সমুদ্র জীবনের গল্প (কেউ আমাদের বুঝে না!!)
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
মেরিনারদের জন্য এটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার যে কেউ সহজে তাদের বুঝতে পারে না। বাবা, মা, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, এমনকি প্রেমিকারাও মাঝে মাঝে এমনসব কথা বলে যে তব্দা খায়া যাইতে হয়। যদি কাউকে কিছু বুঝাইতে হয়ও তাহলেও অনেক কাঠখড়, কেরোসিন, ডিজেল পুড়াইয়া বুঝানো লাগে তাও অনেক সময় বুঝে না।
শিক্ষানবিস লাইফ শেষ করে প্রথম পেশাগত পরীক্ষা দিতে ডাঙ্গায় আসলাম। সব বন্ধুরা চোখ বড় বড় করে তাকায় আর বলে, “দোস্ত চাকরি ছাইড়া দিলি??”
ভ্যাবাচেকা খায়া যাই। কি বুঝামু...
তারপর বলি, “যে না দোস্ত এক্সাম দিতে আসছি??”
: এক্সাম?? তোর আবার কিয়ের এক্সাম? তুই না পড়ালেখা শেষ করে জব পাইয়া গেলি।
: আছে একটা এক্সাম। ক্লাস-৩।
: কি কস? এই বয়সে ক্লাস-৩??
হাহ! হতাশ হই। কে বুঝাবে? এত কথাও বলতে ইচ্ছা করে না। আসলে সার্টিফিকেটটার নাম ই COC-3 বা সার্টিফিকেট অব কম্পিটেন্সী-3 সংক্ষেপে বলি ক্লাস-৩।
প্রচলিত সব সনদ ই সার্টিফিকেট অব নলেজ হলেও মেরিন প্রফেশনের সনদের নাম এমন কারন এখানে প্রার্থীকে প্রমাণ করতে হয় যে তার বিষয়বস্তু সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকার পরও ক্ষেত্রবিশেষে তা আবার প্রয়োগের দক্ষতাও আছে। এরকম আরও দুইটা সার্টিফিকেট ক্লাস-২ এবং ক্লাস-১ অর্জনের পর ই একজন নাবিক জাহাজের ক্যাপ্টেন হতে পারে।
এত কিছু বুঝানোর পর এক বন্ধু আবার বলেই বসলো,“ধুর শালা! আমিতো আরো মাইনষেরে বইল্লা বেড়াই আমার এক বন্ধু আছে জাহাজের ক্যাপ্টেন।”
টাস্কি খাই আর ভাবি, আহারে এত যদি সোজা হইত সবকিছু।
জাহাজিদের নিয়ে সবার হাজার হাজার প্রশ্ন। বন্ধু মহলের ধারণা সবসময় মেয়ে নিয়া ঘুরি আর বিভিন্ন দেশে গেলে হার্ডড্রিঙ্কসের ছড়াছড়ি।
জানি না, এই অপবাদ খালি মেরিনারদেরকেই কেন ঢালাও ভাবে দেয়া হয়। অবস্থাটা হইল, “সব পক্ষীই টার্গেট প্রাকটিস করে আর দোষ পড়ে খালি কাউয়ার।” অনেকেরই জানা নেই যে জাহাজে প্রবেশ করার পর ই Drug And Alcohol Policy নামে একটা কড়া ভাষায় লেখা চুক্তি পত্রে সব নাবিককে স্বাক্ষর করা লাগে।
কারন ড্রাগ বা এলকোহল জনিত কারনে জাহাজের একজনের জন্য সবার জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। যাদের এলকোহল নেয়ার এত ইচ্ছা হয় তারা পোর্টে নামার পর বারে গিয়ে খাক এটা নিয়া কোন সমস্যা নাই কিন্তু কথা হইল এটা ত সিভিলিয়ান রা প্রতিনিয়তই করছে। তাহলে খালি মেরিনাররাই দোষী ক্যান??
এর জন্য আসলে দায়ী আগের কালের উপকথা গুলা যেখানে জাহাজের ক্যাপ্টেন মানে এক চোখে পট্টি আর হাতে লাল পানির বোতল।
মেয়ে নিয়া ঘুরি। এই অভিযোগটা আসলে একেবারেই মিথ্যা না।
জাহাজটাই তো মেয়ে। এটা আসলে একটি পুরাতন সামুদ্রিক ঐতিহ্য। সমুদ্রে যা কিছু আছে সবই মেয়ে হিসাবে বিবেচিত। জাহাজের ক্ষেত্রে এটা আরও বেশি কারন একে সবসময় ঠিকভাবে যত্নের সাথে নিয়ন্ত্রন করা লাগে। তাহলে এটা প্রয়োজনে সবসময় পাশে থাকবে। আর তা না হলে?? সুস্বাদু খাদ্যের সাথে বিষ খাওয়ায়া খুন করে ফেলা কোন নারী চরিত্রের কথাই মনে আসে। জাহাজ ভারসাম্যের বিদ্যা শিপ স্টাবিলিটি তে পড়তে হয় in any condition Girl should not be allowed on top of Man. this will make your ship unstable and she will behave crazy and try to take your life.
এখানে G= centre of gravity আর M= metacentric height. আসলে খালি জাহাজ না। বাস্তব জগতের সব খানেই এটা ধ্রুব সত্য। (আমাদের দেশেই দেখেন।) নারীবাদী ভাই এবং আপুরা আবার ভুল বুইঝেন না। আমি নারীবিদ্বেষী না।
জাহাজ মেয়ে হওয়ার আরেকটা যৌক্তিক কারন হল জাহাজকে সব সময়ই সাজুগুজু করায়া রাখতে হয়।
জাহাজের ক্রুদের কাজের অর্ধেক সময় ই যায় রঙচঙ্গ করে একে চকচকে রাখতে।
চলবে.................................
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন
মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন
সত্যি বলছি, চাইবো না
সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?
শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন
শেখস্থান.....
শেখস্থান.....
বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন