গত পরশু অক্টোবর মাসের Google Adsense এর cheque পেলাম। Google অন্য কোম্পানির মতোই প্রতি মাসেই আয়ের চেক কিংবা অনলাইন ট্রা্ন্সফার পরের মাসের শেষে করে থাকে। অর্থাৎ ডিসেম্বরের আয়ের চেক পাব জানুয়ারীর শেষে। টাকার অংকে চেকগুলো এখনও খুব একটা বেশি না, তবুও প্রত্যেক মাসে চেকগুলো যখন পাই আনন্দই লাগে। মনে একটা সফলতার উচ্ছ্বাস ভেসে বেড়ায়।
এটা আমার চর্তুথ চেক - প্রথম দুই মাসে কোনো চেক পাইনি, আয় খুব খারাপ ছিল। আসলে দুই মাস না হয়ে দেড় মাস হবে - ঠিক ১৫ তারিখ থেকে শুরু করেছিলাম। প্রথম দেড় মাসে অংক দাঁড়ায় ক্লিকে 58.06 ডলার। চেক পেতে হলে অন্তত একাউন্টে ১০০ ডলার থাকতে হয়। যা হোক পরের মাস থেকে সাফল্য পেতে শুরু করি, আড়াই মাস শেষে দাড়ায় 393.09 ডলার।
প্রথম দিকে আমার একটাই ওয়েবসাইট ছিল - ওটা প্রায় জগাখিচুড়ি হয়ে যাচ্ছিল। যে টপিকই ভাল লাগে তা নিয়েই লিখতে শুরু করেছিলাম। পয়সাও পাচ্ছিলাম, কিন্তু মনে তৃপ্তি পাচ্ছিলাম না। তখন থেকেই ডোমেইন কিনতে শুরু করি আর তাতে হরেক রকম ওয়েবসাইট বানাতে থাকি। সমস্যা হচ্ছে একটা ওয়েবসাইট নিয়ে আমার আবার বেশি দিন কাজ করতে ভাল লাগে না। তাই ওয়েবসাইট বানাচ্ছি, কিছুদিন কাজ করছি আবার ফেলে রাখছি।
তবে কি জানেন, এই যে ফেলে রাখছি, এটা কিন্তু এক বারেই বৃথা যাচ্ছে না। হঠাৎ হঠাৎ উটকো একটা দুটো ক্লিক পেয়ে যাই। গত কাল ফেলে রাখা এমনই একটা ওয়েবসাইটে একটি ক্লিকেই ৪.৩০ ডলার পেয়েছি। অংকের হিসেবে এটা অবিশ্বাস্য আয়! এই ব্লগে সেপ্টেম্বর মাসে মাত্র ৭ টি ব্লগ পোষ্ট করেছিলাম, ৩ মাস পেরিয়ে গেছে।
যাক, যে জন্য আজকে এই ব্লগটি লিখার কথা মাথায় এসেছিল। ইন্টারনেটে আয় নিয়ে ব্লগ লিখার পর যারা আমার পোষ্টে কমেন্ট করেছেন, তাদের কয়েকজন জিজ্ঞাসা করেছিলেন - অন্যদের দিয়ে যদি মাঝে মাঝে ব্লগে ক্লিক করাই তাহলে কি কোনো সমস্যা আছে কি না? চিন্তা করছি আজকে তাদের প্রশ্নের উত্তর দেব।
আমি বইয়ের ভাষায় বলব না, নিজের কথাই বলি। আমার নিজের একাউন্ট ব্যান হয়েছে দু'বার। প্রথম বার, প্রায় তিন বছর আগে। প্রথম প্রথম ব্লগ খুলেছিলাম ব্লগার একাউন্ট দিয়ে, গুগলের নিয়মকানুন কিছুই জানি না। প্রাপ্তির জন্য তখন সবাই টাকা তুলছিল। আমিও সবাইকে বললাম, আমার ব্লগ থেকে যা কামাই হবে, পুরোটুকুই প্রাপ্তিকে দিয়ে দেব - আপনাররা ক্লিক করেন। সবাই ক্লিক করা শুরু করল। দেখতে দেখতে ৮০ ডলারের মতো কামাইও হয়েছিল, হঠাৎ করে একদিন গুগল একাউন্ট বন্ধ দিল। সব টাকা শেষ। যদিও প্রাপ্তিকে সাধ্যমতো সাহায্য করেছিলাম, ব্লগের কামাইয়ের চেয়ে বেশিই দিয়েছিলাম।
