গত ৬ মার্চ ২০১৭ রোজ সোমবার সন্ধ্যায় নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলা সদরের কাঁচা বাজারে মাদক ব্যাবসায়ীদের দ্বারা সহকারী অধ্যাপক লাঞ্চিত হবার একটি নিউজ আপনারা অনেকেই পড়েছেন। অনলাইন প্রতিকা “দি নিউজ” তা প্রথম প্রকাশ করেছিল। এবং আমি আমার ফেসবুক ওয়ালে তা শেয়ার করে ছিলাম।কারন সে অধ্যপকটি ছিলাম স্বয়ং আমি। এই মাদক চক্রের মুল অনেক গভীরে। কিন্তু সমাজের এই অবস্থা আর কতদিন চলতে পারে। কাউকে না কাউকে তো এ বিহিতের উদ্যোগ নিতেই হবে।ঘটনাক্রমে আমাকেই এগিয়ে আসতে হলো। নিউজটিতে আমি আবেদন করেছিলাম। আমার এই আঘাতের জন্য আমি কোন পুলিশ এ্যাকশন বা আইন আদালতে যেতে চাইনা, আমি সুস্থ্য বিবেক গুলোর কাছে এর বিচার ভার ছেড়ে দিলাম। ফেসবুকে আমার লিখাটি শেয়ার করার পর অসংখ্য সুহৃদ আমাকে সমবেদনা জ্ঞাপন ও দুঃখ প্রকাশ করেন এবং মাদকের বিরোদ্ধে ঘৃনা আর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সাথে সাথে আমার এই সিদ্ধান্তকে তারা স্বাগত জানিয়ে সাদরে গ্রহণ করেন এবং বিবেকের তাড়নায় ধামইরহাটের মানুষসহ আমার দেশে-বিদেশের বন্ধুরা এক কাতারে আসেন। জার্মান থেকে ড. ফিজার আহম্মেদ ও কামরুন নাহার; আমেরীকা থেকে ড. মনোরমা বিশ্বাস, ফিরোজ হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান; রাসিয়া থেকে ড. জামিল খান, ড. ইঞ্জিনিয়ার হারুন; ভারতে থেকে “দি নিউজ” এর চিপ এডিটর ও কলামিষ্ট শেখর রায়, শিক্ষাবিদ ড. সংকেত শেখর, কুচবিহারের বিশিষ্ট সংগিত শিল্পী পারভীন সুলতানা ও মোহনা গঙ্গোবাধ্যায় আমাকে ফোনে ও মেইল পাঠিয়ে এই অনাকঙ্খিত ঘটনার জন্য সমবেদনা জানান ও দুঃখ প্রকাশ করেন এবং আমাকে মাদকের বিরোদ্ধে দৃঢ় অবস্থান গ্রহন করার অনুরোধ জানান। আমি আমার বন্ধুগনের আশানুরুপ সাড়া পেয়ে মাদক বিরোধী অবস্থানে অনড় থাকি। মাদক ব্যাবসায়ী সঙ্গবদ্ধভাবে আমার উপর চড়াও হবার ঘটনায় প্রথমেই জাতীয় সংসদের হুইপ মোঃ শহীদুজ্জামান সরকার ফোনে আমার সাথে কথা বলেন এবং এই অনাকাক্ষিত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং আমাকে এ বিষয়ে সকল প্রকার সহযোগীতা করার কথা বলেন। ঘটনার রাতেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার অফিস থেকে আমার বাড়ীতে লোক পাঠিয়ে আমার খোঁজ-খবর নেন। ঘটনার সংবাদ পেয়ে ধামইরহাট ব্যাবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ আব্দুল মুকিত ও ধামইরহাটের বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী ও রাজনীতিক মোঃ ওবায়দুল হক সরকার ঘটনা স্থলে ছুটে আসেন। ধামইরহাট পৌরসভার মেয়র আমার বন্ধুবর আমিনুর রহমান বলেন, “এ ঘটনা মেনে নেবার নয়, আমারা এর শেষ দেখতে চাই” বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি আমার স্নেহাস্পদ আখতার হোসেন এ ঘটনার জন্য দুঃখ লজ্জা প্রকাশ করে। সমাজসেবা কর্মকর্তা তাপস কুমার ও ফুলবাড়ীর এডুকেশন রিসোর্স কর্মকর্তা খুরশিদা দুঃখ প্রকাশ করেন। আমার ছাত্র-ছাত্রী, সহকর্মি, স্থানীয় বন্ধুগন ব্যাবসায়ী নেতৃবৃন্দ, সুধী মহল রাজনৈতিক ব্যাক্তিগন ঐক্যবদ্ধ হতে থাকেন।
