সে ছিল সেইসব দুর্ভাগা অতীব সুন্দরী মেয়েদেরই একজন যে কিনা ভুল করে একজন কেরানি বাবার ঘরে জন্ম নিয়েছিল। তার বাবার ছিল না যৌতুক দেওয়ার সামর্থ্য, এমনকি তার বিয়ে নিয়ে ছিল না বাড়তি কোন আবেগ-উচ্ছ্বাস কিংবা প্রত্যাশা। তাদের ছিল না ধনী ও সমভ্রান্ত কোন পরিবারের সাথে জানাশুনা ও খাতির। এজন্য সেসব পরিবারের পুরুষের সাথে তার প্রেম কিংবা বিয়ের কোন সম্ভাবনাও ছিল না। অতএব, ফলাপল স্বরুপ যা হবার তাই ঘটল; বিয়ে হলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সামান্য কেরানির সাথে।
বিয়ের পরও তার পোষাক-পরিচ্ছদ খুব সাদামাটা ছিল; কেননা একজন ছাপোষা কেরানির বউ হিসাবে এরচেয়ে ভাল পোষাক পরার সামর্থ্য তার ছিল না। কিন্তু উচ্চভিলাসী মানসিকতার জন্য ভেতরে ভেতরে সে ছিল ভীষণ অসুখী; বিষয়টি অনেকটা এরকম-
"যেন কোন স্বর্গের দেবী পথ ভুলে পৃথিবীতে এসে পড়েছে।"
এমন একটি পরিবারে তার জন্ম হয়েছে যেখানে রূপ-লাবণ্য, সৌন্দর্য-কমণীয়তার জন্য না আছে কদর, না আছে মর্যাদা। শুধুমাত্র সন্তান জন্ম দেওয়া, তাদের লালন পালন করা আর সংসারের ঘানি টেনে নেওয়াটাই এখানে একমাত্র কাজ।
তার মতে, "মেয়েদের কমনীয়তা, সহজাত লাবণ্যপ্রভা, চটপটে আর তুখোড় মেধাই তাদের মর্যাদার পরিচয় বহণ করে, আর এসব গুণাবলী থাকলে একটি সাধারন দরিদ্র পরিবারের মেয়েও হয়ে উঠতে পারে সমাজের একজন প্রভাবশালী সম্মানিত মহিলা।"
এজন্য নতুন বিবাহিত বউটা সব সময় মনমরা হয়ে থাকতো; স্বামী, সংসার কোনটিতেই তার আগ্রহ কিংবা আনন্দ ছিল না। ঘরের শ্রীহীন অবস্থা, শ্যাওলা পড়া পুরাতন দেয়াল, রং উঠে যাওয়া পুরাতন চেয়ার আর পুরাতন হয়ে যাওয়া ঘরের কমদামী পর্দাগুলো তাকে দুঃখ দিত। এগুলো তাকে ভিতরে ভিতরে নিঃশেষ করে দিত, অপমানিত করতো; যদিও তার সমমর্যাদার অনেক মেয়েই এ বিষয়গুলো নিয়ে তেমন একটা ভাবতো না, হয়তো বা তেমন সচেতনও ছিল না।
লিটল ব্রিটেনের মেয়েটি যে কিনা তার ছোট্ট বাড়িটিতে কাজ করতে এসেছিল, মেয়েটির নানান গল্প তার ছাইচাপা দেওয়া মনকে উসকে দিত, কষ্টে আর অপমানে তার হৃদয়টা ভেঙ্গে খান খান হয়ে যেত। সে কল্পনা করতো; একটি শান্ত-সুনিবিড় চমৎকার কারুকাজের একটি বাড়ির, প্রাচ্য দেশীয় পশমী কাপড়ের তৈরী রঙিন কাপড়ে ঢাকা তার ঘরের দেয়াল, দামী কাঠের আসবাবপত্র ইত্যাদির। ব্রোঞ্জের তৈরী লম্বা লম্বা ঝাড়বাতিতে আলোকিত ঘর, অতিথি অভ্যর্থনা আর টেবিলে খাবার পরিবেশনের জন্য দু'জন সজ্জিত আয়া। এছাড়াও সে স্বপ্ন দেখতো, উন্নত কারুকাজে সজ্জিত একটি অতিথিশালার; মনোমুগ্ধকর ও সুগন্ধিতে মৌ মৌ করা ছোট্ট দু'টি অভ্যর্থনা ঘর, যেখানে ঘনিষ্ট বন্ধু-বান্ধব ও বিখ্যাত সেলিব্রিটিদের নিয়ে আয়োজন করা হবে ছোট ছোট পার্টি। যা দেখে অন্য মেয়েরা হিংসায় জ্বলে পুড়ে মরবে!
তিন দিনের ব্যবহৃত কাপড়ে ঢেকে রাখা গোলাকার টেবিলটিতে বসে যখন মেয়েটির স্বামী খুব উচ্ছ্বাস নিয়ে স্যুপের বাটির ঢাকনা খুলতে খুলতে বলছিল, "আহ! দারুণ স্বচ্ছ স্যুপ!! এর চেয়ে ভাল আর কি হতে পারে?"
অথচ মেয়েটি সে সময় স্বামীর মুখোমুখী বসে স্বপ্ন দেখছিলো দারুন সুস্বাদু কিছু রুচিকর খাবারের, ঝলমলে রুপোর বাসন-কোসনে খাবার পরিবেশনের, দেয়াল জুড়ে সাজানো রেশমি কাপড়ের ক্যানভাসে আঁকা কোন চিত্রকর্ম; সে গুনগুন করে গান গাইছে আর ট্রাউট মাছের সুস্বাদু ঝোল অথবা তিথিরের ডানার মাংসের স্বাদ নিতে নিতে তার সুন্দর মুখটিতে মিষ্টি হাসির ঢেউ উঠছে।
কেরানির সুন্দরী বউটা বারবার শুধু ভাবে, তার নেই কোন ভাল পোষাক, নেই কোন গহনা; শুধু নেই আর নেই! অথচ এই জিনিসগুলোই সে খুব ভালবাসতো; সব সময় তার মনে হতো এসবের জন্যই তার জন্ম হয়েছে। সে চাইত খুব ধনী হতে, ঈর্ষার পাত্রী হতে, অন্যের কাছে খুব আকাঙ্খিত হতে; এগুলো ছিল তার কাছে সুখি হওয়ার প্রধান উপাদান।
হঠাৎ মনে পড়লো স্কুলে পড়াকালীন সময়ের তার এক বান্ধবীর কথা। তারা ছিল খুবই ধনী আর অভিজাত বংশের। ওদের বাড়িতে কোন নিমন্ত্রণ পড়লে সব সময় সে নানা ছুঁতোয় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করত; কেননা যিদিন ওদের বাড়িতে যেত, সেখান থেকে ফিরেই সে খুব মর্ম পীড়ায় দগ্ধ হতো। প্রচন্ড দুঃখে, অনুতাপে, হতাশা আর যন্ত্রণায় সে সারা দিন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেদে কেটে অস্থির হয়ে যেত।
একদিন সন্ধ্যায় তার স্বামী হাতে বড় একটি খাম নিয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরলেন। বউকে সামনে পেয়েই বলে উঠলেন, "দেখো কি নিয়ে এসেছি তোমার জন্য?"
বউ দ্রুত খামটি খোলে সুদৃশ্য কার্ডখানা বের করলো। তাতে লেখা, "আগামী ১৮ জানুয়ারি রোজ সোমবার, সন্ধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় এবং মিসেস রামপনিউ; ম্যাচিলদ্ ও মাদাম লাইজেল এর সদয় উপস্থিতি কামনা করছি।"
স্বামী লাইজেল ভেবেছিলেন দাওয়াত পেয়ে প্রিয়তমা আনন্দে আত্মহারা হয়ে লাফিয়ে উঠবে; কিন্তু না এর কিছুই ঘটল না। বউটা বিরক্ত হয়ে কার্ডটি ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো, "এটা দিয়ে আমি কি করবো?"
"কেন? কি করবে মানে!!" একটু মেজাজ দেখিয়ে উত্তর দিল লাইজেল।
আমি তো ভেবেছিলাম তুমি খুব খুশি হবে। এত বড় আয়োজনে তো তুমি কখনো যাও নাই। এমন সুযোগ জীবনে সব সময় আসবে না। জানো, এই আমন্ত্রন পত্র পাওয়ার জন্য আমি প্রচন্ড কষ্ট করেছি। আমার সব কলিগও এই দাওয়াতটি পেতে উদগ্রীব ছিল। কিন্তু এ আয়োজনটি নির্দিষ্ট কিছু মানুষের জন্য হওয়ায় তাদের অনেকেই দাওয়াত পায় নাই।
জানটু, "পার্টিতে অনেক বিখ্যাত মানুষজন আসবে।"
"একবারও কি ভেবেছ তুমি, এই অনুষ্ঠানে আমি কী পরে যেতে পারি? তোমার তো দেখছি এ বিষয়ে কোন ভাবনাই নেই!", রাগে, দুঃখে কান্না জড়িত কণ্ঠে তোতলাতে তোতলাতে বললো সে।
"কেন?"
"যে পোষাকটি পরে তুমি থিয়েটারে যাও; আমার কাছে ঐ পোষাকটা কিন্তু দারণ লাগে।"
প্রিয়তমা বউকে এভাবে কাঁদতে দেখে বোকা হয়ে গেল লাইজেল। এমন পরিস্থিতি তার প্রত্যাশিত ছিল না, নিজেকে একজন অসহায় আর বোকা মানুষ লাগছিল তার। বউকে কি বলবে বা এমন পরিস্থিতি কিভাবে সামলাতে হয় জানা নেই তার। গোল গোল চোখের বড় বড় দু'ফোটা জল চোখের কোণা বেঁধ করে মসৃণ গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়তে লাগলো।
"বউ, কি হয়েছে তোমার; হয়েছেটা কি?" তোতলাতে তোতলাতে জানতে চাইল লাইজেলে।
"নাহ! কিছুই হয়নি আমার, আমার তো সেরকম পোষাকই নেই; তাই পার্টিতে যেতে পারছি না। তুমি বরং আমন্ত্রন পত্রটি তোমার কোন বন্ধুকে দিয়ে দাও, যার বউ সাজলে আমার চেয়েও অনেক সুন্দরী দেখায়া!" মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা তীব্র ব্যাথাটি দমিয়ে রেখে উত্তর দিল বউ।
বউয়ের এমন কথা শুনে কষ্টে লাইজেলের হৃদয়টা ভেঙ্গে গেল।
"ম্যাথুয়েঁ, একটি মানানসই পোষাকের দাম কত হতে পারে? যেটি তুমি অন্য কোন অনুষ্ঠানেও পরতে পারবে? একেবারে কমদামী নয়, বলতে পার মাঝারি মানের।"
ম্যাথুয়েঁ কয়েক সেকেন্ড গভীর মনযোগে বিষয়টি নিয়ে ভাবলো; চিন্তা করলো পোষাকের সম্ভাব্য দাম নিয়ে। আরেকটি কথা মনের মাঝে উদ্রেক হলো, দাম বেশি হলে কেরানি স্বামী সাথে সাথে অসম্মতি জানাবে। এজন্য দামটি হতে হবে মানানসই। একটু দ্বিধান্বিত হয়ে উত্তর দিল, "আমি ঠিক জানি না, তবে মনে হয় চারশো ফ্রা হতে পারে।
টাকার পরিমাণ শুনে স্বামী লাইজলের মুখটা কিছুটা মলিন হয়ে গেল। এই পরিমাণ ফ্রা তার কাছে আছে, তবে সে টাকাগুলো জমিয়ছিল একটি বন্দুক। ইচ্ছে ছিল আসছে গ্রীষ্মে বন্ধুদের নিয়ে ন্যানথের মভুমিতে শিকারে যাবে; প্রতি রবিবারে বন্ধুরা মিলে সেখানে লারক্ পাখি শিকার করবে। সবশেষে নিজের সখকে মাটি চাপা দিয়ে ম্যাথুয়েঁকে বললো, "ঠিক আছে আমি, তোমাকে চারশো ফ্রা দেব, তবে এই টাকার মধ্যেই তোমাকে খুব সুন্দর একটি পোষাক কিনতে হবে।"
বোল পার্টির তারিখ যত ঘনিয়ে আসতে লাগলো লাইজেলকে আরো বিষন্ন, অস্থির ও উদ্বীগ্ন লাগছিল! অথচ তার পোষাক তৈরী ছিল!! বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে ঐ দিন সন্ধে বেলা লাইজেল জাতে চাইলো, "বউ, তোমার কি হয়েছে একটু খোলাসা করে বল তো? গত তিনদিন থেকে তোমাকে খুব অস্বাভাবিক লাগছে!"
"আমার আবার অবস্থা! বলতে পার যাচ্ছে তাই। তিনদিন পরে পার্টি অথচ পরার মতো কোন অলংকার আমার নেই, গলায় পরার জন্য নেই কোন হার। আমার বরং পার্টিতে না যাওয়াই ভাল!"
"তুমি ফুলের মালা পরতে পার। বছরের এ সময়টাতে ফুলের তৈরী অলংকার দেখতে বেশ লাগে; তোমাকে কিন্তু দারুণ মানাবে। দশ ফ্রা'তে তুমি অনায়াসে ২-৩ টি চমৎকার গোলাপ পেয়ে যাবে।"
না, ম্যাথিয়ঁকে এসব সস্তা কথায় খুশি করা গেল না।
তার এক কথা, "এত ধনী মহিলাদের মাঝে নিজেকে হত দরিদ্র হিসাবে উপস্থাপন করা মোটেও কাম্য নয়।"
বউয়ের অনড় অবস্থা দেখে লাইজেল কান্নাজড়িত কণ্ঠে চিৎকার করে বলে উঠলো, "দেখো, তুমি কত বোকা! যাও, মিস্ ফরেস্টিয়ারের সাথে দেখা করে কিছু অলঙ্কার ধার করে নিয়ে আস। তোমার সাথে তার যেমন হৃদ্যতার সম্পর্ক, ধার চাইলে তোমাকে ফিরিয়ে দেবে না, নিশ্চিত আমি।
" তুমি ঠিকই বলেছো, আমি তো তার কথা ভেবে দেখিনি।"
দেরী না করে ঠিক পরের দিন ম্যাথিয়েঁ বান্ধবীর সাথে দেখা করে গহনা ধার চাইলো। ফরেস্টিয়ার তার ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে একটি বাক্স তুলে এনে লাইজেলকে বললো, "বেছে নাও বন্ধু, তোমার যে গয়নাটা পছন্দ হয়।"
ম্যাথিয়েঁ প্রথমে কিছু ব্রেসলেট দেখলো, এরপর একটি মুক্তার হার, সবশেষে একটি নিপুন কারুকাজে সমৃদ্ধ রত্ন খচিত ভেনিসীয় একটি ক্রস দেখলো। অলংকারগুলো পরে আয়নার সামনে গিয়ে ট্রায়াল দিতে লাগলো। বুজতে পারছিল না কোনটি নেবে; অথবা এগুলো তার পোষাকের সাথে মানানসই হবে কিনা?