পরের বার, সর্তক হয়ে গেলাম। কিন্তু এবারও একটা ভুল করলাম। হিট বাড়ানোও ওয়েবসাইটে একাউন্ট খুলেছিলাম। ক্লিক খুব একটা পড়ে নাই, তবে অবৈধ page impression বাড়ানোর জন্য একাউন্ট ব্যান হয়ে গেল।
এখন সর্তক হয়ে গেছি, তাই অনলাইনের আয়ের বেশ কয়েকটা পথ খুলে রেখেছি। যাতে একটা বন্ধ হয়ে গেলে অন্যগুলো চালু থাকে। আমার বেশ কিছু PPC এবং Affiliate Program এ একাউন্ট আছে, যেগুলো থেকে আমি আরোও কিছু টাকা পাই প্রত্যেক মাসে। যেমন Adbrite, Clicksor, Kontera, BannerConnect, Amazon Associates ইত্যাদি।
========================================================================================
আমরা, মানে বাংলাদেশিরা - অনলাইনের ক্ষেত্রে অনেকখানিই পিছিয়ে আছি। আমার মনে হয়, দুটো কারনে। এক - আমাদের ইন্টারনেট সংযোগের মান খুবই খারাপ আর আমরা অনলাইনে কেনাবেচা করতে পারি না। তাই আমরা অন্য দেশগুলোর চেয়ে নিতান্তই শিশু।
কেন বললাম এই কথা? অনলাইনে আয়ের কথা বললেই সবাই বলি Blogger এ একটা একাউন্ট খুলে দুই - তিনটা ছবি কিংবা কাট-পেষ্ট পোষ্ট দিয়ে এডসেন্সে একাউন্ট খুলে বসি আর বলি হিট পাই না। তারপর একসময় চুক্তি করে ক্লিক করা শুরু করি। কিন্তু বাস্তবতা কি এটাই?
ধরলাম, ক্লিক করে পয়সা কামানো যায় - তাই চুক্তি করে ক্লিক করি কিন্তু কতই বা ক্লিক করবো, কতদিনই বা ক্লিক করবো কিংবা কতদিন গুগলকে ধোকা দেব?
আমার আজকের তারিখ (প্রায় ৮ মাস) পর্যন্ত মোট ক্লিক সংখ্যা প্রায় ৩০,০০০ এবং আয় ১,৭০০ ডলার। তারমানে গড়ে প্রতি মাসে আমার ক্লিকসংখ্যা ৩৭৫০। এখন আমি যদি আমার বন্ধুদের ক্লিক করতে বলতাম, তবে প্রতিদিন বন্ধুদের ১০০ বেশিবার ক্লিক করতে হতো - যা গুগলের চোখ ফাকি দেয়া কোনোভাবেই সম্ভব না। তাহলে চুক্তি করে ক্লিকের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলাই ভাল।
এবার আসি কিভাবে টাকা কামাবেন? খালি কি এ্যাডে ক্লিক করেই টাকা কামানো যায়? না - এটা কেবল মাত্র একটা পদ্ধতি, ইন্টারনেটের জগতে এমন হাজারো পদ্ধতি আছে। খুবই সহজ দুই একটা পদ্ধতির কথা আজকে বলব।
===================================================================================
প্রথম পদ্ধতি
----------------
Directory Submission:
অনেকেই হয়তো এটার কথা জানেন, অনেকেরই অজানা। তবুও বলি। কাজটা বোরিং, তবুও পয়সা পেলে বোরিং কাজ করতে দ্বিধা থাকার কথা নয়। কিভাবে পয়সা কামাবেন?
