কিছুদিন আগে স্যামহোয়ার ইন ব্লগে বেশ কিছু ব্লগ এসেছিল ইউটিউব সম্পর্কে। কিভাবে ইউটিউবার হওয়া যায়, কি করলে ইউটিউবে ভিডিওগুলো পপুলার হবে এই সম্পর্কে। তখন থেকে আমারও ইউটিউবার হতে ইচ্ছে করল। এতটুকু পড়ে নিশ্চয়ই ভাবছেন শিরোনামের সাথে আমার লিখার মিল নেই কেন? আসলে কি নিয়ে ভিডিও বানাবো চিন্তা করতে করতে ঠিক করলাম ফটোগ্রাফি নিয়েই ভিডিও বানানো শুরু করবো। আপনারা অনেকেই জানেন আমি শখের ফটোগ্রাফি নামে বেশ কিছু ব্লগ লিখেছিলাম এই ব্লগে নতুন ফটোগ্রাফারদের উদ্দেশ্যে। আমি ঠিক করেছি ফটোগ্রাফি সম্পর্কে ব্লগ লিখা চালিয়ে যাবো। আমার ইউটিউব চ্যানেলেরও নাম দিয়ে দিলাম- ‘শখের ফটোগ্রাফি’। এখন থেকে আমি ঠিক করেছি একটি করে ভিডিও আপলোড করব আর সেই সম্পর্কে ব্লগে লিখবো (আসলে ইউটিউবে আমার ভিডিওগুলো প্রমোট করাই ব্লগ লিখা গুলোর উদ্দেশ্য। ভাগ্য ভাল যে ব্লগের মডারেটররা এটা জানেন না )। বেশির ভাগ ভিডিও হবে পোস্ট প্রসেসিং-এর উপর। যে ভিডিওটি আপলোড করব ব্লগে তা সম্পর্কে একটা ধারণা দিব যাতে ভিডিওটি দেখে এবং ব্লগটি পড়ে আপনারা যারা নতুন ফটোগ্রাফার তারা নতুন কিছু শিখতে পারেন। আশা করি যাদের ধৈর্য্য অনেক অনেক অনেক বেশি তারা আমার ব্লগ গুলো পড়বেন, মন্তব্য করবেন, আমার ভিডিও দেখবেন, প্রয়োজনে ইউটিউবে কমেন্ট করবেন, কিভাবে ভিডিওগুলো ভাল করা যায় সে সম্পর্কে সাজেসন দিবেন এবং অবশ্যই সাবস্ক্রাইব করবেন। আর যাদের ধৈর্য্য কম তারা আমার ব্লগগুলো না পড়ে সরাসরি ডিভিওতে চলে যাবেন এবং অবশ্যই সাবস্ক্রাইব করবেন। ইউটিউবে আমার প্রথম ভিডিওটি বানিয়েছি এক্সপোজারের বেসিক নিয়ে । আপনারা ভিডিওটি দেখতে পারেন এখানে
আপনারা উপরের ছবিটি নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন। ছবিটির বাম পাশের অংশ কোন রকম পোস্ট প্রসেসিং ছাড়া এবং ডান পাশের অংশ পোস্ট প্রসেসিং এর পরের অবস্থা। আপনাদের সুবিধার জন্য আমি ছবিদুটো আবারো দিলাম।
ক্যামেরায় তোলা ছবি
পোস্ট প্রসেসিং এর পর
নিশ্চয়ই দেখতে পারছেন যে পোস্ট প্রসেসিং-এর পর ছবিটি অনেক সুন্দর হয়েছে। আপনারা যদি আমার ব্লগগুলো এবং ভিডিও গুলো দেখেন, তাহলে আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, এই সোনার রঙ সারা জীবনেও উঠবে না। প্রতিটি চেইন কোম্পানির প্রচারের জন্য মাত্র দশ টাকা, দশ টাকা, দশ টাকা। থুক্কু কি বলতে কি বলি । মানে বলতে চাচ্ছি আপনারা যদি আমার সাথে থাকেন, আমার বিশ্বাস অবশ্যই এর থেকেও সুন্দর ফটোগ্রাফি আপনারা করতে পারবেন।
ফটোগ্রাফির একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল পোস্ট প্রসেসিং। এর মানে হল ছবিটি তোলার পর ছবির কিছু জিনিস অ্যাডজাস্ট করে ছবিটিকে সুন্দর করে তোলা। অনেকে মনে করেন পোস্ট প্রসেসিং করলে তো ছবি সুন্দর হবেই, এটা করলে আর ফটোগ্রাফি করার কি দরকার। আসলে মনে রাখতে হবে ক্যামেরার কিছু সীমা আছে। আপনার কাছে যত ভাল ক্যামেরা থাকুকই না কেন, আপনি খালি চোখে যা দেখছেন তা ক্যামেরায় বন্দি করা সম্ভব না। কিন্তু ছবি তোলার পর আমরা খালি চোখে যা দেখি তার কাছাকাছি ছবিটাকে নিয়ে আসাটাই পোস্ট প্রসেসিং-এর উদ্দেশ্য। “ফটোসপড” বলে একটা কথা প্রচলিত আছে। আপনি যদি একটা খুব সুন্দর দৃশ্যের ছবি তোলেন কিন্তু সেদিন আকাশটা মেঘলা থাকায় ছবিতে আকাশটা সুন্দর আসেনি। আপনি নেট থেকে একটি সুন্দর আকাশের ছবি ডাউনলোড করে আপনার ছবিতে জুড়ে দিলেন। এধরণের ব্যাপারকে আমরা ফটোসপড ছবি বলে থাকি। এটা কিন্তু পোস্ট প্রসেসিং না। এটাকে একধরনের চুরি বা গলা কাটা ছবিও বলতে পারেন।
