তিন লক্ষ আইসল্যান্ডবাসীর আইসল্যান্ডিক ভাষার জন্য গুগুলের ভাষান্তর ব্যবস্থা আছে অথচ তাঁর চেয়ে ১০০ গুণ বেশি প্রবাসী বাঙালী আছে দুই বাংলার বাইরেই, হাজার গুন বেশি আছে দুই বাংলায়, কিন্তু আমাদের নেই ভাষান্তর ব্যবস্থা। এই লজ্জার পাশাপাশি ভাষা নিয়ে আমাদের আছে গৌরব করার মতো কিছু ব্যাপারও! পৃথিবীর বুকে আমরাই এক মাত্র জাতি যারা মায়ের মুখের ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছি, মিলেছে স্বীকৃতিও, আমাদের মহান একুশে ফ্রেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবষ। দেশে বিদেশে লক্ষ কোটি মানুষ এখন মাথা নুয়ে, ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় আমাদের।
তিন বছর ধরে আবারও বাংলা লিখছি। স্কুলের গণ্ডি পার হয়ে ইংরেজী মাধ্যমের বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখার পর থেকে বাংলা হয়ে পড়েছিল অপ্রয়োজনীয়। দীর্ঘ অনেক বছর ধরে টুকটাক বাংলা লেখা সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছিল গল্প আর কবিতা লেখার জন্য। কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট এক সময় খাতা কলমের সামান্য জায়গাটাও দখল করে নিয়েছিল। অভ্যাস ধরে রাখতে মাঝে মাঝে কম্পিউটারে ইংরেজী বর্ণমালায় লিখতাম বাংলা, বাংলা টাইপিং শেখার সময় কিম্বা প্রয়োজনীয়তা একেবারেই ছিল না! প্রায় ভুলেই যেতে বসেছিলাম কিছু কিছু বাংলা বর্ণমালা! এখনো অনেক বানান ভুল হয়ে যায়! দায়টা আমাদের প্রজন্মের নয়, দায়টা সময়ের আর আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া যুগোপযোগী হওয়ার তাড়নার। এমন সময় ডাক্তারী পড়তে যাওয়া বাচ্চা একটা ছেলে তাঁর কিছু বন্ধু বান্ধব মিলে কোটি বাঙালীর জন্য নিয়ে এলো ‘অভ্র’- কম্পিউটারে ইউনিকোড ভিত্তিক বাংলা লেখার জন্য সহজতম একটি সফটওয়ার। ছেলেটির নাম মেহদী, মেহদী হাসান খান।
এই আনন্দে নতুন করে অনেকে বাংলা লিখতে শুরু করলো, ব্লগে, ফেসবুকে, ফোরামে এখন নতুন করে বাংলার জয়জয়কার। লক্ষ কোটি বাঙালী এখন আবার বাংলা লিখছে অভ্র’র কল্যাণে। বাংলা বর্ণমালায় ভরে উঠছে ইন্টারনেটের জগত। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, অন্যান্যরা যখন ভাষাকে পুঁজি করে ব্যবসার ফাঁদ পেতে বসে আছেন তখন মেহদী হাসান খান সফটওয়ারটি দিচ্ছেন সম্পূর্ণ বিনামুল্যে! অভ্র সহজ করে বাংলা লেখার মাধ্যম হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমরা লিখছি আমাদের মায়ের ভাষায়। মেহদী’র সাথে রিফাত-উন-নবী, তানবিন ইসলাম সিয়াম, রাইয়ান কামাল, শাবাব মুস্তফা এবং নিপুন হক এর মতো এক ঝাঁক তরুণ এখন যোগ দিয়েছে অভ্র'র দলে। অভ্র’র কর্মীরা অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে বাংলা ভাষা লেখার প্রকৃয়াকে আমাদের জন্য আরো সহজ ও সাবলীল করে তুলতে।
মেহদী’র এই অবদান শুধু যে ভাষার জন্য অবদান তা নয়! মেহদী এখন আগামীর তরুণদের জন্য অনুসরনীয় এক চরিত্র। শুধুমাত্র ইচ্ছা আর একাগ্রতা থাকলেই মানুষ যে, যেকোনো কাজ করে ফেলতে পারে মেহদী তা প্রমাণ করেছে। ডাক্তারী পড়াশোনা করেও গড়ে তুলেছে অভ্র’র অমিক্রন ল্যাব। মেহদী ও অভ্র’র দল কি বাংলা ভাষার জন্য অতীব গুরত্বপূর্ণ এই অবদানের জন্য একুশে পদক পেতে পারে না?
[লেখাটি একই সাথে নতুন দেশ এ প্রকাশিত-http://www.notundesh.com/motmotantor.html]
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:৫৪