পরিস্থিতি প্রতিকুলে যাচ্ছে টের পেয়ে মাদক ব্যাবসায়ীবা কৌশুলী হয়ে রাজনৈতিক আশ্রয়ের চেষ্টা করে ব্যার্থ হলে তারা আমার কাছে ক্ষমা চাইতে শুরু করে। আমি গতকাল বাজারে বসে চা খাচ্ছি দেখি এদের কয়েক জন হঠাৎ করে আমার পা জড়ে ধরে তাদের অপরাধের জন্য ক্ষমা চায়। বজারে তাৎক্ষনিক ভাবে অনেক লোক জমা হয়। আমি বিবৃত বোধ করি এবং বলি কাল ইউএনও অফিসে বসে এর একটা সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে। সে আলোকে আজ বুধবার ৮ মার্চ নারী দিবসের অনুষ্ঠান শেষে ১১:৩০ মিনিটে ধামইরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিস কক্ষে চিহ্নিত অপরাধী আমিনুল ডাক্তার(?)মাদক ব্যাবসায়ী মতিবুল, আইনের ভুল ব্যাখ্যাকারী নাজমুল মাস্টার, মাদকসেবী পূর্ব বাজারের তেল দোকানদার কালুর ছেলে হালিম ও মতিবুলের ছেলেকে উপস্থিত করা হয়। সুধী মহলে প্রতিনিধি হিসাব উপস্থিত ছিলেন, ধামইরহাট এম,এম কলেজের অধ্যক্ষ ও কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর মোঃ শহিদুল ইসলাম, ধামইরহাট উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ মঈন উদ্দীন, ধামইরহাট ব্যাবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ আব্দুল মুকিত ও ধামইরহাটের বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও রাজনীতিক মোঃ ওবায়দুল হক সরকার, ধামইরহাট ঔষুধ ব্যাবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ লুৎফর রহমান, বিশিষ্ট ক্রিড়া সংগঠক খাজা মঈন উদ্দীন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের পক্ষে মোঃ ফজলুর রহমান চেয়ারম্যান, ধামইরহাট প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ আব্দুল মালেক ও আমি আ.ন.ম আফজাল হোসেন। আলোচনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন এটা শুধু অধ্যাপক সাহেব এর উপর আঘাৎ নয় এটা আমার উপর আঘাৎ যা সম্পুর্ন বেআইনী ও রাস্ট্রদ্রোহী বলে বিবেচিত। আলোচনার তাদের তিন ধরনের অপরাধ বেরিয়ে আসে এক. নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মোবাইল কোর্টেকে অবজ্ঞা করে জন সাধারণকে মোবাইল কোর্টে বৈধতা নিয়ে চ্যালেঞ্জ করা ও প্রসাশনের বিরোদ্ধে জনসাধারণকে উসকে দাওয়া।
দুই. অবৈধ্য মাদক বিক্রয় ও সংরক্ষন
তিন. সমাজের প্রতিনিধিত্ত্বশীল কাউকে শারীরিক আঘাৎ করা।
আলেচনার শুরু থেকেই এই অপরাদীরা করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে একপর্যায়ে মাদক ব্যাবসায়ী মতিবুল আমার পা ধরে কান্না শুরু করলে আমি আমার ব্যাপারে তাকে ক্ষমা করে দেই কিন্তু অন্য সব অপরাধের বিষয়ে উপস্থিত মহল সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আমার অভিমত প্রকাশ করি। তখন মতিবুল বলেন আমি এই মাদকের ব্যাবসা করতে গিয়ে আমার স্ত্রীকে হারিয়েছি আমার ছেলে নেশাগ্রস্থ হয়েছে আমি শুধু মাদক ব্যাবসায় নয় আমি আজ থেকে আর ঔষধের দোনাক করবো না। শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন রাস্ট্রের বিরোদ্ধে যে সকল কথা গুলো আপনার জনসমাবেশ করে বলেছিলেন আপনাদের সে কথা গুলো ভুল ছিল তা আজ বিকেল ৫ টায় ঘটনা স্থলে (কাঁচা বাজার) জনসমাবেশের আয়োজন করে বলতে হবে। নিদের্শনা অনুযায়ী ঔষধ ব্যাবসায় সমিতি সমাবেশ আয়োজন করে এবং এই মাদক ব্যাবসায়ী চক্র জনসম্মুখে ক্ষমা চায় ও মাদক ব্যাবসায়ের সাথে আর কোন সময় জড়িত হবো না বলে অঙ্গীকার করে। মাদক ব্যাবসায়ী মতিবুল মাদক সেবীদের একটি তালিকা প্রস্তুত করে উপজেলা অফিসারের নিকট দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। এবং জব্দকৃত মাদক গুলো প্রকাশ্য জনসম্মুখে ধ্বংস করে দওয়ার মাধ্যমে সত্যের জয় হলো।
পৃথিবীতে যত পরিবর্তন এসেছে সে ক্ষেত্রে কাউকে না কাউকে প্রথম একাই ঝুকি নিতে হয়েছে। এভাবে আমাদের সুস্থ্য বিবেক গুলো এক হতে পারলে সমাজের সকল অন্যায় স্বমুলে নিঃশেষ করা সম্ভব। অরাধী যতই শক্তিশালী হোক তারা দুর্বল। আজ সত্যের জয় হলো। জয় হলো সুস্থ্য বিবেকের।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:১০