যখন প্রথম ক্যামেরা কিনি তখন আমি ক্যামেরা আটোতে রেখে ক্লিক করলেই আমার ছবি তোলা শেষ হয়ে যেত। তোলার পর যখন কম্পিউটারে নিয়ে ছবি দেখতাম তখন আকাশ থেকে পড়তাম। ছবিটা একদমই সাধারণ সাদা মাটা একটা ছবি হত। কিন্তু নেট-এ যখন অন্যের তোলা ছবি দেখতাম তখন চিন্তা করতাম নিশ্চয়ই আমার ক্যামেরাটা কম দামী বলে এমন ছবি উঠে। বাকিদেরটা মনে হয় অনেক দামী ক্যামেরা। তারপর যখন আমার ক্যামেরার মডেল দিয়ে স্যাম্পল ছবি নেট-এ খোঁজা শুরু করলাম তখন দেখি একই ক্যামেরায় তোলা ছবি, কিন্তু স্যাম্পল ছবিগুলো খুব সুন্দর, ঝকঝকে তকতকে, আমারগুলো সেই একই সাদা মাটা। এবার চিন্তা করলাম নিশ্চয়ই লেন্সটা দামী। তাই ওরকম ছবি উঠেছে।
আসলে যে কথাটি বলতে চাচ্ছি তা হল ক্যামেরার দোষ দিয়ে লাভ নেই। যে কোন ক্যামেরা দিয়েই একজন ভাল ফটোগ্রাফার খুব সুন্দর ছবি তুলতে পারে। কারণটা হল ফটোগ্রাফির টেকনিক। এরপর ইউটিউবে দেখা শুরু করলাম বিভিন্ন মানুষের ফটোগ্রাফির টেকনিক। এভাবে দেখতে দেখতে একজনের খোঁজ পেলাম, যাকে দেখে ফটোগ্রাফির শখটা আমার মাথায় পুরোপুরি ঢুকে গেল। তিনি হলেন ইলায়া লোকার্ডি।
ইলায়া লোকার্ডি হলেন একজন প্রফেসনাল ট্রাভেল ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফার, ফুজি ফিল্মের গ্লোবাল এম্বেসেডর, লেখক এবং বক্তা। ২০১২ সাল থেকে তিনি তাঁর স্ত্রী সহ কোন স্থায়ী বাড়িঘর ছাড়াই ১০০% ভাসমান জীবন যাপন করছেন। তিনি এক দেশ থেকে আরেক দেশে ঘুরে বেরান এবং ছবি তুলেন।
তাঁর ফটোগ্রাফির শুরুর দিকের ঘটনাটা খুব মজার। ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি একজন পোস্ট প্রোডাকশন এবং মোসন ডিজাইনার হিসেবে কাজ করতেন। ব্যাংক থেকে টাকা লোন করে তিনি একটি বাড়ি কেনেন। কিন্তু দিন দিন ঋণের টাকা ঠিক মত শোধ করতে না পেরে তিনি আরো বড় ঋণের বোঝায় পরতে লাগলেন। শেষে তিনি হাল ছেড়ে দিয়ে বাড়ি বিক্রি করে দেন। তিনি তাঁর কাজ ছেড়ে দিয়ে সেন্ট্রাল ফ্লোরিডার একটা সমুদ্র সৈকতে নতুন করে জীবন শুরু করেন। পরবর্তী একবছর তিনি খুব সাধারণ জীবন যাপন করেছেন। খুব বেশি টাকা পয়সা কামাননি এবং প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কিছু করারও চেষ্টা করেননি। কিন্তু একবছর পর তিনি নিজের ভিতর থেকেই আবার ফটোগ্রাফির প্রতি আগ্রহ বোধ করেন। তিনি তাঁর পরিবারের সাথে দেখা করতে ইটালীতে যান। সেখানে তিনি ছবি তোলা শুরু করেন। এরপর সিদ্ধান্ত নেন যে, তিনি ভ্রমণ করবেন এবং ছবি তুলবেন। যদিও ২০০৯ থেকে তিনি বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমন