আয়নার সামনে রোকেয়া। ঠোটে গাঢ় লিপস্টিক,চুল সুন্দর করে কাটা,এখন সাজগোজের কাজে ভীষন ব্যস্ত। কিছুক্ষণ পরেই বেরুতে হবে, নারী আন্দোলনের নেত্রী তিনি প্রত্যেকটা দিনই বেশ ব্যস্ততার সাথে কাটে তার।
যদিও সাজছেন,তবু মেজাজটা আজ বেশ গরম,গতকাল রাতে কলেজ পড়ুয়া ছেলে ইমরান রাত করে ঘরে ফিরেছে,দেখেই বুঝা গিয়েছিল নেশা করেই ঘরে ফিরেছে।রাত গভীর থাকায় তখন ধমক দেন নি।সকালে যে ধমক দেবেন তারও উপায় নেই,বিছানায় পড়ে বেঘুরে ঘুমোচ্ছে।
ইমরানের বাবা রাকিবুল ইসলাম,সবে বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়েছে বের হয়েছে।পেশায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক,নেশায় সাহিত্যিক,পত্রিকায় লেখালেখি করেন,চিন্তাধারা বাম ঘরানার।
তো শুরুতেই ধাক্কা খেলেন,স্ত্রী রোকেয়া ফাল্গুনীর উত্তপ্ত বাক্যবাণ ছুটে আসছে তার দিকে।
‘কেমন বাবা তুমি?ছেলে নেশা করে বাড়ী ফিরে,সে খবর রাখো?তা রাখবে কেন?সারাদিন তো পারো অখাদ্য সব সাহিত্য লিখতে আর পত্রিকায় আজেবাজে সব কলাম লিখতে।ছেলেটা যে অধঃপতনে যাচ্ছে সে ব্যাপারে কি তোমার কোনই দুশ্চিন্তা নেই?
জবাবে রাকিব সাহেবও বলতে লাগলেন,’তুমি তো মা,তোমারই তো খোঁজ রাখা উচিত।তা কি তুমি করছো?পারো তো সারাদিন ঘুরে বেড়াতে আর টিভি চ্যানেলের মালিকদের সাথে রং তামাশা করতে।
কি?কি বললে তুমি? আমি কি তাহলে এখন তোমার অপকর্মগুলো বলা শুরু করবো?যাতে তোমার ছেলে শুনতে পারে।রোকেয়া ফাল্গুনী উত্তেজিত গলায় বলে।
পরক্ষণেই শান্ত গলায় বললো,’তুমি তো জানই টিভি চ্যানেলদের মালিকদের সাথে ওসব না করলে টিভি টক শো তে চান্স পাওয়া যায় না,নারী নেত্রী হওয়া যায় না।তারপরও কেন একই কথা বারবার বলো?
হঠাৎ রোকেয়া ফাল্গুনীর ফোন বেজে উঠে,ওপাশ থেকে ৭১ টিভির পরিচালক,’ম্যাড়াম,আজ নারী মুক্তি ও মাদকাসক্তি থেকে মুক্তির উপায়্ִনিয়ে দু’টি টক শো আছে,আপনাকে উপস্থিত থাকতে হবে তাতে।
রোকেয়া উপস্থিত থাকবে জানিয়ে ফোন রেখে দিল।
এখনই বেরুতে হবে।
যাবার আগে ইমরানের রুম থেকে ঘুরে এলেন,ছেলেটা এখনও ঘুমোচ্ছে,নেশা কাটে নি বোধ হয়।
স্বামীকে কিছু না বলেই গাড়ী নিয়ে বেরিয়ে গেলেন রোকেয়া ফাল্গুনী,সভা-সমাবেশ,গোল টেবিল বৈঠক,টিভিতে টক শো,অনেক কাজ করতে হবে তাকে।বেশ ধকল যাবে সারাদিন,বুঝাই যাচ্ছে।
ইমরান আসলে ঘুমায় নি,জেগে উঠার পর আবার সে লুকিয়ে রাখা ব্যাগ থেকে ইন্জেকশন নিয়ে তা মাংশপেশীতে ইনজেক্ট করলো,কিছুক্ষণ পরেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল ইমরান।
এদিকে বাসায় খাতা কলম নিয়ে বসেছেন রাকিবুল ইসলাম।একটা কলাম লিখছেন,অর্ধেকটা শেষ হয়েছে,বাকী অর্ধেক এখন শেষ করতে হবে,লেখাটা জনকন্ঠ পত্রিকায় যাবে,শিরোনাম,’পর্দাপ্রথাঃনারীর প্রগতিশীলতার পথে প্রধান অন্তরায়।
সুত্র:--
http://blog.pothik.org/ahsanulbd/1184