ম্যাথিয়েঁ অলঙ্কারগুলো বাক্সের মধ্যে রাখতে রাখতে জানতে চাইলো, এগুলো ছাড়া আর নেই?"
"আছে তো, তুমি নিজেই বেছে নাও। আমি তো জানি না কোনটি তোমার সবচেয়ে বেশি পছন্দ হবে।" উত্তর দিল ফরেস্টিয়ার।
ম্যাথিয়েঁর হঠাৎ কালো রেশমি কাপড়ে মোড়ানো একটি হীরের হার চোখে পড়লো; হারটি দেখে এতো পছন্দ হয়েছিল যে, এটি পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষায় তার বুকে ধুক ধুক কাঁপুনি অনুভূত হলো। দ্রুত হারটি গলায় পরে আয়নার সামনে যেতেই বেশ পুলকিত হলো সে। কিছুটা দ্বিধা আর শংকা নিয়ে জানতে চাইলো, "তুমি কি আমাকে এই হারটা ধার দিতে পারবে? শুধু এটি হলেই চলবে আমার।"
"হ্যা, অবশ্যই৷"
সম্মতি পেয়ে ম্যাথিয়েঁ খুশিতে আটখানা হয়ে বান্ধবীর বুকে উপুড় হয়ে পড়ে সজোরে আলিঙ্গন করলো! পরে অলঙ্কারটি সাথে নিয়ে বাড়ি ফিরলো।
পার্টির দিনটি চলে এলো। ম্যাথিয়ে যখন বোল পার্টিতে উপস্থিত হলো তখন উপস্থিত সবার দৃষ্টি সে কেড়ে নিল। তার সরব উপস্থিতির ফলে মেয়েদের মধ্যে তাকে সবচেয়ে সুশ্রী, রুচিশীল, মার্জিত ও হাসিখুশি দেখাচ্ছিল। সুদর্শন পুরুষরা অপলক দৃষ্টিতে তার পানে চেয়ে রইলো, কাছে এসে নাম জানতে চাইলো, পরিচিত হতে আগ্রহ দেখালো। মন্ত্রি পরিষদের সবাই তার সাথে নাচতে চাইলেন। মন্ত্রিও তাকে চোখে চোখে রাখলেন।
ম্যাথিয়েঁ খুশিতে আত্মহারা হয়ে সারা রাত নাচলো, মনের সাধ পূর্ণ করলেো; আজ কোন কিছুর জন্য তার কোন অপূর্ণতা নেই। বিজয় উল্লাস আর সাফল্যের অহংকার তাকে এনে দিল যাবতীয়
প্রশংসা; তার মনের সকল চাওয়ার পূর্ণতা পেল। এটি তার নারী হৃদয়ের জন্য বড়ই তৃপ্তির, বড়ই মধুর।
আনুমানিক ভোর চারটায় ম্যাথুয়েঁ পার্টি থেকে ফিরলো। ফিরে দেখলো তার স্বামী আরো তিনজনের সাথে ঝিমাচ্ছে; যাদের বউয়েরাও তার সাথে পার্টিতে আনন্দ ফুর্তিতে নেচেছিল। ছোট্ট একটা পরিত্যাক্ত রুমে মধ্যরাত পর্যন্ত ঢুলু ঢুলু চোখে অপেক্ষা করে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। বউকে দেখে চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে বাড়ি ফেরার জন্য ম্যাথিয়েঁর জন্য আনা পোষাক সে তার কাধের দিকে ছুড়ে দিল; বড়ই সাদাসিধে পোষাক এটি, যা নাচের পোষাক হিসাবে বড়ই বেমানান। ম্যাথিয়েঁ এ ব্যাপারে সচেতন ছিলেন এজন্য দ্রুত বাড়ি ফেরার জন্য উদ্বীগ্ন হয়ে উঠলেন; পাছে ভোরের আলোয় দামী পোষাক পরা মহিলারা তা দেখে ফেলবেন।
"একটু অপেক্ষা কর, আমি ক্যাব ডাকছি। এছাড়া খোলা জায়গায় দাঁড়ালে তোমার ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।" বোল রুম থেকে বেরিয়ে এসে বউকে বললো লাইজেল।
কিন্তু না, ম্যাথুয়েঁ স্বামীর কথায় কর্ণপাত না করে দ্রুত সিঁড়ি ডিঙিয়ে নীচে নেমে এলো। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও রাস্তায় তারা কোন ক্যাব পেলেন না; ফাঁকা রাস্তায় ছুটে চলা দুই-একটি ক্যাবকে ইশারা করেও থামাতে না পেরে তারা হাঁটতে শুরু করলো। শীতের রাত এজন্য দু'জনেই ঠান্ডায় কাঁপছিল; অনেকটা হতাশাগ্রস্ত হয়ে তারা যখন হাঁটছিলেন তখন কাকতালীয়ভাবে জাহাজ ঘাটে একটি নৈশ বাসের দেখা পেল। প্যারিসে এ বাসগুলো শুধুমাত্র রাতে আঁধারেই দেখা যায়। বিষয়টা অনেকটা এরকম, "দিনের আলোয় তারা নিজের জারাজীরণ বদনখানি দেখাতে লজ্জা পায়।"
