ছোটবেলায় যখন ষড়ঋতুর রচনা লিখতাম তখন ভূমিকার পর প্রতিটি ঋতুর নাম লিখে সে ঋতুর বর্ণনা দিতাম। যেমন গ্রীষ্ম ঋতুর বর্ণনায় থাকতো আম, কাঁঠালের কথা, বর্ষায় থাকতো বৃষ্টির কথা। তেমনি হেমন্তে থাকতো পাকা ধানের কথা, নতুন চালের কথা। হেমন্তের সাথে আমার পরিচিয় ততটুকুই। শহরের ছেলে হলেও প্রায় প্রতি শুক্রবারে আমরা গ্রামের বাড়ি যেতাম। আমাদের গ্রামের বাড়ি ছিল কেরানীগঞ্জে। সুতরাং প্রতি সপ্তাহে যাওয়াটা মোটেও কঠিন ছিলনা। আমি যে সময়ের কথা বলছি সেটা প্রায় ২০-২২ বছর আগের কথা। তখন কেরানীগঞ্জে আমাদের দেশের বাড়ি ছিল পুরোটাই গ্রাম। শহরের দালান কোঠা, গাড়ি, নিউ মার্কেট, নীলক্ষেতের সাথে যেমন পরিচয় ছিল ঠিক তেমনি ধানের ক্ষেত, খরের গাঁদা বা হাস মুরগী। কচুরীপানা, পোনা মাছের সাথেও আমার পরিচয় ছিল। যে কথা বলছিলাম- হেমন্ত বলতে আসলে তখন আমার মাথায় আলাদা করে কোন ছবি ভেসে উঠতোনা। ছোট বেলার দুরন্ত শৈশবের সাথে আসলে ঋতুর সৌন্দর্য ঠিক যেতনা। হেমন্তের বা ইংরেজি অটামের সাথে আমার পরিচয় দেশের বাইরে এসে। জাপানে অটামে কিছু কিছু গাছের পাতা সবুজ রঙ পালটে হলুদ, কমলা, লাল, খয়েরি সহ হরেক রঙ্গে পরিবর্তীত হয়। তবে গাছের এই পরিবর্তীত রঙ্গিন পাতা খুব কম সময়ের জন্য থাকে। এরপর এই পাতাগুলো ঝরে যায়। চলে আসে শীত।
জাপানে খুব ঘটা করে এই রঙ্গিন পাতা দেখা হয়। অনেকটা উৎসবের মত করে। কিছু কিছু জায়গা এই লাল পাতার জন্য বিখ্যাত যেমন, কিয়োটো, নারা, ওসাকা। গাছের পাতা পরিবর্তন হয় উত্তর থেকে। ধীরে ধীরে দক্ষিণে যেতে থাকে। সাধারণত সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত এই লাল পাতা দেখা যায়। সেপ্টেম্বরের শেষে উত্তরের হোক্কাইডো, ফুকুশিমা, নাগানো, অক্টোবরে শিজুওকা, ইয়ামানাশি হয়ে নভেম্বরে কিয়োটো, ওসাকা, কুমামোতোতে লাল পাতা দেখা যায়। লাল পাতা দেখার এই উৎসবকে জাপানে মোমিজি বলা হয়। আমাদের এখানে এখন লাল পাতার সময় যাচ্ছে। তাই কিছু ছবি তুলেছি।
এছাড়াও এখানকার পার্কে প্রায়ই কোন না কোন অনুষ্ঠান হয়। একদিন বউ বাচ্চা নিয়ে পার্কে ঘুরতে গিয়ে দেখি উৎসব হচ্ছে। একটা স্টেজে মেয়েরা ওয়েস্টার্ণ নাচ নাচ্ছে। আমিও পটাপট কিছু ছবি তুলে ফেললাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:১১