ওরা হেফাজতে ইসলাম নয়- হেফাজতে জামাত ॥
লংমার্চ নাস্তিক্যবাদবিরোধী কর্মসূচি নয়; বরং কট্টর নাস্তিক মাওসেতুংয়ের নাস্তিক্যবাদ তথা কমিউনিস্টবাদ প্রতিষ্ঠার কর্মসূচি
লংমার্চ জায়িয প্রমাণ করতে পারলে আনজুমানে আল বাইয়্যিনাত-এর পক্ষ থেকে একশ’ কোটি টাকার চ্যালেঞ্জ ঘোষণা।
নাস্তিক মাওসেতুংয়ের লংমার্চ যারা করছে তারাও নাস্তিক;
হেফাজতে ইসলাম যারা দাবি করছে তারাও মুশরিক।
সম্প্রতি হেফাজতে ইসলাম নামধারীদের তথাকথিত লংমার্চ কর্মসূচি আমাদের দৃষ্টিগোচরীভূত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আমরা স্পষ্ট ও বলিষ্ঠভাবে বলতে চাই- ইসলাম হেফাজতের মালিক কোনো মানুষ নয়, বরং স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার সূরা হিজর শরীফ উনার ৯নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি স্পষ্টভাবে বলেন- অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল করেছি এবং আমিই এই কুরআন শরীফ হেফাজতকারী।” এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার আলোকে বলতে হয়- যেসব ব্যক্তিরা উনার হেফাজতকারী বলে দাবি করবে, তারা মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে শিরককারী তথা কাফির।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অভিযোগ উঠেছে হেফাজতে ইসলাম নামধারীরা মূলত জামাতের দ্বারা প্রভাবিত ও পরিচালিত হয়ে হেফাজতে জামাত হিসেবে কাজ করছে। নতুবা মুষ্টিমেয় নাস্তিক ব্লগারদের বিরোধিতা ছাড়া দেশে সুদ-ঘুষ, অশ্লীলতা, বেপর্দা-বেহায়াসহ যাবতীয় অনৈসলামী কাজের বিরুদ্ধে তথাকথিত হেফাজতে ইসলামের কোনো কর্মসূচি নেই কেন?
অপরদিকে হেফাজতে ইসলাম নামধারীরা নাস্তিক্যবাদের বিরুদ্ধে কর্মসূচি দিলেও তারা নাস্তিক্যবাদ প্রতিষ্ঠার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে তথা লংমার্চ করছে। আর এই লংমার্চ ১৯৩৪ সালে প্রথম করে বিশ্বখ্যাত কট্টর কমিউনিস্ট নাস্তিক নেতা মাওসেতুং।
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লংমার্চ করা কোনোভাবেই জায়িয নেই, বরং সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয। আলিম-উলামা নামধারী কারো জন্যই লংমার্চ করা জায়িয নেই। কারণ ইতিহাসে সর্বপ্রথম লংমার্চ করেছে ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী চীনের কাট্টা কম্যুনিস্ট নেতা নাস্তিক মাওসেতুং। (Selected works of Mao lse tung Vol-1, page 161-162)
ইতিহাসে দেখা যায়, ১৯৩০-৩৪ সালের মধ্যবর্তী সময় তৎকালীন চীনের প্রেসিডেন্ট চিয়াং কাইশেক কম্যুনিস্টদের বিরুদ্ধে দমন অভিযান চালালে পালানোর কৌশল হিসেবে কম্যুনিস্টরা চীনের দক্ষিণ-পূর্ব কিয়াংসি থেকে পশ্চিম দিক দিয়ে ঘুরে প্রায় (৬-৮) হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে চীনের উত্তর-পশ্চিম সেনসি প্রদেশে পৌঁছে। পথে তাদের ১৮টি পাহাড়ের সারি ও ২৪টি নদী অতিক্রম করতে হয়। ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী নাস্তিক মাওসেতুংয়ের নেতৃত্বে কম্যুনিস্টদের এই দীর্ঘ বিপদসঙ্কুল পথ অতিক্রমের কাহিনীই ইতিহাসে লংমার্চ নামে অভিহিত বা মশহুর।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত অর্থাৎ তার হাশর-নশর তাদের সাথে হবে।” (মুসনাদে আহমদ শরীফ, আবু দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
