ছোট ছেলের পুরো নাম ফারিহান আল-মাহমুদ লাবিব (আদিব)। ডাকনাম লাবিব। জন্ম ২৮ মে ২০০৬। বড় ছেলের নাম সাইফ আল-মাহমুদ পাইলট (লাজিম)। ডাকনাম পাইলট। পাইলটের জন্ম ২৯ মে ১৯৯৪। আমাদের অনেক ইচ্ছে ছিল লাবিবের জন্মদিন হবে ২৯ মে, তাহলে ২ ভাইয়ের জন্মদিন একই তারিখে পালন করা যেতো। মেয়ের কথাটাও এই ফাঁকে বলে নিই। ওর নাম ফারজানা রহমান নীরা (ঐশী)। ডাকনাম ঐশী। ঐশীর জন্ম ২২ জানুয়ারি ১৯৯৬। আর বলে রাখি, কোনো দুর্ঘটনা নয়, আমাদের পরিকল্পিত সংসার।
কথায় আসি এবার। লাবিব আমাদের সংসারে একটা আশ্চর্য পুতুল কিংবা খেলনার মতো। ১৫ মাস বয়স থেকেই ও আমাদের দিনভর আনন্দের মধ্যে রাখে। পাইলট সাড়ে ৩ বছরের কালে কথা বলতে পারতো মোটামুটি ভালো করে; ঐশী ৩ বছরের কালে। আর লাবিব ১৮ মাস বয়স থেকেই ভাঙা ভাঙা কথা বলতে পারে; এখন দিনভর ওর কথা আর কার্যকলাপে আমরা মেতে থাকি।
৭ মাস বয়স থেকেই লাবিব টিভি বিজ্ঞাপনের পোকা হয়ে যায়। বিজ্ঞাপন শুরু হলে সে গভীর মনোযোগে বিজ্ঞাপন শুনতো ও দেখতো; আর বিজ্ঞাপন শেষ হয়ে যাবার পর মূল প্রোগ্রাম শুরু হওয়ামাত্র সে ঠাঁটিয়ে চিত্কার জুড়ে দিত, তখন চ্যানেল ঘুরিয়ে বিজ্ঞাপনের চ্যানেল দেয়া হতো লাবিবকে।
লাবিবের প্রতিটা কথা ও কাজ আমরা উপভোগ করি। লাবিবকে নিয়ে ঐশী ও পাইলট দিনভর খেলে, পুতুলের মতো; আর লাবিব ওদের অত্যাচারে দিনভরই গলা ফাটিয়ে কাঁদতে থাকে। ওরা দুজন ইচ্ছে করেই ওকে 'জ্বালায়', এই জ্বালানোতেই ওদের আনন্দ। হয় কী, ওরা দুজন যেখানে, অবধারিতভাবে লাবিবও সেখানে; পাইলট আর ঐশী মাঝে মাঝে ইচ্ছে করেই লাবিবকে মারে, আর লাবিব কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে আমার কাছে আসে।
কে মেরেছে?
ও
কে, ভাইয়া?
না, ওরা দুজনে মেরেছে।
কে, ভাইয়া আর আপু?
না, ঐশী মেরেছে আর পাইলট মেরেছে।
না, বলো, ভাইয়া আর আপু মেরেছে।
না, ভাইয়া বলবো না। আপু বলবো না।
মাঝে মাঝে ওর মা ওকে মারে। যথারীতি দৌড়ে আসে আমার কাছে।
কে মেরেছে?
লাবিব ওর আম্মুর দিকে হাত নেড়ে বলে, ...মেরেছে।
কে মেরেছে, আম্মু?
না, মেরেছে.....(আবার ওর আম্মুর দিকে তাকিয়ে)...মেরেছে।
কে, আম্মু?
লায়লা মেরেছে............(ওর আম্মুর নাম)।
আমিই লাবিবের সকল ভরসার স্থল। যে যখন মারে ওকে, মুহূর্তে আমার কাছে ছুটে আসে। আমি মার-খাওয়া জায়গাটুকুতে একটা চুমু খাই, সাথে সাথে লাবিবের ব্যথা চলে যায়, আর সে ঘুড়ির মতো দৌড়ে আবার ঐশী বা পাইলটের কাছে চলে যায়।
মজার কথাটা পাইলট আজ আমাকে বললো। আমি যখন বাসায় না থাকি তখন লাবিব মার খেলে কী হয়.........ওদের মা ওকে মারলে সে পাইলটের কাছে যায়, পাইলট যদি সে সময় ওকে মারে তখন যায় সে ঐশীর কাছে, আর ঐশীও যদি মারে তখন 'অনাথ' লাবিব দেয়ালের কোণায় গিয়ে মুখ লুকিয়ে একা একা কাঁদতে থাকে।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৪:১৭