গাড়িটি তাদেরকে 'রো দ্যাস মারটিয়ার'-এ পৌছে দিল; রাতভর পার্টিতে দু'টি দেহ যেন প্রাণ হারিয়েছিল। তবে ম্যাথিয়েঁর জন্য যাত্রাটি এখানেই সমাপ্তি হলেও লাইজেলকে অবশ্যই সকাল দশটায় অফিস ধরতে হবে।
ঘরে ফিরেই ম্যাথিয়েঁ তার কাধ পর্যন্ত পোষাকগুলো খুলে আয়নার সামনে নিজের রূপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে লাগলো; কিন্তু হঠাৎ আর্তনাদ করে উঠলো, "আমার গলার হীরের গহণাটি নেই।"
লাইজেল ততক্ষণে অর্ধেক পোষাক খুঁলে ফেলেছে। অবাক হয়ে জানতে চাইলো, "কি ব্যাপার, পরিস্কার করে বলো তো?" ম্যাথিয়েঁ চরম হতাশা নিয়ে তার দিকে ফিরে তাকালো। লাইজেলও অবাক বিষ্ময়ে বড় বড় চোখে বউয়ের পানে স্থির দৃষ্টিতে থাকালো।
"কি বলছো তুমি? এ অ-স-ম্ভ-ব!"
ম্যাথিয়েঁ পোষাকের ভাঁজ, কোটের পকেট সহ সম্ভাব্য সব জায়গায় খুঁজে দেখলো, কিন্তু না কোথাও পাওয়া গেল না।
"তুমি কি নিশ্চিত বলরুম থেকে বেরিয়ে আসার সময় হারটি তোমার গলায় ছিল?" জানতে চাইলো লাইজেল।
"হ্যা, হলরুমে থাকতেই ওটা আমি ছুয়ে দেখেছিলাম।"
"কিন্তু তুমি যদি রাস্তায় হারাতে, ওটা পড়ার শব্দ আমরা শুনতে পেতাম।"
"হ্যা, সমববত পেতাম তুমি কি কেবটি নামবার রেখেছিলে।"
"না, তুমি খেয়াল করনি তাই না।"
না!......না!!.....না!!!....
বাকশক্তি হারিয়ে দু'জন দু'জনের দিকে তাকিয়ে রইলো।
কিছুক্ষণ পর লাইজেল আবার পোষাক পরে নিল আর বললো, "আমি বের হচ্ছি, যেসব জায়গায় আমরা হেঁটেছি এসব জায়গা দেখে আসি, দেখা যাক পাওয়া যায় কিনা।
লাইজেল বেরিয়ে পড়ার পর পার্টিতে পরা পোষাকগুলো পরে রইলো; টেনশনে আর হতাশায় বিছানায় যাওয়ার শক্তিটুকু অবশিষ্ট ছিল না তার। নিরুত্তাপ আর বাকশুন্য হয়ে চুপচাপ চেয়ারে বসে রইলো।
সব জায়গায় তন্য তন্য করে খোঁজাখুঁজির না পেয়ে বিষন্ন মনরতে লাইজেল সকাল সাতটায় ফিরলো।
অফিস কামাই করে লাইজল সারাদিন পুলিশ স্টেশন, ক্যাব অফিস ও পত্রিকা অফিসে ছোটাছুটি করলো; হারটি খুঁজে পেয়ে কেউ ফেরৎ দিলে পুরষ্কার ঘোষণা করলো অর্থাৎ হারটি খুঁজে বের করতে দিনভর সম্ভাব্য সব প্রচেষ্টা চালিয়ে গেল লাইজেল।
নাহ! কোন লাভ হলো না। পণ্ডশ্রম হলো।
হতাশ হয়ে রাতে বাড়ি ফিরে লাইজেল বউকে বললো, "তোমার বান্ধবীর কাছে একটি চিটি লেখ; তাকে বলো যে, তুমি অসাবধানতা বশত তার হারটির আঙটা ভেঙে ফেলেছ, এজন্য এটি মেরামত করতে পাঠানো হয়েছে।" এতে করে বিষয়টি নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করার কিছুটা সময় পাওয়া যাবে।
স্বামীর কথামত ম্যাথিয়েঁ চিটি পাঠিয়ে দিল।
সপ্তাহখানেক পরে তারা হারটি ফিরে পাওয়ার সব রকম আশা ছেড়ে দিল। এই কয়দিনের টেনশনে লাইজলের বয়স পাঁচ বছর বেড়ে গেল। তাদের একটাই চিন্তা কিভাবে হারটি ফেরৎ দেওয়া যায়।
পরদিন তারা হারটির বাক্সের ভেতরে লেখা জুয়েলারী দোকানের ঠিকানায় গেল; হারটির মূল্য কেমন হতে পারে, কতদিনে বানিয়ে দিতে পারবে তা নিয়ে দোকানীর সাথে আলোচনা করলো।
"এই হারটি আমি বিক্রি করি না, বড়জোর আমি এর আঙটা সরবরাহ করতে পারি।" উত্তর দিল দোকানদার।
এভাবে তারা একটার পর একটি গয়নার দোকানে গেল, হারিয়ে যাওয়া হারটির মতো হার খুঁজতে থাকলো, তাদের দেখার স্মৃতি থেকে বর্ণনা দিয়ে তারা বিভিন্ন দোকানীর পরামর্শ চাইলো। তীব্র অনুতাপ আর মনোকষ্টে তখন দুজনকেই অসুস্থ লাগছিল।
অনেক খোঁজাখুঁজির পর 'পোলারিস রয়্যালে' তারা অবিকল আকৃতির হারটি খুঁজে পেলে।
"মূল্য চল্লিশ হাজার ফ্রা!"
