দূর থেকে অনেকগুলো মানুষের কথা শুনতে পেলাম। সবাই কথা বলছে কিন্তু কেউ এগিয়ে আসছে না। কি ব্যাপার? ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বোধ হয়। না, মনে পড়েছে, আমি রাস্তা পার হচ্ছিলাম। বলা নেই, কওয়া নেই, কোথা থেকে একটি ৭ নম্বর বাস প্রায় আমার উপর উঠে যাচ্ছিল। আমার কি অ্যাক্সিডেন্ট হল নাকি? মরে গেলাম? শরীরটা খুবই দূর্বল লাগছে। ভীষণ ঘুম পাচ্ছে...
অ্যাম্বুলেন্সের শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। এবার কিছুমানুষ আমার কাছাকাছি এসে কথা বলছে। কারো কথাই স্পষ্ট বোঝা গেলনা। আমাকে নিয়ে টানা হ্যাঁচড়া করছে। বুঝতে পেরেছি। আমাকে স্টেচারে শুইয়ে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠানো হচ্ছে। আমার ফোনটা কোথায়? বাসায় একটা ফোন করতে হবে। আব্বাকে খবর দিতে হবে। কেউ ফোন করছেনা কেন? আমার ফোনকি মিসিং? আবছা ভাবে চোখ খোলার চেষ্টা করলাম। কিন্তু চোখ একচুল পরিমান খুলতে পারলাম না। ভীষণ দূর্বল লাগছে...
আবার আমার চেতন ফিরে এল। কোথায় আছি বুঝতে পারছিনা। মনে হচ্ছে কোন হাসপাতালে এসে পৌঁচেছি। আমাকে নিয়ে আবার টানা হ্যাঁচরা শুরু হল। এবার বেশ বুঝতে পারলাম আমাকে স্ট্রেচার সহ ঠেলে দ্রুত কোথাও নিয়ে যাওয়া হচ্চে। অনেক মানুষের শব্দ শুনতে পারছি। ধীরে ধীরে শব্দ কমে এল। কোন নির্জন একটা রুমে নিয়ে রাখা হল আমাকে। হঠাৎ কেউ একজন আমার খুব কাছে এল। আমার হাতের কবজি ধরে রাখলো। মনে হয় পালস মাপছে। হঠাৎ আমার বাম চোখের পাতা আঙুল দিয়ে খুলে ধরল এবং তীব্র আলোয় আমি ক্ষনিকের জন্য অন্ধ হয়ে গেলাম। “নাহ, বেঁচে নেই, সাইফুল ভাই, ডেড বডি নিয়ে যান, মর্গে রাখেন। পরিচয় জানা গেছে?” চমকে উঠি আমি। কি বলে এসব। আরে আমি তো বেঁচে আছি। চিৎকার দিয়ে উঠে বসতে চাইলাম। কিন্তু একচুলও নড়তে পারলাম না। আবারো ঘুম ঘুম লাগছে......
হঠাৎ ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। ওহ, কি ভয়ংকর একটা স্বপ্ন। এমন স্বপ্ন মানুষ দেখে? কটা বাজে এখন? ভীষণ ক্ষিদে পেয়েছে। অভ্যাস মত বালিশের নিচে হাত বাড়ালাম ফোনের জন্য। কিন্তু আমিতো ঠিক বালিশের উপর শুয়ে নেই। একফোঁটা আলো নেই কোথাও। আমার বিছানায় তো খুব আবছা ভাবে আলো আসে পাশের রাস্তা থেকে। এখন কোন আলো নেই কেন? নিজেকে কেমন উলঙ্গ লাগছে। চারপাশে হাতড়াতে শুরু করলাম। আমার চারপাশেই নরম কিন্তু টান টান কাপড় হাতে লাগলো। আর মাটির সোঁদা গন্ধ। ধীরে ধীরে একটা ভাবনা মাথায় উঁকি দিচ্ছে। কিন্তু ভাবনাটা ভাবার মত সাহস আমার হলনা।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:২৫