একটা গল্প দিয়ে শুরু করি।
হাইওয়ের পাশে এক বিশাল রেস্টুরেন্ট। বিভিন্ন যাত্রীবাহী পরিবহনের লোকেরা এসে খাওয়া দাওয়া করে, ফ্রেশ হয়। বিশাল ব্যবস্থা তাই রেস্টুরেন্টের ভিতরে। ভিতরে কয়েকশ চেয়ার পাতা। আর জায়গায় জায়গায় এসি লাগানো।
রেস্টুরেন্টের বাইরে এক কোনায় ছোট এক চা সিগারেটের টং দোকান আছে। রেস্টুরেন্টের বিশাল যাত্রীদের কল্যাণে সেই দোকানেও কিছু টুকটাক ব্যবসা হয়।
চা দোকানের মালিকের মাথায় একদিন ভূত চাপলো যে তার দোকানেও রেস্টুরেন্টের মত অনেক চেয়ার টেবিল আনবে। যাতে অনেক কাস্টমার তার দোকানে বসতে পারে। নতুন কোন সুবিধা বা পণ্য নয়, আকাশ কুসুম স্বপ্ন দেখে পরের কয়দিন ধরে সে তাই বাস্তবায়ন করল। সে তার দোকানের কাস্টমারদের জন্য কোন বাড়তি সুবিধা না বাড়িয়ে খালি চেয়ার টেবিল ই বাড়াল। কিন্তু কয়দিন পর দেখা গেল রেস্টুরেন্টেও আলাদা স্মোক জোন চালু হল তাই অনেক কাস্টমারই এখন আর সেই চা দোকানে আসেই না।
গল্পটা এতটুকুই।
এবার হাইওয়েটাকে মেরিন প্রফেশন, রেস্টুরেন্ট টাকে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত আর আমাদের নিজেদের কে সেই চা দোকান, রেস্টুরেন্টের চেয়ার টেবিল গুলোকে ভারতের নিজেদের দেশের মেরিটাইম প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা (১৪৭ টি as per Click This Link) চা দোকানের চেয়ার টেবিলকে বাংলাদেশের মেরিটাইম প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা (১৯ টি and increasing as per Click This Link) , বাস গুলোকে বিশ্বের বিভিন্ন শিপিং কোম্পানি, আর বাসের যাত্রীদের সাথে তুলনা করুন সেই শিপিং কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন শূন্য পদের সাথে।
ভারতকে রেস্টুরেন্ট আর নিজেদের চা দোকানের সাথে তুলনা করার কারণ জানতে চান?? এর কারণ বিশ্বের নামি দামি সব কোম্পানির রিজিওনাল অফিস ভারতে। বাংলাদেশে কোন টপ শিপিং কোম্পানির ম্যানিং এর জন্য শাখা পর্যন্ত নেই।
এর জন্য যখন কোন কোম্পানিতে অফিসার বা ক্রু নিয়োগের প্রয়োজন পড়ে তার রিকোয়ারমেন্ট সরাসরি আসে ভারতের রিজিওনাল অফিসগুলোতে। সেখান থেকে যখন তারা দেখে যে নিজেদের অফিসার আর ক্রু মিলিয়ে এই রিকোয়ারমেন্ট মিট করা যাচ্ছে না তখন তারা প্রতিবেশী দেশ যেমন বাংলাদেশ, পাকিস্তানে এই রিকয়ারমেন্ট স্প্লিট করে।
আমাদের দেশের জাহাজ শিল্পের নীতি নির্ধারকদের ধারনা বিশ্ব বাজারের অফিসার সঙ্কট শুধু একের পর এক একাডেমী খুলে, দেশে একের পর এক সরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলেই মিটানো সম্ভব। কিন্তু তাদের মাথায় এটা কেন নাই যে কোম্পানি গুলো সরাসরি বাংলাদেশ থেকে অফিসার নিবে না। ভারতে ১৪৭ টা একাডেমী থেকে প্রতিবছর যে বিপুল পরিমান অফিসার বের হয় এরাই তাদের চাহিদা পুরনে যথেষ্ট। এবং তাদের দেশেও প্রতিবছর ই আরও নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান চালু হচ্ছে।
যখন অনেক শিপিং কোম্পানির রিজিওনাল ম্যানিং অফিস আছে তখন তাদের এই পদক্ষেপ নেয়াটা যুক্তিযুক্ত কিন্তু ঠিক কোন যুক্তিতে আমরা একের পর এক এভাবে একাডেমী ক্যাডেট সংখ্যা বৃদ্ধি, জায়গা অধিগ্রহন করে নতুন একাডেমী চালু বা একটার পর একটা প্রাইভেট মেরিটাইম প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দিয়ে যাচ্ছি???
১। পাবনা মেরিন একাডেমীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
২। ছয়টি নতুন মেরিন একাডেমী স্থাপন করা হচ্ছে
৩। পাবনা বরিশাল,বাগেরহাট,সিলেট,না'গঞ্জও রংপুরে ছয়টি মেরিন একাডেমী
৪। বর্তমান সরকার দেশে ৪টি নতুন মেরিন একাডেমী নির্মাণ কাজ শুরু করেছে
এটা কি বৃথাই সেই চা দোকানদারের চেয়ার টেবিল বৃদ্ধির মত হয়ে যাচ্ছে না??