তবে দামাদামি করার পর দোকানি তা ছত্রিশ হাজার ফ্রাতে বিক্রি করতে সম্মত হলো। তারা দোকানীকে অনুরোধ করলো আগামী তিনদিন যাতে তিনি হারটি বিক্রি না করেন, এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় টাকার ব্যবস্থা করে তারা হারটি কিনে নেবে। তবে দোকানীকে একটি অংগীকার করালো যে, যদি তারা ফেব্রুয়ারির মধ্যে হারিয়ে যাওয়া হারটি খুঁজে পান তাহলে যেন তিনি বিক্রিত হারটি চৌত্রিশ হাজার ফ্রাতে ফেরৎ নেন।
লাইজলের কাছে আঠারো হাজার ফ্রা ছিল; যা তার বাবা মৃত্যুর আগে তাকে দিয়েছিলেন। বাকি টাকার মধ্যে একজনের কাছ থেকে ধার করলো এক হাজার ফ্রা, আরেকজনের কাছ থেকে পাঁচশত ফ্রা।বাকি টাকা বাড়ির দলিল বন্ধক রেখে সুদের কারবরী ও মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিল।
সহজ কথায় হারটির জন্য সে বাকী জীবটাই বন্ধক রাখলো, সে জানে না এসব ঋণ পরিশোধ করতে পারবে কিনা, তারপরও ঋণের দলিলে স্বাক্ষর করতে হল। ঋণগ্রস্ত ভবিষ্যতের মুখোমুখী হওয়ার কথা ভেবে মর্মাহত হলো। ভবিষ্যতে গভীর দুর্দশার আশংকা নিয়ে, সকল প্রকার শারীরিক ও মানসিক পীড়নের ঝুঁকি নিয়ে ছত্রিশ হাজার টাকার যোগান করে হীরের আংটিটা আনতে তারা দোকানে গেল।
ম্যাথিয়েঁ যখন হারটি ফরেস্টিয়ার নিকটে নিয়ে গেল তখন তিনি তাকে কর্কশ কণ্ঠে শাসালেন "হারটি আরো আগে ফিরিয়ে দেওয়া উচিৎ ছিল তোমার, আমার তো এটির প্রয়োজন হতে পারতো।"
ম্যাথিয়েঁ বাক্সটি খুললো না, সে তার বান্ধবীকে খুব ভয় পাচ্ছিল। সে যদি হার বদলের বিষয়টি টের পেয়ে যায়! তাহলে সে কী ভাববে? কিছু বলবে? সে কী তাকে চোর ভাববে?
