জানি না দিনের কোন সময় এই লেখা তুমি পাবে। আমার এখানে এখন কেবল সূর্য উঠছে। লাল সূর্য। গভীর সমুদ্রের বুক থেকে। মনে হচ্ছে যেন ঠিক এই মুহূর্তে আমার মতই নিঃসঙ্গ।
প্রিয়া, খুব ইচ্ছা ছিল অন্তত আজকের দিনটা তোমার সাথে থাকতে। কিন্তু কী করবো বল? লাস্ট পোর্টে সাইন অফ করতে পারি নি। ৫ মাসের কন্ট্রাক্ট তাই ৬ মাসে গিয়ে ঠেকছে। আমার খুব ই কষ্ট হচ্ছে। ইচ্ছে করছে এই মুহূর্তে প্রশান্ত মহাসাগর থেকে উড়ে এসে তোমার বুকে পড়ি। কিন্তু তা তো আর হবার নয়।
এর আগে প্রতিটা ভালবাসা বার্ষিকীতে তোমার পাশে ছিলাম। যেভাবেই হোক দিনটা আমরা এক সাথে উদযাপন করেছিলাম। আমি জানি আমাকে পাশে না পেয়ে তোমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। প্লিজ আমাকে তুমি মাফ করে দিয়ো আর কোন রাগ রেখো না আমার উপর লক্ষ্মীটি। হয়তো একলা ঘরে একটা কেক নিয়ে একা একা বসে আছো। ভাবছো লাস্ট পোর্টে সাইন অফ না হবার কথা তোমাকে মিথ্যা বলেছি। আমাদের দ্বিতীয় বিবাহ বার্ষিকীর দিনের মত সারপ্রাইজ হয়ে তোমাকে কিছু না জানিয়ে উপস্থিত হব। তোমাকে জড়িয়ে ধরে একসাথে আমাদের ভালবাসা দিবসের কেক কাটবো। বিশ্বাস কর সোনা আমারও ঠিক এমনি ইচ্ছা ছিল। ভেবেছিলাম তোমাকে না জানিয়ে হুট করে চলে এসে তোমার অবাক হয়া আর চোখ বেয়ে টলটল করে নেমে আসা জলের আনন্দধারা দেখবো। হাহ! তা আর হয়ে উঠলো না।
আচ্ছা দেশে কি এখন খুব বৃষ্টি হচ্ছে? সেদিন ফোনে বলছিলে অনেক বৃষ্টি, আমাকে মিস করছ। কথাটা শুনার পর একরাশ শূন্যতা আমাকে ঘিরে ধরেছিল। তোমার সাথে কথা বলার পরই ব্রিজের উইংসে গিয়ে অনেক্ষন নীল আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হয়ত কান্নাও করেছিলাম। ঠিক মনে আসছে না।
জানো আমাদের রিলেশনের পর থেকে তোমার দেয়া ৫৬ টা চিঠি আমি এবার আসার সময় জাহাজে নিয়ে এসেছি। যখন ইচ্ছা করে তখনি একটা চিঠি লটারির মত করে সিলেক্ট করে পড়ি। কিছু সময়ের জন্য সম্মোহিত হয়ে যাই। মনে হয় যেন আমার পাশে বসে তুমি আমাকে চিঠি পড়ে শোনাচ্ছ। তোমার শরীরী উপস্থিতি টের পাই চিঠি গুলোর মধ্যে। নিঃসঙ্গ জীবনে এখন এগুলোই আমার অনেক বড় বন্ধু। আর একটা বন্ধু বিভিন্ন সময়ে তোলা আমাদের ছবি আর ভিডিও গুলো। সিলেটে পাহাড়ে ঘুরার সময় ছবি তোলার থা বলে তোমার অজান্তে একটা ভিডিও করেছিলাম। তোমাকে ছবি তোলার জন্য রেডি হতে বলছিলাম আর তুমি দুষ্টামি করছিলে শুধু। প্রযুক্তির কল্যাণে সেই ৫ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের ভিডিওটা আমার ল্যাপটপে। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রায়ই এটা দেখি। নিজের অজান্তে তোমার কাছাকাছি চলে যাই। জাহাজের দুলুনি, সমুদ্রের বাতাসের একটানা শোঁ শোঁ শব্দ আর নোনতা গন্ধে বাস্তবে ফিরে আসি। লোহার জাহাজের কঠিন বাস্তব।
আমি অবশ্যই তোমার জন্মদিনের আগে ফেরার চেষ্টা করবো। কোম্পানির সাথে আজও কথা হয়েছে ক্যাপ্টেনের মাধ্যমে। যে করেই হোক নেক্সট পোর্টে আমার রিলিভার ম্যানেজ করে পাঠাবে। পোর্ট থেকে বের হয়ে প্লেন ধরেই সোজা তোমার কাছে চলে আসবো। আর আজকের দিনের কষ্টটা যাতে ভুলে যাও সেই ব্যবস্থা করবো। ছয় সত্যি। মানে ডাবল তিন সত্যি।
আমাদের সুন্দর দিনের জন্য অনেক দোয়া করবে আল্লাহর কাছে। একটু পর ই ডিউটিতে চলে যেতে হবে সোনা। নিজের যত্ন নিয়ো। আর ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া কোর।
ইতি,
তোমার ভালবাসা।
১৪ জুলাই।
পাঠকদের জন্যঃ সবার ভালবাসা দিবস ১৪ ফেব্রুয়ারি হয় না। আমার ভালবাসা দিবস ১৪ জুলাই। বিশ্ব ভালবাসা দিবস হিসেবে চিঠিটা শেয়ার করিনি। শেয়ার করেছি আমাদের ভালবাসার ৬৭ তম মাস সেলিব্রেট করতে। কি করবো?? বছর গুলো মিস হওয়ার অনেক চান্স থাকে। তাই মাস ই সেলিব্রেট করা লাগে। আর চিঠির সকল চরিত্র ও ঘটনা বাস্তব। সব প্রেমিক মেরিনারের একান্ত মনের কথা শেয়ার করলাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৪৭