আমাদের মুখের সৌন্দর্য অনেকটা নির্ভর করে আমাদের দাঁতের উপর। দাঁতের স্বাভাবিক রং পরিবর্তিত হলে তা অবশ্যই আমাদের বাহ্যিক সৌন্দর্যেও প্রভাব ফেলে। দাঁতের রং পরিবর্তন স্বাভাবিক ভাবেই আমরা ভাবি আমাদের দেখতে খারাপ লাগছে আবার অনেক ক্ষেত্রে হাসতেও খারাপ লাগছে।এখন প্রশ্ন হল দাঁতের স্বাভাবিক রং কি?? কেনই বা এই পরিবর্তন? এর থেকে সমাধানের উপায় কি??
দাঁতের স্বাভাবিক রং কি??
দাঁতের স্বাভাবিক রঙের বিষয়ে একটি কথা সবারই জানা প্রয়োজন যে যাদের গায়ের রঙ ফর্সা তাদের দাঁতের সর্ববহিরাবরন অর্থাৎ এনামেলের রঙ হলুদাভাব সাদা আবার যাদের গায়ের রঙ কালো তাঁদের দাঁত সাদা হয়ে থাকে। এজন্য ইউরপিয়ান মানুষদের দাঁতের রং হলুদাভাব আবাব কুচকুচে কালো বা নিগ্রোদের দাঁতের রঙ ধবধবে সাদা হয়ে থাকে। মুলত জিনগত কারণেই দাঁতের রঙের বিভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়।
দাঁতের স্বাভাবিক রঙের পরিবর্তনের কারন কি???
অনেক কারনেই দাঁতের এই স্বাভাবিক রঙের পরিবর্তন হতে পারে। যেমন,
চা, কফি, কোল্ড ড্রিঙ্কস,অ্যালকোহল সেবন কিছু ফল বা শাকসবজি যেমন আপেল বেদানা লালশাক খেলে।
তামাক জাতীয় দ্রব্য সেবন কিংবা পান, সুপারি, জর্দা, গুল, সাদাপাতা খেলে।
দাঁতের যত্ন না নিলে কিংবা দাঁত সঠিক নিয়মে ব্রাশ বা ফ্লশিং না করলে।
পরোফাইরিয়া, ছোটবেলায় সংঘটিত মারাত্মক ধরনের জন্ডিস, রেডিও বা কেমোথেরাপি,পেপটিক আলসার বা বিভিন্ন বিপাকজনিত রোগ কিংবা গর্ভাবস্থায় মার সংক্রমিত কিছু ইনফেকশন বা জন্ডিস হলে সেখান থেকে গর্ভে থাকা শিশুর এনামেল গঠনে বাধাগ্রস্থ হয়ে দাঁতের রং পরিবর্তন হতে পারে।
শিশু গর্ভাবস্থায় মা যদি টেট্রাসাইক্লিন বা ডক্সিসাইক্লিন জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন করে তাহলে সেই শিশুর দাঁতগুলো বাদামি কিংবা কিছুটা হলুদাভাব হয়।
৮ বছর বয়সের পূর্বে টেট্রাসাইক্লিন বা ডক্সিসাইক্লিন জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন।
এছাড়াও কিছু অ্যান্টিহিস্টামিন, অ্যান্টিসাইকোটিক ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনের জন্যে ব্যবহারিত ওষুধ,অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় কারনে ঘন ঘন ক্লোরোহেক্সিডিন মাউথ ওয়াস ব্যবহারের কারনে দাঁতের রং পরিবর্তন হতে পারে।
বংশগত কারনে দেখা যায় অনেকের দাঁতের এনামেলের পুরুত্ব স্বাভাবিক পুরুত্ব অপেক্ষা অনেক বেশি। যা দাঁতের রং পরিবর্তনের অন্যতম কারন।
কনজেনিটাল ডিজিজ বা জন্মগত রোগ যেমন ডেনটিনোজেনেসিস বা এমিলোজেনেসিস যা এনামেলের স্বাভাবিক গঠনকে বাধাগ্রস্থ করে যা দাঁতের রং পরিবর্তনে প্রভাব রাখে।