ঋণের দায় মেটাতে লাইজেন শোচনীয় দারিদ্র্যের কঠিন জীবনের সাথে পরিচিত হওয়া শুরু করলো। এজন্য কঠিন মনোবল নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে লাগলো; এই বিশাল ঋণ অবশ্যই তাকে পরিশোধ করতে হবে। প্রথমেই বাড়ির কাজের লোক সাটাই করা হলো, তাদের বাড়িটাও পাল্টাতে হলো, তারা টাকা বাঁচাতে ছাদের একটি চিলেকোঠা ভাড়া নিলেন।
ম্যাথিয়েঁ পরিচিত হতে লাগলো যাবতীয় পরিশ্রমের কাজগুলোর সাথে। রান্না ঘরের বাসন-কোসন ধোতে গিয়ে তার কোমল আঙুল আর গোলাপি নখগুলো পাতিলের চর্বি আর হাঁড়ির নীচে জমে থাকা কয়লার ধোয়ায় কালো ছাইপাঁশ পরিষ্কার করতে করতে অতি যত্নের আঙুল ও নখগুলো কেমন যেন রংহীন ফ্যাকাশে হয়ে উঠলো। প্রতিদিন সে বিছানার ময়লা চাঁদর, সার্ট-প্যান্ট আর ঘর ধোয়া মোছর নেকড়া রোদের শুকানোর জন্য তারের উপর মেলে দিত। প্রতিদিন ডাস্টবিনে জমানো উচ্ছিষ্টগুলো ঝুড়ি ভরে বড় রাস্তার ওখানে বড় বিনে ফেলে আসত। পানির বালতি, কলসি টানাটানি করতে গিয়ে হয়রান হয়ে ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিত। হত দরিদ্র মহিলাদের মতো পোশাক পরে কখনো ফল বিক্রেতা, মোদি দোকানী এবং মাংস বিক্রেতার কাছ থেকে দরকষাকষি করে, অপমানিত হয়ে প্রতিদিন এক-আধ পয়সা বাঁচানোর জন্য সংগ্রহাম করতে হত।
এভাবে একে একে পরিশোধ করা হতো প্রতি মাসের ঋনের কিস্তি। কখনো একান্ত অপারগ হলে নতুন করে ঋণ নিয়ে পরিশোধ করা হতো পুরাতন ঋনর টাকা।
আর বেচারা কেরানি স্বামী প্রতি দিন অফিসের কাজ শেষ করে একটি দোকানে হিসাব-নিকাশের কাজের চাকরী করতে হত; সাথে প্রায় রাতেই চলতো এক-আধা পয়সা হিসেবে পান্ডুলিপি নকলের কাজ।
এভাবেই কেটে গেল তাদের জীবনের মূল্যবান দশ দশটি বছর। পরিশোধ হলো সকল প্রকার ঋণ।
দশ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে ঋণ পরিশোধ হলো টিকই; কিন্তু অতিরিক্ত পরিশ্রমের ধাক্কায় ম্যাথিয়েঁকে এখন বয়সের তুলনায় অধিক বয়স্ক দেখায়, অনেকটা বৃদ্ধ মানুষের মত! তাকে অন্য দরিদ্র নারীদের মত লাগে। তার চুলগুলো এখন এলোমেলো থাকে, পোষাক-পরিচ্ছেদ অপরিচ্ছন্ন, ব্যবহার্য স্কার্টগুলো কুচকে গেছে, মসৃন তুলতুলে হাত দু'টি খসকসে ও লালচে হয়ে গেছে। সে এখন কথা বলে কর্কশ কণ্ঠে, মেঝে পরিষ্কার করার সময় কখনো অসাবধানতায় পানি পুরো মেঝেতে ছলকে পড়ে, হাতে আগের মতো শক্তি নেই এখন।
যখন স্বামী অফিসে থাকেন তখন হাতে কোন কাজ না থাকলে ম্যাথিয়েঁ চুপচাপ জানালার পাশে বসে অনেক দিন আগের সেই সন্ধ্যার কথা ভাবে তখন কল্পনা করতো সুন্দর একটি বলরুমের যেটি হবে খুব সুন্দর, সবার কাছে দর্শনীয় হবে।
সে প্রতিনিয়ত এখন মনে মনে ভাবে, "যদি সেই রাতে হারটি না হারাতো তখন কি হতো?"........... কে জানে?......... কি জানি? আসলে জীবনটাই না কত বিষ্ময়কর, তাই না? কত পরিবর্তনশীল? সামান্য কিছু অথবা ছোট্ট একটি ভুল একটি জীবনকে ধ্বংস করে দিতে পারে কিংবা বাঁচিয়ে দিতে পারে?"
সারা সপ্তাহ জুড়ে পরিশ্রম করে নিজেকে চাঙা করার জন্য এক রবিবার সে 'চ্যামপ্ এলিসিতে' বেড়াতে গেল; হঠাৎ খেয়াল হলো একজন মহিলা একটি শিশুকে নিয়ে হাঁটতে বেরিয়েছেন। আরেকটু কাছে আসতেই চমকে উঠলো।
আরে এ তো ফরেস্টিয়ার! কি আশচর্য তাকে দেখতে ঠিক আগের মতোই লাগছে, এখনো মনে হয় তরুনীদের মতো। অথচ মাঝখান থেকে দশটি বছর চলে গেল।
"সে আগের মতোই রূপবতী! আকর্ষণীয় গঠন!!"
ম্যাথিয়েঁ সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না সে ফরেস্টিয়ারের সাতে কথা বলবে কিনা? অবশেষে সিদ্ধান্ত নিল তার সাথে যেচে পরিচিত হবে এবং তার কাছ থেকে ধার করা হারটির জন্য তাকে গত ১০ বছরে কত পরিশ্রম করতে হয়েছে, সব খুলে বলবে তাকে। ম্যাথিয়ে ধীর পদক্ষেপে তার মুখোমুখি দাঁড়ালো।
"শুভ সকাল, জেনি।"
ফরেস্টিয়ার গভীর পর্যবেক্ষণে তার দিকে কিছুক্ষণ থাকিয়ে থাকলেন; কিন্তু না! চিনতে পারলেন না। মনে মনে কিছুটা অবাক হলেন, "একজন হত দরিদ্র মহিলা শুরুতে এত অন্তরঙ্গ কথা কেন বলছে?"
