ঢাকা শহরে সম্প্রতি পুলিশের তরফ থেকে ভাড়াটিয়াদের তথ্য প্রদানের জন্য বাড়িওয়ালাদের নিকট একটি ফরম পাঠানো হয়েছে। বাড়িওয়ালারা চাপ সৃষ্টি করে ভাড়াটিয়াদের তা পূরন করতে বাধ্য করেছে। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালে সীম নিবন্ধনের মতই ভাড়াটিয়া নিবন্ধনও জায়েয বলে ঘোষিত হয়েছে। একজন হতভাগ্য ভাড়াটিয়া হিসেবে আমিও নিবন্ধিত হয়েছি। সরকারের আইন মাথা পেতে নিলেও কয়েকটি কথা ঠিক মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছেঃ
ক।
১। বাড়িওয়ালারা ভাড়াটিয়াদের মানুষের বদলে তাদের পুর্বজনমের সন্তানের মত আচরন করে। যেন ঐ জনমে পিতামাতার ভরন-পোষন দাওনি তা এই জনমে শোধ কর। শোধ করলেই হবে না, মাসের ৫ তারিখের মধ্যেই শোধ করতে হবে।
২। আমি কয়টায় বাসায় ফিরব তাও বাড়িওয়ালার ইচ্ছামতই হবে। বাবা-মা বলত সন্ধ্যার মধ্যে বাড়ি ফিরতে হবে আর বাড়িওয়ালা বলে ১১টার মধ্যে। তা না হলে গেট বন্ধ করে দিবে, জবাবদিহি করতে হবে, স্পেশাল পারমিশন লাগবে, প্রয়োজনে বাসা ছাড়ার নোটিশ দেবে ইত্যাদি।
৩। ভাড়াটিয়ার বাসায় কে বেড়াতে এল, কে গেল, কতটুকু পানি বিদ্যুৎ খরচ হলো তাও বাড়িওয়ালার জানতে হবে যদিও যাবতীয় বিল ভাড়াটিয়াই পরিশোধ করে থাকে।
৪। কত স্কয়ার ফিটের বাসার কত ভাড়া হবে তাও বাড়িওয়ালাই নির্ধারন করবে।
৫। বছর গেলেই ভাড়া বাড়াবে কিন্তু তা কোন নির্দিষ্ট পার্সেন্টেসের তোয়াক্কা না করেই, এর কোন প্রতীকার নেই।
৬। মাসের নির্দিষ্ট সময়ে ভাড়া পরিশোধ করেও কোন রশিদ বাড়িওয়ালা দেবেনা। দিলেও ১৫ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে ৫/৬ হাজারের বেশী রশিদ পাওয়া যাবে না। কারন বাড়িওয়ালা ইনকাম ট্যাক্স ফাকি দেবে এবং ভাড়াটিয়াকে চোরের সাক্ষী গাটকাটা বানাবে।কেউ দেখার নেই।
খ।
১। পৃথিবীর বহু দেশেই ভাড়াটিয়া নিবন্ধনের নাকি আইন আছে কিন্তু পৃথিবীর বহুদেশেই আমাদের মত দুর্নীবাজ পুলিশ আছে কি?
২। পুলিশের কাছে জমা পরা তথ্য অনুযায়ী কোন বাসায় বিধবা তার সন্তান নিয়ে একা থাকেন, কোন মহিলার স্বামী বিদেশে ইত্যাদি তথ্য এখন পুলিশের নখদর্পনে। এই তথ্য যে চোর-ডাকাতের কাছে বিক্রী হবে না, কিংবা নিজেরাই সুযুগমত হামলে পরবে না তার গ্যারান্টি কি?
৩।পুলিশ বলছে নিরাপত্তার কারনেই তথ্য সংগ্রহ করা কিন্তু সাধারন ভাড়াটিয়া পুলিশের কাছে তথ্য দিয়ে নিরাপদ বোধ করছে কি? যেহেতু সবাই জানে আমাদের পুলিশের প্রতি জনগনের আস্থা নেই।
৪। সব কিছুর পরেও আল্লাহ ভরসা করে তথ্য দিলাম কিন্তু এর অপব্যবহার রোধ করার কোন ব্যবস্থা কি সরকার নিয়েছে বা নিবে?
গ।
১। বাংলাদেশ হচ্ছে সেই দেশ যেখানে কিছু কুলাঙ্গার বাদে আপামর জনতা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে অথচ স্বাধীনতার পরে সেই সব কুলাঙ্গারের লিষ্ট না করে মুক্তিযোদ্ধাদের লিষ্ট করা হয়েছে। আর সেই লিষ্ট নিয়ে তেলেসমাতি আজও চলছে চলবে। ঠিক তেমনি ভাবে বাড়িওয়ালাদের লিষ্ট না করে ভাড়াটিয়াদের লিষ্ট করা একই ব্যপাড়।
২। সরকার বাড়িওয়ালাদের লিষ্ট করে, বাসা ভাড়া এলাকা এবং স্কয়ার ফিট অনুযায়ী ঠিক করে দিতে পারত। ফলে ভাড়াটিয়া ন্যায্য ভাড়ায় বাসা নিতে পারত এবং সরকারও বাড়িওয়ালাকে অটোমেটিক ভাবে ট্যাক্সের আওতায় আনতে পারত।
৩। নিদেন পক্ষে ভাড়াটিয়ার তথ্যের সাথে কত টাকা ভাড়া দেয় সেই প্রশ্নটি ফরমে রাখতে পারত। তা যেহেতু রাখেনি, তাতেই বোঝা যায় পুলিশের মুল লক্ষ্য সত্যিকারের তথ্য সংগ্রহ তো নই, আসলে বাড়িওয়ালাকে সহায়তা দান এবং প্রত্যেক ভাড়াটিয়াকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে তাদের উপর নজরদারী করা। প্রত্যেককেই জংগী বা বিরোধী শিবিরের লোক হিসেবে ট্রিট করা।
শেষে শুধু এটুকুই বলতে চাই, সরকারের/পুলিশের উচিৎ বৃহত্তর ভাড়াটিয়া জনগোষ্ঠীর বদলে ক্ষুদ্রতর বাড়িওয়ালা গোষ্ঠীর উপর নজরদারী করা। তাদের আয়-ব্যয় এবং ট্যাক্স ফাইলের দিকে নজর দেয়া। আর যদি ভাড়াটিয়াদের তথ্য নিতেই চান তাহলে নিদেনপক্ষে কত টাকা ভাড়া দিয়ে থাকেন- এটি জানার চেষ্টা করুন। তাহলেই সরকারের আয় বাড়বে, সেই টাকায় পুলিশসহ অন্যান্য সরকারী কর্মচারীর বেতন-ভাতা বাড়ানো সম্ভব হবে। আর ভাড়াটিয়া নামক অসহায় জনগোষ্ঠীর কিছুটা যন্ত্রনা লাঘব হবে।
জানি, আমার কথায় কিছু হবে না তবু বলে একটু হালকা হলাম। কাউকে না কাউকে আঙ্গুল তুলতেই হবে। সাধারনের কথিত ভোটে নির্বাচিত সরকারের অসাধারনকে ফেবার করার এই মানসিকতা বর্জনীয়। তা না হলে এক সময় বুমেরাং হতে বাধ্য, তা যতদিন পরেই হোক না কেন!