গত ২১ শে ফেব্রুয়ারী আমার মামাত ভাই আব্দুল হামিদ কে এনেছিলাম কলকাতায় চিকিৎসা করতে। আজ ৫ মার্চ যখন বাড়ী ফিরছি তখন মালদা এসে আমার ফেসবুক ওপেন করতেই কলকাতার দি নিউজ পত্রিকার চীপ এডিটর আমার দাদা শেখর রায়ের একটা লেখা চখে পড়ল “কলকাতার বেসরকারী হাসপাতালগুলির ঠকবাজীর পর্দাফাঁক” http://thenewse.com/?p=57754 পড়ে নিলাম আর আমিও কিছু লিখার প্রয়োজন অনুভব করলাম। গৌড় তখন গড়ে গড়ে চলছিল। যে সুযোগে ট্রেনের স্লিপারে শুয়ে শুয়ে আপনারদের কিছু জানার জন্য লিখছি।
আমি কলকায় চিকিৎসার জন্য যাচ্ছি যেনে আমার কলকাতার বন্ধুরা বেশ উদগ্রিপ। তাদের মধ্যে পারভীন সুলতানা, মোহনা গঙ্গোপাধ্যায় ও তার স্বামী ড, সংকেত শেখর, কে কে ভেরালী, অভিজিৎ রায় ও বর্ষিয়ান সাংবাদিক ও কলামিষ্ট শেখর রায়। তাদের সবার মতামত আমি যেন আমার মামাতো ভাইকে নিয়ে দক্ষিন ভারতে যাই।
বর্ষিয়ান সাংবাদিক শেখর দাদা আমাদের দুগর্তির কথা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করতে পেরেছেন। গত ২৩ ফেব্রুয়ারী এ নিয়ে দাদার সাথে আমার ফােনে কথাও হয় । দাদা আমাকে দক্ষিন ভারতে যেতে বলেছিলেন কিন্তু রুগীর অবস্থা ভাল নয় বলে কলকাতার এনএইচ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কার্ডিয়ান ইনিস্টিটিউট হসপিটালের গ্যাস্টোলজির ড: চিম্বময় বেরা কে দেখায় । উনি কিছু টেস্ট দিলেন, যা করাতে ২০ হাজার মত লাগে গেল। রিপোর্ট দেখে উনি একই ডিপার্টমেন্ট এর ড: সদ্বিপ পালকে দেখাতে বললেন। আমরা পরের দিন মি: পালকে দেখালাম। মি: পাল কিছু টেস্ট দিলেন এবং দ্রুত রুগিকে হসপিটালে ভর্তি করাতে বললেন। আমরা তাই করলাম। ভর্তির সময় এডভান্স করলাম কিছু টাকা। চিকিৎসা শুরু হলো ২৪ ঘন্টায় মাত্র দু‘ঘন্টা রুগীর সাথে সাক্ষাৎ করতে পারন নিকট জনরা । বিকেল ৫~৭টিা, ঠিক সেই দু’ঘন্টায় রুগীর স্বজনরা সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের সাথে দেখা করে রুগির হালত জানতে পারবেন এবং ঠিক ঐ দু’ঘন্টার মধ্যেই বিলিং সেকশনে বিল জানতে পারেন। বাংলাদেশের রুগী আর তাদের লোকদের যে কি অবস্থায় পড়তে হয় এই ডেক্স থেকে ঐ ডেক্স এই ওপিডি থেকে ঐ ওপিডি। টোকেন নেয়া নার্সদের ভাষা বুঝার সমস্যা, সিরিয়াল নেয়া সে আমি বাস্তবে যেনে গেছি। যাক রুগীর কথা বলি ভর্তির তিন দিন পরে ওনারা ( চিম্ববেরা আর স্বদ্বীপ পাল) বল্লেন এটা আমাদের বিষয় না আপনার রুগীকে প্রতীক দাস কে রেফাড করা হয়েছে এখন থেকে ওনার সাথে যোগাযোগ করবেন। ড; প্রতীক দাস নেফ্রোলজির ডাক্টর । উনি এবার সিটিস্ক্যানসহ আর কিছু টেস্ট দিলেন আর বল্লেন রুগীর কিডনী ফটো হয়ে সেখান দিয়ে প্রোটিন লিক করছে। বল্লাম সেটা ঔষুধে সারবে কিনা। উনি বল্লেন সে এখন বলা যাবে না কিডনীর বায়োপসি করতে হবে। ইতোমধ্যে আমাদের হাসপাতালের চার্জ, টেস্ট অন্যান্য খরচ মিলে ২ লক্ষ টাকা শেষ। সাতদিন হাসপাতালে থেকে ডিচার্চ এর আবেদন জানালাম। জেনারেল ওয়াড ওপিডি বল্লেন রুগী যে ডক্টরের আন্ডারে ভর্তি হয়েছে সে ডক্টরের ছাড়পত্র নিতে হবে। ডক্টরের কাছে গেলাম প্রতীক দাস বল্লেন আমি ত বলতে পারবনা আমার আন্ডারে তো ভর্তি হয়নি প্রথম যাকে দেখিয়েছেন তার কাছে গেলাম। কিন্তু মি: বেরা তখনও বসেন নাই দু'ঘন্টা অপেক্ষা করলাম তিনি আসলেন না। তখন কি করি ডা: স্বদ্বীপ পাল এর কাছে গেলাম। তিনি বল্লেন রুগীর অবস্থা কি সেটা নেফ্রোলজির ডক্টর প্রতীক দাস বলতে পারবেন। আমার ছাড়তে আপত্তি নেই। এই অবস্থা চলতে থাকলে রুগি এডমিশনের সময় একটা ফরেন হেল্প ডেক্স চোখে পড়েছিল আমার, সেখানে গেলাম আর সহযেগীতা চাইলাম। তিনি ডক্টরদের ফোন করলেন এবং বল্লেন ডক্টর স্বদ্বীপ পাল ছাড়তে চান কিন্তু চিম্বয় বেরা রাজি নয়। ফরেন হেল্প ডেক্সকে আমাদের টাকা শেষ হবার কথা জানালাম ভদ্রলোক খুব ভালো মানুষ সেখান থেকে আমাদের ডিচার্চ এর একটা পথ খু্লল। দির্ঘ ৫ ঘন্টার একটা প্রক্রিয়ার সম্পন্য করার পর রুগীকে ছেড়ে নিলাম। একটা হুইল চেয়ার ব্যাবস্থা করতে হসপিটাল কর্তৃপক্ষে প্রায় ৩৫ মিনিট সময় লাগল। বর্তমানে রুগীর তেমন কোন উন্নতি হয়নি। গৌড় এক্সপ্রেস এ তৎকালে টিকিট কেটে ৪ তারিখ রাত ১০:২২ এ শিয়ালদা ট্রেনে উঠেছি এখন সকাল ১০:০০ বালুরঘাট পৌছিতে পারিনি। সিংবাদ নিলাম ট্রেনটি ২ ঘন্টা লেটে চলছে। মালদা এসে শেখর দাদার এই নিউজটি পড়ে মনে হলো আমার অবস্থাও কিছু লিখি। যদি আমাদের দেশের রুগীদের কিঞ্চিত উপকার হয়। তাই স্লিপারে শুয়ে শুয়ে ক'লাইন টাইপ করলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ৮:৪৭