...the thing is to find a truth which is true for me, to find the idea for which I can live and die... (Søren Kierkegaard)
মানুষের গভীরতম আকাঙ্খার নাম কী?
অর্থ নয়- কীর্তি নয়- সচ্ছলতা নয়! কী সেই বিপন্ন বিষ্ময়য়ের বোধ, কী সেই চুড়ান্ত চাওয়া মানুষের!
Shangri-La, Tibet
অস্তিত্ত্ববাদ নিয়ে কাজ করা দার্শনিকেরা কি ভাবেন? মানুষের আবেগ, কাজ, চিন্তা, দায়বোধ কি নিয়ে ঘুরপাক খায় নিত্য? কি ভাবতেন জন পল শার্তে, নীটশেরা? জীবনের অর্থহীনতার সাথে মানুষের প্রতিনিয়তঃ নিরব লড়াইয়ের কথা ভেবেছেন প্যাসকেল।দার্শনিকদের তত্ত্ব কথা বাদ, বাদ থাকুক গল্পকার কাফকা বা দস্তয়ভস্কির স্বসৃষ্ট আত্মপরিচয়ের সংকটের কথাও, আসুন আমরা নিজেরা ভাবি- অর্থ খুজি জীবনের।
সারা জীবন ধরে কি খুজে মানুষ? সমস্ত জীবন শেষে সমস্ত কর্মযজ্ঞ শেষে আরও কি যেন এক চাওয়া বাকী থাকে মানুষের, এই পৃথিবীর কাছে, পৃথিবীর মানুষের কাছে! প্রতিটি মানুষেরই থাকে কি যেন এক দাগ কেটে যাওয়ার প্রবনতা।
সেদিন হঠাৎ ই-চিঠি পেলাম আমার চীনা বন্ধু ইকো'র কাছ থেকে, কিছু ছবি আর সাথে তার গল্প। চীন-ভ্রমনে পরিচয়, নামটা আমারই দেয়া, উচ্চারনের ঝক্কি সামলাতে গিয়ে, সেও মেনে নিয়েছে।আমার সর্বশেষ হাতে লেখা চিঠিটিও তার কাছ থেকেই পাওয়া, সেটাও আবার 'পোষ্টকার্ডে'।
প্রথম পরিচয়ের পর মাত্র দু-চারদিনের ভ্রমনসঙ্গী ছিল। হঠাৎ গল্প থামিয়ে বলছিল- আমি মনে হচ্ছে তোমাকে অনেক দিন ধরেই চিনি! হতেই পারে! দুটি ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন বৃত্তে বেড়ে ওঠা দু'জন মানুষের মধ্যে কিছু মিল থাকতেই পারে, কারণ সে মানুষ। পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক তাঁর আছে কিছু সাধারণ বৈশিষ্ঠ, আছে মিলে যাওয়ার মত কিছু সাধারন চাওয়া, মিলে গেলে বন্ধুত্ব হতেও সময় লাগে না!
এরপর ই-চিঠি চালাচালি।
ঘনিষ্ঠতা।
আবার অনেকদিন যোগাযোগ বন্ধ, দুরত্ব দুজনের ব্যস্ততা, নানাবিধ কারণ।অনেকদিন!
এবার এই চিঠির বিষয়বস্তু'র ঘরে 'তিব্বত থেকে' দেখে 'spam' ভেবে মুছে দিতে গিয়ে হঠাৎ চোখ পড়লো নামের ঘরে। ইকো লিখেছে অনেকদিন পর।
My friend Wu Qian (Echo) visiting Shangri-La, Tibet
সিচুয়ান এর মেয়ে ইকো, গৃষ্ম ছুটিতে তিব্বতে গিয়ে কাজ করছে সেচ্ছাসেবক হিসেবে। উদ্দেশ্য ঘুরোঘুরি, ভ্রমন নেশাটা কিছুটা মনে হয় আমিই চাপিয়ে দিয়েছিলাম একসময়, অভিজ্ঞতা বিনিময় অরতে করতে।
এ গল্প বলার উদ্দেশ্য, আমার ভালো লাগার ধরনের উদহারণ টানতে গিয়ে। তার চিঠি পেয়ে অনেকদিন পর আমার অনেক ভালো লাগলো। ভালো লাগলো কারণ অনেকদিন পরও সে আমাকে মনে রেখেছে। কিছু আছে কি এই 'মনে রাখায়'? কোনো সঙ্গতি মানুষের চুড়ান্ত চাওয়ার সাথে?
সমস্ত জীবন শেষে কি চায় মানুষ? স্বর্গ-নরকতো অজাগতিক এবং তা 'বিশ্বাস' নির্ভর।সারা জীবন ধরে তার কর্মে, যজ্ঞে, উত্তরসুরীতে, মানুষ চায় মরে গিয়েও বেচে থাকতে, মানুষ চায় কেউ না কেউ তাকে মনে রাখুক। সারা জীবন ধরে সে খুজে কোনো অক্ষয় পাথর, কোনো অমোচনীয় কালি, রেখে যেতে চায় কিছু স্মৃতি চিহ্ন। এই চাওয়া মনে থাকতে চাওয়া, বেঁচে থাকতে চাওয়া পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে। জিয়োর্দানো ব্রোনোর অবিনশ্বর আত্মার চিন্তার সাথে কি মিল আছে এর কোনো! পুড়ছি আমরা একই আগুনে, জীবনে অর্থ খুঁজে খুঁজে!
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৩:০২