জলের মানুষরাও আমাদের ভুল বুঝে। জেলেদের কথা বলছি। আপনি যখন কোন দেশের কোস্ট অতিক্রম করবেন তখন দেখতে পাবেন হাজার হাজার জেলে নৌকা। এরা জাল ফেলে মাছ ধরতে থাকে ইতস্তত এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে।
যখন রাতের বেলা ন্যাভিগেশন করবেন তখন মনে হবে যেন এক ঝাক তারা আকাশ থেকে নেমে এসেছে। দেখার মত দৃশ্য। কিন্তু ন্যাভিগেটরের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। এদের জাল এবং ছোট নৌকা বাঁচিয়ে চলতে হবে। একটু পর পর কোর্স চেঞ্জ করতে হয়। এখানে ভুলের কোন সুযোগ নেই। একটা নৌকার কিছু হলে আপনাকে এরেস্ট করা হবে। তাই ওই সময়ের ন্যাভিগেশন দুঃস্বপ্নের মত।
ফিশিং বোট গুলো আশা করে আমরা তাদের জাল বাঁচিয়ে চলব। কিন্তু সমস্যা হল জাল আছে তা বুঝার সাথে সাথেই এত বড় জাহাজ টার্ন করা সব সময় সম্ভব হয় না। লোডেড জাহাজের মোমেন্টাম অনেক বেশি থাকে। তাই স্টিয়ার করার অনেক পর তা কার্যকর হয়। ফলাফল জালের উপর দিয়ে জাহাজ চলে যায় এবং তা প্রপেলারে কাটা পড়ে। জেলেরা অনেক সময় আলো দিয়ে অনবরত জাহাজ কে সংকেত দিতে থাকে যা প্রায় ক্ষেত্রেই দুর্বোধ্য যে আসলে কোনদিকে তার জাল ছড়ানো আছে।
এবার আরেকটি ভুল বুঝাবুঝির গল্প। এটা হয়েছিল বাংলাদেশি একটা নেভি শিপের সাথে। আমাদের জাহাজ বঙ্গোপসাগর হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসছিল। বন্দর থেকে প্রায় ৪৫ নটিক্যাল মাইল দূরে আমরা। এর মধ্যে VHF এ শোনা গেল এক নেভি শিপ আমাদের ডাকছে। রিপ্লাই করার পর তারা জাহাজের নাম, জাতীয়তা, গন্তব্য সহ আরও অনেক ইনফরমেশন নিলো। তারপর হুট করে বলছে যে আপনারা আমাদের ফায়ারিং এক্সারসাইজ এরিয়ায় ঢুকে গেছেন। অনুগ্রহ করে কোর্স চেঞ্জ করে অন্য পথে চট্টগ্রাম বন্দরে এপ্রোচ করেন।
আমরা তখন সত্যিকার অর্থেই হতভম্ব।
-আপনাদের কী কেউ ইনফরম করে নি?
-আমরা সিঙ্গাপুর থেকে ফিরছি। কিভাবে জানবো যে আজ আপনাদের ফায়ারিং প্র্যাকটিস।
-ওকে। আপনাদের একটা রুট সাজেস্ট করছি ওই মত চলে যান।
তাদের সাজেস্ট করা রুট অনুযায়ী জাহাজ ঘুরানো হল। হিসেব করে দেখা গেল নতুন রুট আমাদের আরও প্রায় ২ ঘণ্টা দেরীতে বন্দরে নিবে। এই কোর্স সম্পর্কে ক্যাপ্টেন কে জানানো হল। স্যার ব্রিজে এসে আবার ওই নেভিশিপটিকে ডাকলেন ফায়ারিং এরিয়ার সঠিক কো অর্ডিনেট নিতে। কিন্তু কোন রিপ্লাই নেই। এরমধ্যে আরেকটি শিপ এর মেসেজ আসছিল। বাধ্য হয়ে তাই ওটাকে ডাকা হল। কিন্তু ওই জাহাজ থেকে জানানো হল যে আমাদের ফায়ারিং এক্সারসাইজ আগামীকাল।
-মানে কী? আপনাদের একটি জাহাজ ই একটু আগে আমাদের বলল যে আমরা ফায়ারিং এক্সারসাইজ এরিয়াতে আছি। নতুন কোর্স ও দিল।
- ও। তাহলে মনে হয় উনি বুঝতে পারেননি। আপনারা আপনাদের আগের কোর্সে এসে চট্টগ্রাম চলে যান।
এই হল দূরবস্থা। জার্মান একটা কন্ট্রোল টাওয়ারে একটা দুর্দশাগ্রস্থ জাহাজ থেকে মেসেজ আসছিল।
: sir. We are in Distress. We are sinking……
: ok. What you are sinking?
: sir. We are sinking….
: yes. But what you are sinking?
: please send assistance. We are sinking……..
: please tell what are you sinking??
তারপর আর নো রেসপন্স। ইতোমধ্যে বিপদগ্রস্থ জাহাজটি ডুবে গেছে। জার্মান রা T এর উচ্চারণ করে s দিয়ে। থিঙ্কিং রে বলে সিঙ্কিং। এটাই হল এই ভুল বুঝাবুঝির কারণ। আসলে খালি জার্মান না। চীন, কোরিয়া সহ আরও অনেক দেশেই এই ব্যাপারটা দেখেছি।
(সমাপ্ত)
ছবিঃ ইন্টারনেট।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:১৬