somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমুদ্র জীবনের গল্প (ভাষাবিভ্রাট)-২

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভাষা বিভ্রাট নিয়ে লেখা আগের অংশটি এখানে।
সব দেশে গিয়েই মনের ভাব বুঝাতে নিয়ে কমবেশি ঝামেলায় পড়া লাগছে। এরকমই একটি অভিজ্ঞতা আজ শেয়ার করছি।
কোরিয়াতে আমরা গিয়েছিলাম বাংলাদেশের জন্য সিমেন্ট ক্লিংকার আনতে। কোরিয়ান যেই পোর্টটিতে গিয়েছিলাম ওখানকার শ্রমিকরা অনেক স্মার্ট। কনভেয়ার বেল্ট দিয়ে খুব দ্রুত লোডিং করে আর জাহাজের ইনক্লাইনেশন ( কোন এক দিকে কাত হওয়া) ওরা নিজেরাই ঠিক করে ফেলে। ফলে লোডিং নিয়ে ডিউটি অফিসার বা চীফ অফিসারের ও এত বেশি টেনশন থাকে না। সবার ধান্ধা শুধু পোর্ট থেকে বের হওয়া, ঘুরাঘুরি করা আর শপিং করা। আর আমার মত কয়েকজনের ধান্ধা নেটে সার্ফ করা। ১ এম বি পি এস এর ফ্রী ইন্টারনেট সুবিধা। :D পোর্টে আমাদের জাহাজের বার্থ থেকে ২০ মিনিট হাঁটা পথ দূরে একটা প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল আছে। ওখানেই এই ফ্রী ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক। তাই ডিউটির ফাঁকে ৬ ঘন্টা অফ টাইম পেয়েই ল্যাপটপ কাঁধে নিয়ে ওখানে। স্কাইপে তে সব বন্ধুর সাথে, বাসার সাথে, প্রিয়জনের সাথে কানেক্টেড হওয়ার লোভে। ৫ দিন ছিলাম ওখানে আর এটাই হয়ে গিয়েছিল ডেইলি রুটিন। :)


এর মধ্যে একদিন আবিস্কার করলাম আমাদের শিপে যারা কাজ করতে আসে তারা প্রত্যেকে একটা করে সাইকেল নিয়ে আসে আর শিপ থেকে একটু দূরেই একটা চিপায় ওগুলা রাখে। বলে রাখা ভালো আমাদের জাহাজেও পোর্টে গিয়ে চলার মত দুইটা পুরাতন সাইকেল ছিল কিন্তু একটার ব্রেক পুরা নষ্ট আরেকটার টায়ার ফাটা। তাই ওগুলা কেউ চালাইতো না। মাথায় ভূত ঢুকলো কিভাবে ওদের একটা সাইকেল নেয়া যায়। অন্তঃত এতে নেট টার্মিনালে যেতে আসতে ৩০ মিনিট সেভ হবে। মানে ৩০ মিনিট বেশি কথা বলা যাবে। তাছাড়া আরেকটা ভূত যেটা সবচেয়ে কমন এবং আমি জানি তা সবারই হয় তা হল অন্যের সাইকেল দেখলেই তা চালানোর জন্য পা কুটুর মুটুর করবে।:P;)


যাহোক একজন সাইকেল অলাকে দেখলাম এবং সেইমত তারে ভাঁজ দেয়ার চিন্তা করলাম। ও হচ্ছে কার্গো ফোরম্যান (জাহাজের লোডিং গ্যাং এর লিডার)। :|
ওর কাছে গিয়ে ওর মত ইংরেজিতেই বললামঃ "ইউর সাইকেল ভেরি গুস (গুড রে গুস বলে)।" ও মনে হয় আমার মনের ভাব বুঝতে পেরেই বলল, "নট গুস। নট গুস।" তারপর আমাকে সাইকেলের এদিকে স্টিকার ছিড়া। ঐদিকে হ্যান্ডেলের রাবার গ্রিপ নাই এগুলা দেখাইতেছে। আমি বললাম "নো প্রবলেমো।:)" কি বুঝছে বুঝলাম না খুব সুন্দর একটা হাসি দিলো। বুঝলাম কাজ হয়া গেছে। যাওয়ার আগমুহুর্তে খালি বলে নিয়ে গেলেই হবে। ৬ টায় ডিউটি শেষ করে তাড়াতাড়ি রুমে ফ্রেস হয়েই কাঁধে ল্যাপটপ গলিয়ে দৌড়।
এসে ঐ ফোরম্যানকে বললাম, “মাই ফ্রেন্ড, আই এম টেকিং ইউর গুস সাইকেল। আই উইল বি কাম ব্যাক বাই নাইন।”B-)
সেও হাত তুলে বলল, “ওকে। ওকে।”:)
বাহ মজা তো। এত কথা সব সে বুঝে গেল। যাক। এবার আর আমাকে পায় কে?? ডিউটি অফিসার (থার্ড অফিসার) আমাকে দেখে বলতেছে, “বলে নিচ্ছ তো?” সগর্বে বললাম যে, “না বলে কি আর নেয়া যায় স্যার।”
তারপর শিপ থেকে নেমেই ভুম। ওখানে গিয়ে ধুমায়া নেট ইউজ শুরু করলাম। এর মধ্যে দেখতে দেখতে সময় চলে গেল।


ঘড়িতে তাকিয়ে ৯ টা বাজতে আর ১৫ মিনিট। কথা রাখতে হবে। বুঝুক শালা। বাঙালি কথা দিয়ে কথা রাখে।;) ৫ মিনিটের মধ্যেই সোজা শিপের কাছে। উপর থেকেই দেখছি গ্যাংওয়েতে চীফঅফিসার। আমাকে দেখেই বলছে “এই তুমি বলে নিছ সাইকেল?X("
আমি তো পুরা হতভম্ব। বলে কি?“হ্যাঁ স্যার ওরে তো পুরা বলেই নিলাম।”
“কি ভাষায় বলছ। মনে হয় কিছুই বুঝে নাই। গিয়ে কথা বল। তুমি যাওয়ার পরে পুরা শিপ মাথায় তুলছে। সাইকেলের খোজে।”
অ্যাঁ কয় কি। যেই জোরে মাথা নাড়ল আর কিছুই বুঝে নাই। এটা কিভাবে হয়।
গিয়ে দেখি শিপ অফিসে লোডিকেটরে (স্টাবিলিটি হিসাব করার বিশেষ কম্পিউটার।) কার্ড খেলছে। এই কম্পিউটারে চীফ অফিসার সাধারনত কাউকে হাত দিতে দেন না। বুঝলাম তারে চুপচাপ রাখতে কম্পিউটারে গেম খুলতে দেয়া হইছে। আমরা যেভাবে বাচ্চাদের কান্না থামাই আর কি।:| তারপর তাকে তার সাইকেল বুঝায়া দিলাম। এখন দেখি গেম ছেড়েই উঠে না আর।
আমি যদি সত্যি বুঝতাম যে ব্যাটা আমার কথা বুঝে নাই তাইলে জীবনেও তোর সাইকেলে হাত দিতাম না। /:) তখন এত জোরে মাথা দুলাইছে যে ভাবছি সব বুঝে অস্থির।

(চলবে..................)
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×