somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কন্যাসন্তান গর্ভে ধারণ করায় স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা ও আমাদের আইন

১২ ই জুলাই, ২০১২ দুপুর ১২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কন্যাসন্তান গর্ভে ধারণ করায় স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা ও আমাদের আইন
অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক


নরসিংদীর নারায়ণপুর ইউনিয়নের জংঙ্গয়া গ্রামের একটি অমানবিক ঘটনা। পড়েই চোখ আটকে গেল। জোনাকি বেগমের ৪ মেয়ে। সন্তানসম্ভবা জোনাকি বেগমের ৫ম সন্তানও মেয়ে হবে এ খবরে তার স্বামী তাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছেন।

প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, সংসার জীবনে জোনাকির কোলজুড়ে জন্ম নেয় ৪টি মেয়ে। ছেলে সন্তানের আশায় বুক বাঁধেন জোনাকির স্বামী। এরই মধ্যে জোনাকি আবারও অন্তঃসত্ত্বা হন। শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করতে ২৭ জুন বুধবার জোনাকির আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়। এ সময় তার স্বামী আ. রহমান জানতে পারেন যে এবারও তার মেয়ে হবে। এর পর ওই দিন বাড়ি এসে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে পাষ- আ. রহমান জোনাকিকে হাতুড়ী দিয়ে পিটিয়ে ও ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করেন। হত্যার পর এটিকে আত্মহত্যা বলে চালানোর জন্য লাশের গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলিয়ে রাখেন।

কন্যাসন্তান গর্ভে ধারণ করায় কোনো গৃহবধূকে হত্যা করা হয়েছে কিংবা অন্তঃসত্ত্বার আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে কন্যাসন্তান হওয়ার কথা জানতে পেরে পাষ- স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা মেয়েটিকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে কিংবা শশুর শাশুড়ীর আদেশে বারবার নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে কন্যাসন্তানের ভ্রূণ- এমন সংবাদ আমাদের দেশে সংবাদপত্রের পাতা খুললেই চোখে পড়ে।
সমাজের পুরষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং কিছু চিকিৎসকের অনৈতিক আচরণের কারণে দেশে অহরহ ঘটছে এমন পৈশাচিক ঘটনা। ধর্মীয় টানাপড়েন এবং লজ্জাবোধের কারণে অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত নারীরা এ অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারছেন না। অথচ যদি চিকিৎসকরা নৈতিকভাবে দৃঢ় থেকে আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে কন্যাসন্তান হওয়ার বিষয়টি রোগীর অভিভাবকের কাছে প্রকাশ না করতেন তাহলে হাজার হাজার কন্যাশিশুর ভ্রূণ রক্ষা করা সম্ভব হতো।

চীন, জাপানসহ উন্নত বিশ্বের বেশ কিছু দেশে জন্মের আগে গর্ভস্থ শিশুটি মেয়ে না ছেলে এ তথ্য প্রকাশে সনোলজিস্টদের প্রতি বিশেষ বিধিনিষেধ থাকলেও বাংলাদেশে সে ধরনের কোনো নিয়ম মানা হচ্ছে না। বরং কত কম সময়ের মধ্যে শিশুটির লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করা যায়, এ নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমেছেন আমাদের সনোলজিস্টরা। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও দক্ষতার অভাবে বিভ্রান্তিকর রিপোর্ট দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

উচ্চবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত পর্যন্ত সবাই পুত্রশিশুর আশায় কন্যাশিশুর ভ্রূণ নষ্ট করে ফেলছে। ভারতে আইন করে বিষয়টি নিষেধ করা হয়েছে। আমাদের দেশে এ ব্যাপারে কোনো আইন নেই। এমনকি কে কোথায় কীভাবে এসব কাজ করছে সে ব্যাপারেও কোনো মনিটরিং ও সার্ভে নেই। `যেহেতু আমাদের দেশে গর্ভপাত ধর্মীয়ভাবে নিষিদ্ধ, সেহেতু এখানে বিষয়টি সেভাবে প্রকাশিত হচ্ছে না। কিন্তু মেটারনিটি ক্লিনিকগুলোয় হরহামেশাই গর্ভপাতের ঘটনা ঘটছে এবং গর্ভপাতের ফলে অনেক মায়ের মৃত্যুও হচ্ছে।

বাংলাদেশ দন্ডবিধি আইনের ৩১২ থেকে ৩১৬ ধারা পর্যন্ত গর্ভপাত সংক্রান্ত আইন ও সাজার কথা বলা হয়েছে। ৩১২ ধারায় বলা হয়েছে কোন নারী গর্ভপাত ঘটালে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তিন বছর সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদ- বা জরিমানা বা উভয় প্রকার শাস্তি পেতে পারে।

৩১৩ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি স্ত্রীলোকটির সম্মতি ছাড়া গর্ভপাত ঘটায়, তাহলে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাবাস, জরিমানা বা দশ বছর সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।

৩১৪ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি স্ত্রীলোকটির সম্মতি ছাড়া গর্ভপাত ঘটাইবার উদ্দেশ্যেজনিত কার্যে মৃত্যু ঘটায়, তাহলে ওই ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাবাস বা উপযুক্ত দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

৩১৫ ধারায় বলা হয়েছে, শিশু যাহাতে জীবন্ত জন্মাতে না পারে, বা উহা যাতে জন্মের পরপর মারা যায় সেই উদ্দেশ্যে কোন কার্য করিলে উক্ত ব্যক্তি দশ বছর সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদ- বা জরিমানা বা উভয় প্রকার শাস্তি পেতে পারে।

৩১৬ ধারায় বলা হয়েছে, এমন কোনো কার্য দ্বারা আসন্ন প্রসব গর্ভস্থ সন্তানের মৃত্যু ঘটানো, যাহা অপরাধজনক প্রাণনাশ বলিয়া গণ্য হয়, এমন কোনো কার্য করিলে উক্ত ব্যক্তি দশ বছর সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদ- ও জরিমানা দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

প্রাচীনকাল থেকেই কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়া নারীর জন্য অভিশাপ। ধনী-দরিদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত বলে কথা নেই, সব সংসারেই কন্যা শিশুর জন্ম এক নিরানন্দের বিষয়। প্রথমটি মেয়ে হলে পরের সন্তানটি অবশ্যই ছেলে হতে হবে এ আকাংখা থাকে পরিবারের সবার। পুত্র সন্তান জন্মদানে অক্ষম অযোগ্য বউ দিয়ে কোন কাজ হবে না। অতএব তাকে তাড়াতে হবে-এ ধরনের পুরষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেড়িয়ে নতুন সমাজ গড়ার দায়িত্ব আমাদের সবারই নিতে হবে।

লেখক সাপ্তাহিক ‘সময়ের দিগন্ত’ পত্রিকার প্রকাশক-সম্পাদক ও আইনজীবী জজ কোর্ট, কুষ্টিয়া।

01 Jul 2012 08:39:17 AM Sunday
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×