পোস্ট প্রসেসিং এর কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই। আপনার ছবির উপর নির্ভর করেই আপনি প্রতিটি ছবির পোস্ট প্রসেসিং করবেন। একজন ফটোগ্রাফার কিন্তু পোস্ট প্রসেসিং-এই তার শৈল্পিক মনের পরিচয় দিয়ে থাকেন। আপনি আপনার তোলা ছবিটি এই ক্ষেত্রে যেকোন অবস্থায় নিয়ে যেতে পারেন। এটা একান্তই আপনার রুচির উপর নির্ভর করবে। তবে পোস্ট প্রসেসিং-এর কিছু ধাপ আছে। আমি ঠিক করেছি প্রতিটি ধাপ নিয়ে একটি করে পোস্ট দিব। আজকের পোস্টটি তাই হোয়াইট ব্যালান্স নিয়ে।
হোয়াইট ব্যালান্সঃ
কোন ছবির রঙ নির্ভর করে আলোর ধরণের উপর। আমরা যদি কোন সাদা কাগজকে ফিলিপস ১০০ ওয়াটের একটা বাল্বের আলোতে দেখি তা হলে দেখব কাগজটা কিছুটা হলদে দেখাচ্ছে। কিন্তু আমরা পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে জানি যে কাগজটি আসলে সাদা কিন্তু আলোটি হলুদ বলে একে হলদে দেখাচ্ছে। ক্যামেরা কিন্তু এই ব্যাপারটি চিন্তা করতে পারেনা। সুতরাং আপনি যদি এই বাল্বের আলোতে ছবি তুলেন তাহলে ছবিটিতে সাদা কাগজকে সে হলুদ রঙ হিসেবে নিবে। হলুদ রঙের কোন জিনিসকে সে কমলা হিসেবে নিবে। কমলা রঙের কিছুকে সে লাল হিসেবে নিবে। এভাবে পুরো ছবিতেই একটা হলুদ ভাব এসে যাবে। কিন্তু আমরা যদি ক্যামেরার সেটিংস-এ গিয়ে বলে দেই এখন আলোর উৎস হচ্ছে একটা টাংস্ট্যং বাল্ব, তাহলে ক্যামেরা সাদা রঙের কাগজটিকে সাদা হিসেবেই নিবে। তখন আর ছবিটি হলদে না হয়ে সঠিক রঙের হবে। এই ব্যাপারটিকেই হোয়াইট ব্যালান্স বলা হয়।
ছবিতে হোয়াইট ব্যালান্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ হচ্ছে হোয়াইট ব্যালান্সের উপর নির্ভর করেই কিন্তু ছবির অন্যান্য রঙ ঠিক করা হয়। আরো ভাল ভাবে বলতে গেলে আপনি যখন কম্পিউটারকে কোন ছবির সাদা, কালো আর ছাই এই তিনটি রঙ চিনাবেন, তখনই ছবিটি সঠিক রঙ্গে আসবে।
ছবি তোলার সময় আপনি আলোর উৎস দেখে দেখে ক্যামেরার হোয়াইট ব্যালান্স ঠিক করে নিবেন। আধুনিক ক্যামেরাগুলোতে আটো হোয়াইট ব্যালান্স দিয়ে রাখলে ক্যামেরা প্রায় নির্ভুল ছবি তুলে।কিন্তু কখনো কখনো আপনি সেটিংস ঠিক করে নেওয়ার কথা ভুলে যেতে পারেন। অথবা ঠিক করে নিলেও অনেক সময় দেখা যায় ছবিটিতে হোয়াইট ব্যালান্স ঠিক হয়নি। তখন পোস্ট প্রসেসিং করে আপনি ছবির হোয়াইট ব্যালান্স ঠিক করে নিতে পারেন। আপনি যদি raw ফরম্যাটে ছবি তুলেন তাহলে আপনি সহজেই ছবির হোয়াইট ব্যালান্স ঠিক করে নিতে পারবেন। ফটোশপে raw ফরম্যাটের ছবি খোলার সময় একটা প্লাগ ইন ব্যবহৃত হয়। এই প্লাগ ইন হল Adobe camera raw । সেখানে হোয়াইট ব্যালান্স ঠিক করার অপশন আছে। আপনি শুধু অপশনটি ক্লিক করবেন। কিন্তু আপনি যদি JPEG ফরম্যাটে ছবি তুলেন তাহলে কিন্তু আপনি হয়াইট ব্যালান্স ঠিক করে নিতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে আপনাকে হোয়াইট ব্যালান্স কম্পেন্সেট বা অ্যাডজাস্ট করে নিতে হয়।
ফটোসপে কিভাবে হোয়াইট ব্যালান্স অ্যাডজাস্ট করবেন তা আমার এই ভিডিওটি দেখে শিখে নিতে পারেন।
দেখলেন তো, হোয়াইট ব্যালান্স অ্যাডজাস্ট করা কত সহজ। অধিকাংশ লোক ফটোসপ ব্যবহার করেন বলে আমি প্রথম ভিডিওগুলো ফটোসপের উপর বানাবো বলে ঠিক করেছি। কিন্তু পরবর্তীতে অন্যান্য যে ফটো এডিটিং সফটওয়্যার আমি ব্যবহার করি তার উপর ভিডিও বানানো এবং ব্লগ লিখার ইচ্ছে আছে। আশা করি আপনারা আমার সাথেই থাকবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৬:১২