ঈমানদার অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী - কথাটি শুধু মুখের কথায় সীমাবদ্ধ নয়।
এর সাথে শর্ত যুক্ত আছে। যেমন আপনি যদি ইসলামের কথাই ধরেন তাহলে ইসলামে ঈমানের অর্থ হলো, "আল্লাহ এক এবং অদ্বিতীয় পরম স্বত্তা। হযরত মুহাম্মদ সঃ তার প্রেরিত রাসুল এবং বান্দা"- কথাটিকে মুখে স্বীকার করা, অন্তরে গভীরভাবে বিশ্বাস করা এবং জীবন-যাপনে অর্থাৎ কার্য্যক্ষেত্রে তা প্রমান করা। এই তিন অবস্থার সমন্বয়ে জীবন যাপন কারীকে মুসলমান বলা হয়। মুসলমানের আরেক সংক্ষিপ্ত সংজ্ঞা হচ্ছে যিনি নিজের ইচ্ছাকে আল্লাহর নিকট সমর্পন করেছেন বা যিনি সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। একথাটিকে মানতে গেলেই প্রশ্ন আসে নিজের ইচ্ছাকে আল্লাহর নিকট সমর্পন করা বলতে আসলে কি বোঝায়? এর উত্তর হচ্ছে মুখে আল্লাহ-রাসূল সঃ কে স্বীকার করার পরেই তা অন্তরে বিশ্বাস করা এবং কাজে প্রমান দেয়ার শর্তদু'টি হাজির হবে।
উক্ত দু'টি শর্তের মানে হলো -
১। অন্তরে আল্লাহ-রাসূলের প্রতি গভীর বিশ্বাস বা অনুরাগ আসলে উপলব্ধির বিষয়। তা অর্জন করার জন্য নিয়মিত মোরাকাবা মোশাহেদা, ত্যাগ-সাধনা এবং ঐকান্তিক প্রয়াস নিয়ে, উপযুক্ত ওস্তাদ/গুরুর সহায়তায় সুনির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি মেনে, অন্তরে আল্লাহ-রাসূলের অনুভব সৃষ্টি করা এবং তাকে লালন করা। একাজ কেউ কোনদিন উপযুক্ত ওস্তাদবিনে করতে পারেনা, পারবেও না।
২। একবার অন্তরে আল্লাহ-রাসূলের অস্তিত্ব উপলব্ধ হলে তারই আলোকে কন্টকময় এই মানব জীবন অতিবাহিত করা।
এতো গেল মুল কথা। এর পাশাপাশি যখনই একজন মুখে আল্লাহ-রাসুলকে স্বীকার করবে তৎক্ষণাৎ তার উপর শরীয়তের সকল বিধি বিধান মেনে চলার দায় আরোপিত হয়ে যাবে যেমন আরকান-আহকাম, নামায-রোজা, হজ্ব-যাকাত ইত্যাদি। এছাড়া মিথ্যা বলা, চুরী-ডাকাতি করা, জ্বেনা বা ব্যভিচার করা, নাহক খুন করা ইত্যাদি বাকী জীবনের জন্য বন্ধ। সেই সাথে হারাম-হারাম বেছে চলা, ভাল কাজের আদেশ, মন্দ কাজে নিষেধ সহ যাবতীয় ফরজ, ওয়াজীব, সুন্নাত, নফল, মুস্তাহাব ইত্যাদির প্রতি সংবেদনশীল থেকে জীবন যাপন করা আবশ্যক। তদুপরি নিজ দেশের রাষ্ট্রীয় আইন এবং সামাজিক মুল্যবোধ মেনে চলাও ইসলামের অন্যতম বৈশিষ্ট। আমি খুবই সংক্ষেপে মুলনীতিটুকু বর্ননা করলাম, বাকী রয়ে গেল মহা গ্রন্থ আল কোরান, হাদীস সংকলন সমুহ এবং বোজর্গ আলেম এবং আল্লাহর নিয়ামত প্রাপ্ত ওলীয়াল্লাহ গনের প্রদর্শিত পথ, ফেকাহ শাস্ত্র ইত্যাদি।
এখন বলুন, উপরোক্ত নিয়ম-কানুন মেনে চলা কয়জন সাধারন মুসলমান এই সমাজে আপনি দেখতে পান বা আমি আপনিই বা এর কতটুকু মেনে চলছি? অথচ মুসলমান বিশ্বাস করে তার এই মানবীয় জীবন শেষে মৃত্যুর মধ্যদিয়ে এক অনন্ত জীবন শুরু হবে যার সুখ-দুঃখের মাপকাঠি হবে তার যাপিত জীবনের নিরীখে।
প্রতিটি আইন/হুকুম মেনে চলার জন্য যেমন রয়েছে পুরষ্কার প্রাপ্তির আশ্বাস তেমনি অমান্য করার জন্য রয়েছে শাস্তির সতর্কবার্তা। মুসলমান দাবী করে ইসলাম মেনে না চলার মধ্যে রয়েছে ভয়ংকর অপরাধ মোনাফেকী। আর মোনাফেক বেঈমানের চেয়ে খারাপ।
পক্ষান্তরে যারা আল্লাহ বা সৃষ্টিকর্তাকেই অস্বীকার করে অর্থাৎ স্বঘোষিত নাস্তিক তারা কিন্তু নিজ অবস্থানে অটল থাকে, আল্লাহ-রাসুল মানে না তাই আল্লাহ-রাসুলের কোন দায়ও তাদের উপর বর্তায় না। তারা আর যাই করুক, আল্লাহ-রাসুলের বিরোধীতা করতে পারেনা কেননা তারা তো আল্লাহ-রাসুলের অস্তিত্বই স্বীকার করে না।
সুতরাং ধর্মের ক্ষতি নাস্তিকের তুলনায় কথিত আস্তিকেরাই বেশী করে থাকে, করছে এবং করবে। তাদের বগলে ইট, মুখে শেখ ফরীদ। তাই আমি মনে করি ধর্মের জন্য যদি কারো জীবন নিতে হয় তাহলে নাস্তিকের নয় মোনাফেকের কল্লাই আগে কাটা উচিৎ। আর সমাজ থেকে মোনাফেকের অস্তিত্ব বিদায় করতে হলে ঠগ বাছতে গা উজার হওয়ারই অবস্থা হবে। তাই আখেরী জামানার ফেতনা থেকে বেচে থেকে নিজের জীবন যথাসম্ভব সুন্দরভাবে পরিচালনা করাই যুগের দাবী, তথাকথিত জেহাদের নামে মানুষ হত্যা কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়।
যেখানে রাষ্ট্রের মাথা রাজনীতিবিদ থেকে রিকশাওয়ালা পর্যন্ত সবাই নির্দ্বিধায় মিথ্যা বলে সেখানে ধর্ম নিয়ে মিটিং-মিছিল আর তথাকথিত জেহাদ নিতান্তই হাস্যকর। ( প্রসঙ্গের তুলনায় আলোচনা নিতান্তই অপ্রতুল হলো, সময় সুজুগ মত ডিটেইল লিখার ইচ্ছা থাকল)