করতে থাকেন এবং ছবি তুলতে থাকেন, কিন্তু তখনও ফ্লোরিডাতে তাদের ছোট্ট বাসাটা থেকে যায়। এরপর ২০১২ সালে তিনি তার স্থায়ী যা কিছু ছিল সব বিক্রি করে দেন এবং এখন পর্যন্ত তিনি কোন স্থায়ী বাসাবাড়ি ছাড়া ভাসমান জীবন যাপন করছেন। এপর্যন্ত তিনি ৫৫ টি দেশে ঘুরে বেরিয়েছেন, ৬৫০ বার বিমানে চড়েছেন এবং ১০ লক্ষ্য মাইল পাড়ি দিয়েছেন।
তাঁর ফটোগ্রাফির টেকনিক অন্যান্যদের থেকে একটু ভিন্ন। তিনি শুধুমাত্র ল্যান্ডস্কেপ ছবি তুলেন। কিন্তু এটাই তার ভিন্নতা নয়। পরিস্কার করে বলতে গেলে তিনি সময়ের ছবি তুলেন। তিনি একটি নির্দিষ্ট সময়ে ল্যান্ডস্কেপের ছবি তুলেন। তিনি আগে থেকেই চিন্তা করে রাখেন কখন ছবিটা তুললে ছবিটা দেখতে খুব সুন্দর হবে। কখনো কখনো তিনি একই ছবি বিভিন্ন সময়ে তুলে তা জোড়া দেন। যেমন ব্লু আওয়ারে একবার ছবি তুলেন (ফটোগ্রাফির ভাষায় ব্লু আওয়ার বলে একটা সময় আছে। সূর্য ওঠার ঠিক আগে আগে এবং ডোবার ঠিক পরপর পুরো আকাশটা নীল হয়ে যায়। এই সময়টাকে ব্লু আওয়ার বলে) আবার যখন বাড়িঘরে বাতি জ্বলে উঠে তখন একবার তুলেন। এরপর এই দুই সময়ের ছবিকে পরবর্তীতে কম্পিউটারে পোস্ট প্রসেসিং-এর মাধ্যমে এক করেন। এটা আসলে তাঁর নিজস্ব একটা টেকনিক।
কখনো কখনো একটি ছবি তুলার জন্য তিনি সেখানে পাঁচ দিন পর্যন্তও টানা অপেক্ষা করেছেন। প্রথম দিনে সেই বিশেষ মূহুর্তে ছবি তুলে মন মত না হলে তিনি পরদিন আবার ঠিক একই জায়গায় এসে বসে থাকতেন। এভাবে পঞ্চম দিনে তিনি ছবি তুলে সন্তুষ্ট হয়েছেন। কখনো কখনো সারা রাত বসে থেকে সূর্য ওঠার সময় ছবি তুলেছেন।
তাঁর তোলা কিছু ছবি দেখুন (আসলে সব ছবি দেওয়া সম্ভব না। কেউ সব ছবি দেখতে চাইলে তার ফ্লিকার একাউন্টে যেতে পারেন)
Winds of Inspiration (Japan)
Clarity (Hong Kong)
Beyond Kotor Bay (Montenegro)
Song Of The Sea || Vernazza Cinque Terre (Italy)
Sleeping Giants || Mt Bromo (Indonesia)
Radiant Flow (Iceland)
The Forestâs Awakening (Japan)
Beyond Borobudur (Indonesia)
Winters Grasp (Iceland)
Eternity (Italy)
The Colosseum || Whispers From The Past (Italy)
Time Stands Still - Petra By Night (Jordan)
Tempest (Dubai)
Urban Density (Hong Kong)
Belly Of The Beast (Sweden)
Double Rainbow over Surfers Paradise (Australia)
Beyond The Rialto - (Italy)
Dance of Light - (Singapore)
Sydney Gold - (Australia)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৩৫