পরিবেশগত কারন যেমন ফ্লোরাইড,আর্সেনিক বা আয়রণযুক্ত পানি পান কিংবা অতিরিক্ত ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করলে।
দাঁতে আঘাত পেলে এবং তার যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ না করলে একটা সময় পরে দাঁতের দন্তমজ্জা নষ্ট হয়ে যায় এবং ধীরে ধীরে দাঁতের রঙ পরিবর্তন হয়ে যায়।
অনেক সময় রুটক্যানেল চিকিৎসা সম্পন্ন করার পর দাঁতের রঙ পরিবর্তন হয়ে যায়।
কিছু ডেন্টাল ম্যাটেরিয়ালস যেমন সিলভার সালফাইড যুক্ত আম্যালগাম ফিলিং এর ফলে দাঁতে ধূসর কালো দাগ পরতে পারে।
অ্যাডভানসিং এজে দাঁতের এনামেল দুর্বল হয়ে যায় এবং হলুদ বর্ণের ডেন্টিন বের হয়ে আসে ফলে দাঁত হলুদ দেখাতে পারে।
প্রতিরোধের উপায়ঃ
সমস্যা কারন অনুযায়ী কিছু প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। যেমন,
গর্ভাবস্থায় যেসব ওষুধ দাঁতের কিংবা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তা সেবন না করা।
সঠিকভাবে দাঁতের যত্ন নেওয়া। গ্র্যানুএলস যুক্ত ভালো টুথপেস্ট ও টুথব্রাশ দিয়ে দিনে ও রাতে ঘুমানোর আগে দুইবার সঠিক নিয়মে দাঁত ব্রাশ করা।
দাঁত ও মুখের জন্য ক্ষতিকর বস্তু যেমন সিগারেট, পান, সুপারি, জর্দা, কোল্ড ড্রিঙ্কস, অ্যালকোহল ইত্যাদি গ্রহণ না করা।
দাঁতের রঙ হলুদ লালচে বা বাদামি হয়ে গেছে কি করবেন??
সিগারেট কিংবা পান বা অন্যান্য বস্তু গ্রহণের ফলে দাঁতের রং পরিবর্তিত হয়ে থাকলে একজন অভিজ্ঞ ডেনটিস্টের কাছে স্কেলিং ও পলিশ করে দাঁতগুলো আবার ঝকঝকে করে নিতে পারেন।
টেট্রাসাইক্লিন বা ডক্সিসাইক্লিন জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক বা ওষুধজনিত কারণে দাঁতের রং পরিবর্তিত হয়ে থাকলে দাঁতে ভিনিয়ার কিংবা ক্রাউন করে সুন্দর ঝকঝকে করা যায়।
দন্তমজ্জা নষ্ট হওয়া দাঁত কিংবা আঘাতজনিত কারণে দন্তমজ্জা নষ্ট হয়েছে ও পরে রুট ক্যানেল করা হয়েছে কিংবা রুট ক্যানালের ফলে দাঁতের রঙ পরিবর্তন হয়েছে সেসব ক্ষেত্রে “টুথ ব্লিচিং” এর মাধ্যমে দাঁত সাদা করা যায়।
যদি দাঁত ব্লিচিং পদ্ধতি সম্ভব না হয় তবে লাইট কিউর ফিলিং বা কালার ম্যাচিং ফিলিং এর মাধ্যমেও দাঁত সাদা করা যায়। কালার ম্যাচিং ফিলিং ডেন্টাল সাইন্সে দাঁত সাদা করার সবচেয়ে আধুনিক চিকিৎসা। এটা আগে উন্নত বিশ্বে থাকলেও বর্তমানে বাংলাদেশে এই পদ্ধতিতে দাঁত সাদা করা যাচ্ছে।
তবে আর দেরী না করে সঠিক চিকিৎসা গ্রহনে আপনার দাঁতের স্বাভাবিক রঙ ফিরিয়ে আনুন।
ধন্যবাদ ।
এ সংক্রান্ত কোন প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা থাকলে প্রশ্ন করতে পারেন। আমার মেইল অ্যাড্রেস [email protected] ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:২৯