somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কায়েশ খান
প্রোপ্রাইটর- ট্যুরমেট, সদস্য- ট্যুর অপারেটর্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব), সাধারণ সম্পাদক - ট্যুরিষ্ট গাইড এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টিগ্যাব) । তবে, ট্যুর গাইড হিসেবেই নিজের পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করি।

শাস্তিমূলক বদলিঃ খাগরাছড়ি, রাংগামাটি, বান্দরবানকে মাফ করে দিন!

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৬/৭ বছর আগের কথা...
বান্দরবানের নীলগিরি রিসোর্টটি তখনো জনপ্রিয়তা পায়নি।যদিও নীলগিরি বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর একটি রিসোর্ট। এই রিসোর্টে যেতে যেতে আপনি পাহাড়ি সৌন্দর্যে মুগ্ধ না হয়ে পারবেন না। রিসোর্টটি নিজেও অপার সৌন্দর্য্যের আধার। তবু জনপ্রিয়তা না পাওয়ার মূল কারন সেনাবাহিনীর প্রাধান্য। অনেকবার দেখা গেছে বুকিং দেয়ার পরেও সেনাবাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে প্রায়ই কনফার্ম বুকিং ও বাতিল হয়ে যেত স্বল্প সময়ের নোটিশে। ফলে ট্যুর কোম্পানিগুলু নীলগিরি রিসোর্টটির ব্যপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। অবস্থার উন্নতীকল্পে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে তৎকালীন জিওসি টোয়াব সভাপতির মাধ্যমে কতিপয় ট্যুর কোম্পানীকে ফ্যাম ট্যুরের জন্য দাওয়াত করে। Tour Operators Association of Bangladesh TOAB এর সভাপতি জনাব হাসান মনসুরের নেতৃত্বে প্রায় ২৫ জন ট্যুর অপারেটর সেই দাওয়াতে নীলগিরি রিসোর্টে যান। আমি নিজেও একটি কোম্পানীর প্রতিনিধি হিসেবে সেই দলে ছিলাম। একরাত এক দিনের সেই প্রোগ্রামটি নানা আয়োজনে সমৃদ্ধ ছিল। এর মধ্যে ছিল আনুষ্ঠানিক বৈঠক, পেপার প্রেজেন্টেশন এবং পাহাড়ি শিল্পীদের আয়োজিত একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগদান। সেই ফ্যাম ট্রিপটি সফল হয়েছিল এবং তারপর থেকেই মানুষ ট্যুরকোম্পানীদের মাধ্যমে নীলগিরি রিসোর্টে বেড়াতে যেতে শুরু করে। ঐ অনুষ্ঠান চলাকালেই আমি এক পর্যায়ে এক আর্মি সিপাহীর সাথে বন্ধুত্ব গড়ার চেষ্টা করি। উদ্দেশ্য তার কাছ থেকে সত্যিকারের কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য যোগার করা ইত্যাদি। আলাপের এক পর্যায়ে তরুন সিপাহীর মুখ থেকে তার কিছু কথা শুনে যারপরনাই অবাক হয়েছিলাম। সে আমার একটা আলাদা দৃষ্টিশক্তি খুলে দিয়েছিল। সংক্ষেপে তার বক্তব্য ছিল-
স্যার আপনারা বা আপনাদের মত শহুরে লোক যখন এখানে এসে ওয়াও! বিউটিফুল! দারুন! ইত্যাদি শব্দে আনন্দ প্রকাশ করেন তখন আমার ইচ্ছে হয় তাদের গুলি করে দেই! আমি বিস্ময়ে অবাক হয়ে যাই তার কথা শুনে। আমি আলাপ করার ইচ্ছা হারিয়ে ফেললেও সিপাহীটি আমাকে শান্তনার সূরে বলে, মন খারাপ করবেন না। আপনি ভাল মানুষ তাই আপনাকে বললাম। কাউকে আমার মনের কথা বলতে না পেরে ফাপর লাগছিল। আজ একটু হালকা হলাম। আমি কিন্তু তখনো ঐ সিপাহির মানসিকতা ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি। সে বুঝতে পেরে নিজেই আমাকে পরিষ্কার করল। সে বলল, স্যার! কখনো কি কাউকে বলতে শোনেননি যে, "তোকে বান্দরবান বদলী করব" নিশ্চই শুনেছেন। সরকারী - বেসরকারী অফিসে এটি নিয়মিত শোনা যায়। কর্তৃপক্ষ কোন কারনে অসন্তুষ্ট হলেই হুমকি দেয় বান্দরবানে বদলী করে দেব। হয়তো আপনি নিজেও এরকম বলেছেন। আমি (সে) নিজেও সেরকম বদলীর শিকার। এমনিতেই পাহাড়ি সৌন্দর্য্য দুই/তিন দিনের বেশী কারোরই ভাল লাগে না তার উপরে শাস্তিমুলক বদলী। এখানে একটা ব্লেড কিনতেও বান্দরবান শহরে যেতে হয়, সাঙ্গু নদী থেকে পর পর ৩ টা পানির পাম্প চালিয়ে পানি পাম্প করতে হয় ইত্যাদি। তদুপরি রয়েছে শান্তিবাহিনী তথা পাহাড়ি বিভিন্ন সশস্র গ্রুপ, যাদের নিয়ন্ত্রনে রাখতে উচু-নীচু ঢাল বেয়ে ঝোপ-জংগল চষে পেট্রল ডিউটি। অতএব, রোজ রোজ ওয়াও জাতীয় আদিখ্যেতা আর ভাল লাগে না। জানিনা কবে কাকে গুলি করে দেই!