তাই পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে কোনো বিধর্মীর সাথে মিল মুহব্বত রেখে তাদেরকে অনুসরণ-অনুকরণ করা জায়িয নেই। বরং যে আলিম-উলামা নামধারীরা তাদের অনুসরণ করে লংমার্চ করবে সে ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী কাট্টা কম্যুনিস্ট নেতা নাস্তিক মাওসেতুংয়ের ভাবশিষ্য বলে প্রতীয়মান হবে এবং মাওসেতুংয়ের সাথেই তাদের হাশর-নশর হবে।
তাছাড়া লংমার্চ শব্দও ব্যবহার করা জায়িয নেই। কারণ মহান আল্লাহ্ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “হে ঈমানদারগণ তোমরা রঈনা বলো না, বরং উনযুরনা বলো এবং শ্রবণ কর (বা শুনতে থাক) আর কাফিরদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৪)
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ‘রঈনা’ শব্দের বদলে ‘উনযুরনা’ শব্দ ব্যবহার করতে বললেন। কারণ ‘রঈনা’ শব্দ ভালো খারাপ উভয় অর্থে ব্যবহৃত হলেও ‘উনযুরনা’ শব্দ শুধুমাত্র ভালো অর্থেই ব্যবহৃত হয়। তাই যেসব শব্দ ভালো মন্দ উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়, সেসব শব্দের পরিবর্তে উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ মুতাবিক ওটার সমার্থক অর্থবোধক শব্দ ব্যবহার করতে হবে, যা শুধুমাত্র ভালো অর্থই ব্যবহৃত হয়।
তাই লংমার্চ শব্দের দুটি অর্থ: আভিধানিক ও ব্যবহারিক। আভিধানিক অর্থে লংমার্চের অর্থ লম্বা সফর আর ব্যবহারিক অর্থে নাস্তিকদের পলায়নের এক বিশেষ পদ্ধতিকে বুঝায় এবং এই অর্থেই এটা অধিক মশহুর। তাই লংমার্চ যেহেতু ভালো ও মন্দ উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়, তাই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার উপরোক্ত আয়াত শরীফ অনুযায়ী এই শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। কারণ লংমার্চ সর্বপ্রথম পবিত্র ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদের ধারক ও বাহক নাস্তিক মাওসেতুং কর্তৃক উদ্ভাবিত হয়।
মহান আল্লাহ্ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “যে ব্যক্তি পবিত্র দ্বীন ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন (নিয়ম-নীতি, অন্য ধর্ম) তালাশ করে, তা কখনই তার থেকে গ্রহণ করা হবে না এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে অর্থাৎ জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৫)
সুতরাং আলিম-উলামা নামধারী যারা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে বাদ দিয়ে বিধর্মী নাস্তিক মাওসেতুং কর্তৃক উদ্ভাবিত লংমার্চ করবে তারা পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে ।
সুতরাং নাস্তিক ব্লগারদের নামে প্রকৃতপক্ষে জামাতে মওদুদীর এজেন্ডা বাস্তবায়নে, যুদ্ধাপরাধী-রাজাকারদের বিচার বানচালে তথাকথিত হেফাজতে ইসলামের লংমার্চের আহবান মূলত ‘হেফাজতে জামাত’ তথা ‘হেফাযতে মাওসেতুং’-এ পরিণত হয়েছে। তাই প্রত্যেক মুসলমানদের জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে হারাম লংমার্চ থেকে নিজে বিরত থাকা ও অন্যকে বিরত রাখা। আর ‘পবিত্র কুরআন শরীফ-পবিত্র সুন্নাহ শরীফ বিরোধী কোনো আইন পাস হবে না’ এ প্রতিশ্রুত বদ্ধ সরকারের জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে ইসলাম বিরোধী ও দেশবিরোধী এই হারাম লংমার্চ বন্ধ করে দেয়া।
রাজারবাগ শরীফ-এর পক্ষে
আল্লামা মুহম্মদ মাহবুব আলম
সম্পাদক- দৈনিক আল ইহসান ও মাসিক আল বাইয়্যিনাত
কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক- আনজুমানে আল বাইয়্যিনাত, বাংলাদেশ।