রাকিব মামা বলল, অতি কৌতূহল ভলো নয়। অতি কৌতূহলের ফলও ভালো হয়না।
আমরা বললাম, কেন? এ ব্যাপারে গল্পের ঝুলিতে কিছু গল্প রয়েছে নাকি? শুনি তাহলে।
রাকিব মামার গল্পের ঝুলি কখনো খালি হয় না। অতি কৌতূহল বিষয়ক একটা গল্প ঝুলিতে রয়েছে দেখতে পাচ্ছি, তবে গল্পটা ঝুলিতে ঢুকে পড়েছে কিভাবে সেটা কিন্তু বলতে পারব না।
শোন তবে, এই আতি কৌতূহল দেখাতে গিয়ে একবার এক শীতের রাতে আমাকে দশ মাইল হেঁটে বাড়ি ফিরতে হয়েছিল।
রাহাত বলল, কেন? তখনো সাইকেল আবিষ্কার হয়নি? নাকি, চালাতে জানতে না?
মামা বলল, অত অধৈর্য্য হচ্ছিস কেন? আরে গল্পটা তো ঐ সাইকেল নিয়েই। এই যা, আগে ভাগেই বলে ফেলেছি। এতে কিন্তু গল্পের স্বাদ কমে যাবে।
তো যা বলছিলাম। বলে মামা একটু ডান ও বাম দিক দেখে নিল। এর অর্থ এখনো চা কিন্তু আসে নি। এটা বুঝতে পেরেই আমি ভেতরে চলে গেলাম।
অনেক সময় শোনা গল্পগুলোও মামা আবার নতুন করে শোনায়। কখনো এর গল্প ওর গল্পও নিজের বলে চালিয়ে দেয়। যাই হোক, গল্পগুলো শুনতে ভালই লাগে।
চায়ের কাপ হাতে নিয়ে মামা বলল, ফিরছিলাম তালপুকুর থেকে। ওখানে আপুর বাড়ি থেকে বেরোতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল। শীতের রাত, রাস্তা প্রায় নির্জন। তাই বেশ জোরেই সাইকেল চালাচ্ছিলাম। মাঝে মিরপুর বলে একটা গ্রাম আছে। সেই গ্রামের এক ধারে বড় একটা ফুটবল মাঠ রয়েছে। মাঠটা বেশ সমতল ও বড়। আমারা অনেকবার এই মাঠে খেলা করে গেছি। এই মাঠের ধার ঘেঁষে রাস্তা। সেই রাস্তায় যেতে যেতে দেখি মাঠের একটা গোলপোষ্টের মাথায় কে একজন পা ঝুলিয়ে বসে রয়েছে। অল্প কুয়াশাও ছিল, তাই লোকটাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না। সাইকেলের
গতি কমিয়ে একটু দূরে সাইকেলটা একটা গাছে ঠেস দিয়ে দাঁড়ালাম। তারপর একটু করে এগিয়ে যেতে লাগলাম গোলপোষ্টের কাছে। ঐ যে কৌতূহল! আমাকে কৌতূহলে পেয়ে বসে। দিব্যি কাগজ-পেন নিয়ে লেখা-পড়া করছে। এ পাগল ছাড়া হয়না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পাগলের পাগলামী দেখার কোন মানে হয় না।
হঠাৎ লোকটা বলে উঠল, যা ভাবছেন তা কিন্তু নয় স্যার। মুড়ির সঙ্গে মুড়কিকে গুলিয়ে ফেলবেন না যেন। এ হছে সাধনা। শীতের রাত্রে গোলপোস্টে না উঠলে এ সাধনা পূর্ণ হয় না। আপনি তো স্যার তালপুকুর থেকে ফিরছেন? ঠিক কি না।
এরপর আর লোকটাকে পাগল বলে মনে হচ্ছে না। তাছাড়া ও জানলই বা কি করে যে আমি তালপুকুর থেকে ফিরছি।
আমার কৌতূহল আরো এক ধাপ বেড়ে গেল।
আমি বললাম, সাধনাটা কি জানতে পারি ?
ও এবার বলল, এক মিনিট। এক মিনিট পরেই জানতে পারবেন। এই খাতায় লিখে দিচ্ছি। তবে মাটিতে দাঁড়িয়ে এটা পড়া যাবে না স্যার। হালকা চাঁদের আলো ও কুয়াশা মিলেমিশে যে পরিবেশ তৈরী হয় এটা সেখানেই পড়তে হবে। তাই কষ্ট করে গোলপোষ্টের মাথায় উঠে আসতে হবে।
কৌতুহল মেটাতে আমি রাজি হয়ে গেলাম। লোকটা গোলপোষ্ট ধরে সোজা নীচে নেমে এল। উঠুন স্যার, একটু কষ্ট হবে। বাহঃ, এই তো উঠতে পারছেন। উপরে পাইপের উপর খাতাটা ঝোলানো আছে। পড়ে চক্ষু সার্থক করুন।
চক্ষু সার্থক করাই বটে! খাতায় লেখা আছে, "আপনি এটা পড়ুন, আমি ততক্ষনে আপনার সাইকেলেটা নিয়ে একটু হাওয়া খেয়ে আসি। আর হ্যাঁ, অতি কৌতূহল ভালো নয়, এটা এবার বুঝলেন তো?"
এই বলে রাকিব মামা চা ও গল্প এক সঙ্গে শেষ করে উঠে দাঁড়াল। আসিরে, অন্যদিন আসবো।
(সংগৃহীত ও ঈষৎ পরিবর্তিত)
মূল লেখক
তরুণ কুমার সরখেল
পশ্চিমবঙ্গ
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১১:০৮