কিন্তু মা-দা-ম!, "আমি তো ঠিক আপনাকে চিনতে পারছি না, আপনি নিশ্চয়ই ভুল করছেন?" মাদাম তোতলাতে তোতলাতে বলে উঠলো।
"না, আমার কোন ভুল হয়নি। আমি মেথিয়ে লাইজেল।"
এবার মাদাম অনেকটা আর্তনাদের সূরে বলে উঠলো,
"ওহ! বেচারী!! তুমি ম্যাথিয়েঁ? এই ক'বছরে তুমি অনেকটা বদলে গেছ!!!"
হ্যা, তুমি ঠিকই বলেছ। তোমার সাথে শেষ দেখা হওয়ার পর আমি কিছু কঠিন সময় পার করেছি; সয়েছি অনেক দুঃখ....কষ্ট..... অর্জন করেছি অনেক রূঢ় অভিজ্ঞতা...জেনেছি জীবনের মানে....! এসব তোমার জন্যই।
আমার জন্য? কি বলছ এসব? এখটু খোলাসা করে বল তো শুনি?
তোমার কি মনে আছে সেই হীরের হারের কথা? একটি বল পার্টিতে পরার জন্য আমি তোমার কাছ তেকে ধার করে নিয়েছিলাম।
"হ্যা, তাতো নিয়েছিলে; আবার তা ফেরৎ দিয়েছিলে, তাই না?"
"ফেরৎ দিলেও মূল হারটি আমি হারিয়ে ফেলি।"
"তাহলে আমাকে ফেরৎ দিয়েছিলে কেমনে?"
"আমি তোমাকে ওটার মতো অবিকল আরেকটি হার বানিয়ে দিয়েছি। গত দশ বছর ধরে আমরা তার মূল্য পরিশোধ করেছি। আমি বিষয়টি যত সহজে বলছি বিষয়টি ততো সহজ ছিল না আমাদের জন্য। তবুও তা পরিশোধ করে ফেলেছি, এজন্য আমি আনন্দিত।
"একটু থাম, প্লীজ" তুমি বলেছ, আমার হারটি ফেরৎ দিতে তোমরা হীরের একটি হার কিনেছিলে?
"হ্যা, তুমি কি হারটি খোলে দেখনি? নতুনটা অবিকল আগেরটির মতো ছিল।"
ফরেস্টিয়ার আচমকা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে চমকে উঠে ম্যথুয়েঁর হাত দু'টি নিজের মুঠোয় নিয়ে বলে উঠলেন -
"ওহ!! ... বেচারী .... ম্যাথুয়েঁ ... !!! আমার দেওয়া হারটি তো 'নকল' ছিল; এর বাজার মূল্য বড়জোর পাঁচশত ফ্রা!!!"
লেখক পরিচিতি -
Guy de Maupassant (মোফাসাঁ) ছিলেন একজন ফরাসি সাহিত্যিক। ১৮৫০ সালের ৫ আগস্ট তিনি ফ্রান্সের Tourville-sur-Arques জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি একাধারে একজন ঔপন্যাসিক, কবি, গল্পকার। তাঁকে ছোট গল্পের প্রবাদ পুরুষ বলা হয়। মোফাসাঁর লেখা অন্যান্য বিখ্যাত ছোট গল্পের মধ্যে আছে, “Boule de Suif” (translated: Ball of Fat); “Two Friends”, “Madame Tellier’s Establishment”, “Mademoiselle Fifi”, “Miss Harriet”, “The Necklace”, “The piece of String”, “Claire de Lune,” “Mademoiselle Pearl,” “Madame Husson’s Rosier,” “That Pig of a Morin,” “Useless Beauty,” “The Olive Orchard,” “A Sale,” “Love,” “Two Little Soldiers” and “Happiness.” etc.
নোবেল পুরস্কার বিজয়ী এ সাহিত্যিক ৩০০ টির বেশি ছোট গল্প, ৬টি উপন্যাস এবং ৩টি ভ্রমণ কাহিনী লেখেন। ১৮৯৩ সালের ৬ জুলাই মাত্র ৪২ বছর বয়সে তিনি প্যারিসে মৃত্যুবরণ করেন।
ফটো ক্রেডিট,
গুগল।
চাইলে পড়তে পারেন-
আমার সবচেয়ে পঠিত, লাইক ও কমেন্ট প্রাপ্ত পোস্ট।
গল্প লেখার সহজ পাঠ
সবচেয়ে পঠিত প্রবন্ধ।
আধুনিক কবিতার পাঠ (সমালোচনা)
আলোচিত ফিচার 'দি লাঞ্চিয়ন'।
ব্রিটেনের প্রবাস জীবন- স্মৃতিকথা।
সবচেয়ে পঠিত গল্প।
সবচেয়ে লাইকপ্রাপ্ত গল্প।
ছবি ব্লগ (লন্ডনের ডায়েরি-১)।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:২৮