ্চর্য, টম এন্ড জেরি প্রচারের সময় হওয়া মাত্র সে অস্থির হয়ে আমাদের দুই রুমের দুটি টিভির দিকে দৌড়াতে থাকে। পাইলট আর ঐশীর জন্য যে টিভিটা আছে, ওটা ওরা সারাদিন ব্যস্ত রাখে JETIX, Disney Channel আর Cartoon Network-এর জন্য। লাবিব ওদের কাছে পাত্তা না পেলে ছুটে আসে আমাদের টিভিতে। আমরা সচরাচর বাংলা চ্যানেল দেখি। আমার কাছে আবদার নিয়ে আসামাত্র আমি ৬৫টা চ্যানেল ঘুরিয়ে লাবিবের টম এন্ড জেরি খুঁজে বের করি। লাবিব তখন খুশিতে আত্মহারা হয়ে খাটের উপর ভীষণ লাফালাফি করতে থাকে আর বলতে থাকে- আব্বু, টম এন্ড জরি, টম এন্ড জরি..........আম্মু.......টম এন্ড জরি। ওর ভাবখানা এই, হারিয়ে যাওয়া অনেক প্রিয় একটা জিনিস খুঁজে পাওয়া গেছে। আর সবচেয়ে ভালো লাগে 'জেরি'কে 'জরি' উচ্চারণ করাটা। তো, এভাবে লাফাতে লাফাতে কয়েক মিনিট চলে যায়........টম এন্ড জেরির কাণ্ডকারখানা দেখে লাবিব হেসে কুটিকুটি হয়, আর আমরা লাবিবের আনন্দে আটখানা ভাবটা প্রাণভরে উপভোগ করতে থাকি।
ধরুন, লাবিব এক ধেয়ানে টিভি দেখছিল। হঠাত সে বলে উঠলো, আব্বু........কমোড...কমোড।
'হিসু দিবে, আব্বু?'
'না, হাগু করবো।'
হয় লাবিব তখন খাটের উপর কম্বলের নিচে (শীতকালে), অথবা সুদৃশ্য বিছনা চাদরের উপর জোরাসিন দিয়ে বসা, অথবা খাটের পাশে মখমলের ফ্লোরকার্পেটের উপর বসা, কিংবা ধরুন আমার আর লায়লার মাঝখানে সে শোয়া..........তার জন্য নিয়ম একটাই, তার কমোডটাকে খাটের উপর বিছনা চাদরের উপর বসিয়ে দিতে হবে, আর লাবিব সেই কমোডের উপর আরাম করে বসে টিভি দেখবে আর ততোধিক আরামের সাথে পরিত্যাগ-ক্রিয়াদি সম্পন্ন করবে।
মাঝে মাঝে এমন হয়........লাবিব আমাদের কাছেও নেই, পাইলট বা ঐশীর কাছেও নেই........লাবিব.........আব্বু...........আমার আব্বু............
লাবিব দৌড়ে ছুটে আসবে হন্তদন্ত হয়ে.....আমাকে ডেকেছেন আব্বু?
তুমি কোথায়?
লাবিব খুব ছোট্ট শব্দে বলে, ঐখানে।
কী করছিলে?
কিছু না।
লাবিবের 'কিছু না' বলার অর্থ হলো সে একটা না একটা অন্যায় করেছেই। সেই অন্যায়টা অবধারিতভাবে যেটা হয় তা হলো.....ড্রইং রুমের দামী কার্পেটের ঠিক মাঝখানটায় সে হাগু করবে। তারপর টেবিলের উপর থেকে টিসু্ পেপার নেবে, সে নিজে হাতে কার্পেটের উপর থেকে হাগু তুলে টয়লেটে ফেলবে। কখনো কখনো হাগু করে সে-হাগু টয়লেটে ফেলতে ভুলে যায় লাবিব। আমরাও হয়তো জানি না কিছুই। হঠাত বাসায় গেস্ট এলো..... গেস্ট নিয়ে ড্রইং রুমে ঢুকতেই কার্পেটের মাঝখানে একটা ব্যাঙের মতো বসে থাকতে দেখা যায় লাবিবের 'পরিশিষ্ট।'
৩ দিন আগের কথা। আমি টিভি দেখছি। লাবিব ওর মতো খেলছিল, মাঝে মাঝে কিচেনে ওর আম্মুর কাছে যাচ্ছিল, মা-ছেলের টুকটাক কথা শোনা যায়। হঠাত লাবিবের চিত্কার, তার মা তাকে বেদম পিটুনি দিয়েছে।
'কী হলো, মারছো কেন?'
'এই দেখো তোমার পাগলা পুলার কাণ্ড।' দেখি, লাবিবের হাতে একটা পানির বোতল, ভেতরে কী যেন একটা পানীয়।
'কী হয়েছে?'
'তোমার ছেলে ফ্রিজ থেকে ফ্রুটো'র বোতল বের করেছে, সেই ফ্রুটো সব বেসিনে ফেলেছে, তারপর বোতলের মধ্যে হিসু করেছে...........সেই বোতল নিয়ে আসছে আমাকে সাধতে।'
*******************************
গতকাল রাতে লাবিবের আম্মু এটা পড়ে বলে, 'বোতলে তো পানি ছিল না, ছিল লাবিবের জন্য আনা ফ্রুটো। তাই শেষ বাক্যটা পরিমার্জন করা হলো। আরও বলে রাখি, ফ্রুটো বা ফ্রুটিকা লাবিবের খুব প্রিয় পানীয়, যেমন প্রিয় চকোলেট আর চিপস।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৩:১৭