আমি লোকটির কথায় একাধারে বিস্মিত এবং হতবাক হয়ে যাই। মনে মনে খানিকটা রাগ হলেও ঘটনার বাস্তবতা আমার মনে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। কথাগুলি বহুদিন মনের ভেতরেই রেখে দিয়েছিলাম। আজকের পত্রিকার একটি খবর বিষয়টিকে আবার আমার সামনে নিয়ে আসে।

এটি গত সপ্তাহের ঘটনা। কৃষি দপ্তরের একটি ভবনে লোহার রডের যায়গায় বাশের ফাল্টা ব্যবহার করা হয়েছে, মানে রডের টাকা মেরে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার এবং প্রকৌশলী পরস্পর যোগসাজসে। ভাগ্যিস বড় কোন দুর্ঘটনার পূর্বেই বিষয়টি ধরা খেয়েছে যা এখন চায়ের টেবিল থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় টক অব দ্য টাউন।

আজকের পত্রিকায় দেখলাম সংশ্লিষ্ট সেই কর্মকর্তাকে খাগড়াছরি বদলী করা হয়েছে। আমার প্রশ্ন হলো বাংলাদেশের ৩টি পার্বত্য জেলা যথাক্রমে খাগড়াছরি, রাংগামাটি ও বান্দরবান। জেলা ৩টি পাহাড়ি হওয়ায় জীবন যাত্রা সেখানে তুলনামুলকভাবে অনুন্নত। নাগরিক সুবিধা অপ্রতুল কিন্তু অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভুমি। একজন পর্যটন কর্মী হিসেবে বলতে পারি, জেলা ৩টি পর্যটন শিল্পের জন্য অপার সম্ভাবনাময় বটে। ইতিমধ্যেই জেলা ৩ টিতে সরকারী এবং বেসরকারী উদ্যোগে বেশকিছু পর্যটন সেবা মুলক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে এবং আরো অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে যাচ্ছে। বিদেশী পর্যটক তো বটেই দেশী পর্যটকদের নিকটও জেলা ৩টির রয়েছে ব্যাপক আবেদন। এহেন পর্যটন সম্ভাবনাময় যায়গাকে প্রশাসন শাস্তিমুলক বদলী করার ক্ষেত্র হিসেবে বাছাই করে কোন আক্কেলে? বৃটিশ আমল গেছে, পাকিস্তান গেছে, স্বাধীন বাংলাদেশে কেন এই ধরনের কলোনীয়ান চিন্তা ভাবনা। তাছাড়া বর্তমানে খাগড়াছরি, রাংগামাটি ও বান্দরবান ততটা অনুন্নতওতো নয়। যোগাযোগ সহ অন্যান্য ইনফ্রাষ্ট্রাকচারও অনেক বেটার। একজন পর্যটন কর্মী হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের কাছেই বিষয়টি বেদনাদায়ক এবং অনভিপ্রেত। যেখানে এই ৩ টি জেলায় পর্যটন বান্ধব কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিয়োগ দান জরুরী, প্রয়োজনে এই তিন জেলায় কর্মরতদের দেয়া উচিৎ বিশেষ উৎসাহ ভাতা যাতে করে তারা পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে আন্তরিক ভূমিকা রাখতে পারেন।

তাই এবিষয়ে প্রশাসন, পর্যটনমন্ত্রী এবং স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সহ সংশিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করে এটুকুই বলতে চাই -
শাস্তি দিতে চান জেল হাজতে পাঠান কিন্তু কোনভাবেই পর্যটন সম্ভাবনাময় খাগড়াছরি, রাংগামাটি ও বান্দরবানে দোষী-দাগী কর্মকর্তাদের বদলী করা চলবে না।

এই তিন জেলার মানুষদের নিকটও আমার আবেদন- বিষয়টি গভীরভাবে ভাবুন এবং লক্ষ রাখুন যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের হঠকারী কর্মকর্তাদের পদচারনা যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভুমি খাগড়াছরি, রাংগামাটি ও বান্দরবানে আর না পরে।

TOAB নেতৃত্বের কাছে অনুরোধ, বিষয়টি নিয়ে ভাবুন। পর্যটন শিল্পের স্বার্থে বিষয়টি রাষ্ট্র এবং জনগনের সামনে উপস্থাপন করা জরুরী বলে মনে করি।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:১৬
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন পড়বেন, ফিকাহ জানবেন ও মানবেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:০০



সূরাঃ ৯৬ আলাক, ১ নং থেকে ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১। পাঠ কর, তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন
২।সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক’ হতে
৩। পাঠ কর, তোমার রব মহামহিমাম্বিত
৪। যিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

মত প্রকাশ মানে সহমত।

লিখেছেন অনুপম বলছি, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৭

আওয়ামী লীগ আমলে সমাজের একটা অংশের অভিযোগ ছিলো, তাদের নাকি মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই। যদিও, এই কথাটাও তারা প্রকাশ্যে বলতে পারতেন, লিখে অথবা টকশো তে।

এখন রা জা কারের আমলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

×