ব্লগে লেখালেখি করার ইচ্ছা থেকে সামুতে নিবন্ধিত হয়েছিলাম। কিন্তু ব্যস্ততা আর বিভিন্ন কারনে হয়ে উঠেনা। গত কয়দিন আগে ট্রাই করছিলাম কিন্তু জাভাস্ক্রিপ্ট
এর কি একটা সমস্যার জন্য সামুতে আপলোড করতে পারিনি। আজ হয়ে গেল। নতুন ব্লগার হিসেবে সাজেশন আশা করছি।
নেশায় এবং পেশায় আমি একজন সমুদ্রচারী। আমাদের সেই সমুদ্রের দিনযাপন নিয়েই এই ছবি পোস্ট।
পানি কেটে এগিয়ে যাচ্ছে জাহাজ। পিছনে রেখে যাচ্ছে তার চিহ্ন। অনেকটা বালুচরে
আমাদের পদচিহ্নের মত।
অনেকেই ভাবে মেরিনার রা ফাও ফাও কত্তগুলা টাকা কামাই করে। সমুদ্রের সুন্দর সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করে আর পায়ের উপর পা তুলে ডলার গুনে। উপরের কয়েকটা ছবি তাদের জন্য। চীনে -২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় জাহাজের এই অবস্থা। ডেকের উপর থাকা অনেক দরকারি জিনিসের (যেমন মুরিং রোপ, ভারি মোটা দড়ি যা দিয়ে বন্দরের জেটিতে জাহাজটি আটকে রাখা লাগে।) উপর এরকম ভারি ভারি বরফের আস্তর পড়ে। ব্যবহারের প্রয়োজনে এগুলোকে পরে ভারি ভারি হাতুড়ি দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পিটানো লাগে। আহ কি শান্তি যে তখন লাগে।
আমাদের জাহাজে অতিথি। তাইওয়ান অতিক্রম করার সময় কোত্থেকে যেন এসেছিল। পালকে ছিল কতগুলো হিজিবিজি লেখা সম্ভবত ওদের বিজয় দিবসে মুক্ত করা কিছু কবুতর। প্রচুর ঠাণ্ডা বাতাস আর হালকা তুষারপাত ছিল তখন। মিঠা পানি আর খাবারের অভাবে এদের মরমর অবস্থা। দুর্বল পাখিগুলো তাই অসহায় হয়ে আমাদের জাহাজেই আশ্রয় নিয়েছিল। ওদের জন্য আয়োজন করে বাসা বানানো হল। পানি, খাবার দেয়া হল। মজার ব্যাপার হল পরে এরকম আরও ১১ জোড়া কবুতর এসে আশ্রয় নিয়েছিল আমাদের জাহাজে। ইচ্ছা ছিল কোন একটা পোর্টে (যেখানে শীত নাই) ছেড়ে দিব। বিভিন্ন দেশের কাস্টমস পোষা পাখি নিয়ে ঝামেলা করে। পাখি থেকে বিভিন্ন রোগ ছড়ায় তাই। এর জন্য অনেক দেশে কঠিন জরিমানাও হয়। চীনে এবং রাশিয়ায় তাই লুকিয়ে রাখা হল। পরে ভারতের গোয়াতে এসে ছেড়ে দিয়েছিলাম।
বরফের আরো কিছু ছবি। রাশিয়ান একটি বন্দর ভ্লাদিভস্তকের বহিনোঙ্গর থেকে তোলা। এরা ভালো বরফ। জাহাজের আশেপাশে পানিতে ভাসছিল। উপরে উঠে ভেজাল লাগায় নাই। তবে তুমুল ঠাণ্ডায় আমাদের মত আমাদের পতাকার ও জড়সড় অবস্থা। উড়ার কথা মনেই নাই। সত্যিই অনেক বেশি ভালো লাগে যখন বাইরের দেশে নিজের দেশের পতাকাটিকে সগর্বে উড়তে দেখি।
উত্তাল সমুদ্রে ঢেউয়ের দোলা। সাউথ চায়না সী জাহাজ এবং জাহাজিদের এই ফিলিংস দেয়ার জন্য অঙ্গিকারাবদ্ধ। ও ভালো কথা। আমাদের বঙ্গোপসাগরও কিন্তু কম যায় না। কেউ এই ফিলিংস পাইতে চাইলে জুন জুলাই মাসে পতেঙ্গা সি বীচ থেকে একটা লাইফ বোট ভাড়া করে কয় ঘণ্টা গভীর সমুদ্রে গিয়ে ঘুরতে পারেন। অন্তত ১০ ভাগের ১ ভাগ ফিলিংস পাবেন আশা করা যেতে পারে।
নীল সমুদ্র। এই দৃশ্যটা প্রতিদিন দেখি। তবু খালি দেখতে ইচ্ছা করে।
পুরান হয় না।
কেমন লাগলো জানাবেন। ভবিষ্যতে এসব নিয়ে আরও পোস্ট করব মনে হয়। দেশের বাইরে যাচ্ছি কিছুদিনের জন্য। পরে এসে আবারো দেখা হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১১:১৮