Search Engine Optimization এর ক্ষেত্রে backlink খুবই গুরুত্বর্পূণ। অথার্ৎ অন্য ওয়েবসাইট আপনার ওয়েবসাইটকে যতবেশি বার লিংক দেবে আপনার ওয়েবসাইট সার্চ ইঞ্জিনে ততবেশি গুরুত্ব পাবে এবঙ ভাল ফলাফল দেখানোর সুযোগ পাবে। এটাকে ভিত্তি করে ইন্টারনেটে কোটি কোটি web directory জন্ম নিয়েছে। এখন ধরুন, আমার একটা নতুন ওয়েবসাইট আছে, গুগল যাতে আমার ওয়েবসাইটে গুরুত্ব দেয় তার জন্য ওয়েবসাইটে বানানোর সাথে সাথে আমি বেশ কিছু ডাইরেক্টরীতে আমার ওয়েবসাইটে বিবরন এবং লিংক জমা দেই। এভাবে লিংক বাড়তে থাকে। এটাকে একধরনের link building পদ্ধতি বলা হয়। এখন অনেকেরই link building এর সময় নাই। তারা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে কিংবা ফোরামে কাজের বিবরন দিয়ে লোক খুজে বেড়ায়। ওইসব কাজের জন্য bid করে কাজ পাওয়া যায়। তবে ফোরামগুলোতে bidding ওয়েবসাইটের চেয়ে কম প্রতিযোগিতা থাকে তাই ভাল অংকের কাজ কম প্রতিযোগিতায় পেতে ফোরামগুলোতে নজর রাখা যেতে পারে। দুইটো বড় ফোরাম হল http://forums.digitalpoint.com এবং http://marketplace.sitepoint.com । তবে কাজের প্রতিযোগিতায় নামার আগে ভালভাবে প্রস্তুতি নিন, প্রতিযোগিতা সহজ হবে। এই ব্লগটি পড়তে পারেন, কাজে দিবে - Click This Link
দ্বিতীয় পদ্ধতি
----------------------------
নতুন যারা ফোরাম খুলে, তারা অনেকেই ফোরামে বিভিন্ন বিষয়ে পোষ্ট লিখার জন্য লোক ভাড়া করে। এসব কাজও ফোরামগুলোতে পাওয়া যায়। যারা আনলিমিটেড ইন্টারনেট সংযোগ এবং প্রতিদিন কিংবা প্রতি সপ্তাহে কিছু অলস সময় আছে তারা এসব কাজ করতে পারেন। গুগলে বিভিন্ন বিষয় খুজে কাট-পেষ্ট করে পোষ্ট সংখ্যা বাড়ান - সাথে সাথে পয়সাও বাড়তে থাকবে।
=======================================================================================
এখন অন্য একটা সমস্যা আছে, বাংলাদেশ থেকে PayPal ব্যবহার করা যায় না। তবে অনেকের কাছে MoneyBrookers.com এর নাম শুনেছি। ওরা দেখলাম বাংলাদেশীদের একাউন্ট খুলতে দেয়। ওখানে একাউন্ট খুলেও আয়ের পয়সা জমাতে পারেন।
আশা করি ভবিষ্যতে আরোও কিছু পদ্ধতির কথা লিখব, ততদিন ভাল থাকুন। আর কিছু অলস সময় থাকলে আমার ফোরামে যোগ দিন, বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করুন, জানুন এবং জানান - http://www.iseoforum.com
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন নিয়ে আমার বাংলা ব্লগ - http://bn.jinnatulhasan.com
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০০৯ রাত ৮:০০