যদিও বলা হয় ঋতুরাজ বসন্ত, বসন্তে প্রকৃতিতে একরাশ সৌন্দর্য্য নেমে আসে। কিন্তু অন্যদিকে শীতকাল রুক্ষ হলেও ফুলে ফুলে ভরে ওঠে সবার বাগান। জানি শহুরে জীবনে সবারই বাগান করার মত জায়গা নেই, কিন্তু এখন এই দেশে সবুজায়ন আন্দোলনের যে স্রোত বইছে ,এতে যার ছোট্ট একটু বারান্দা আছে, সেখানেই তিনি দু’চারটে গাছ লাগা্ন। হোক সে গাছ ফুল, ফল বা সব্জির। এই শীতে টবেই চাষ হয় বেগুন, কাঁচা মরিচ, টমেটো, ধনেপাতা, লাউ, শিম, লেবু থেকে কমলা লেবুও।
খুব ছোটবেলা থেকেই বাগান করার শখ আমার। সেই চতুর্থ/পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি তখন থেকে। গ্রামের বাড়ী, প্রায় এক একর জমির উপরে বাড়ী আমাদের। একপাশে ফলের গাছ, আরেকপাশে কাঠের গাছে, আরেকপাশে সবজি বাগান আর আরেকপাশে আমার ফুলের বাগান। আমাদের এলাকায়, আমাদের বাড়ী “ফুলের বাগানবাড়ী”-নামে পরিচিত ছিল সে সময়ে! চারপাশে কাঁটা মেহেদীর বেড়া দেওয়া ছিল বলে, কোনদিন কোন গাছ বা ফুল নষ্ট হয়নি। এখন আমি আর আমার বাড়ীতে নেই,(চলে এসেছি পরের ঘরে) আমার বাগান আর নেই!
বিবাহিত জীবনে, সাথী হিসেবে যাকে পেয়েছি, তিনি আমার শখের মূল্য দিয়ে থাকেন। এখন আমার শখ যেন তারও শখ। তার চাকুরিসূত্রে দেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থান করেছি আমি। শহুরে ভাড়া বাড়িতে টবেই বাগান করতাম। বদলি হয়ে অন্য কোথাও গেলে, সেই টবগুলো আর নেয়া হতো না!! আবার নতুন করে শুরু করতে হয়েছে আমাকে। এভাবেই বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে এক সময় ঢাকায় থিতু হলাম আমি।
ছোট্ট একটু জায়গা কিনে বাড়ী করলাম। আবারও বাগান আমার সেই ছাদের টবেই!! ধিরে ধিরে স্বপ্ন জাগলো মনে, স্থায়ী বাগান করব ছাদেই। চারপাশে ইট সিমেন্ট দিয়ে ঘিরে, ভেতরে মাটি দিয়ে হয়ে গেল আমার সাধের বাগান। প্রতিদিন বিকেলটা আমার ওখানেই কাটে। মাঝে মাঝেই হাজিরা দিই নার্সারিতে নতুন নতুন গাছের আশায়।
আমার ফুল বাগান, ফল বাগান, সবজি বাগান সবই আছে ছোট্ট পরিসরে আর অবশ্যই সেটা ছাদে। আজ আমি আমার ফুল বাগানের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। ফল আর সবজি পরে হবে।
আমার ফুল বাগান দুই ধাপে, মানে বাড়ীর মুল ছাদে আর ছোট্ট একটা ইউনিটের ছাদে। নিচের ধাপে ফল, সবজিও চাষ হয়। উপরে সব টুকুই ফুলের জন্য বরাদ্দ, তবে রেলিং-এ লাউ শিমও চাষ হয়। তো চলুন আজ বিকেলে ঘুরে আসি।
এই টুকুই আমার নিচের বাগানের পরিসর।
এই টুকুতে শুধু গাঁদা ফুল।
পাশেই সিলভিয়া আর তার বন্ধুবন্ধবী।
এই কর্নারে গাঁদা, ডায়ান্থাস, ডালিয়া,সাথে অনেক রকমের লিলিও আছে। পেছনের উঁচু বেড-এ ফলের গাছ।
কাঠগোলাপ ঝরে গেছে, ওখানেই ফুটে আছে লাল গোলাপ।
মে ফ্লাওয়ারের সময় এখন নয়, তাই এখানে এখন চাইনিজ গাঁদা।
পাশেই গাঁদা, ডালিয়া, রঙ্গন। পেছনের বড় বেড-এ কামরাঙা আর লেবু গাছ।
এবার চলুন উপরে যাই।সিড়ির নিচেই আমার হাসনাহেনা গাছ।
উঠেই আমার শিউলি গাছ। (এটা বিবিকিউ কর্নারের একটুখানি আমি দখল করেছি।)
শরতে শিউলি এসেছিল আমার বাগানে।
এখন এখানে আরো আছে শীতের ফুল।
দু'ধাপ পেরিয়ে আরেকটু উপরে যাই। উঠে বামেই আমার বকুল গাছ।
এটুকু উপরের বাগানে অর্ধাংশ। ধীরে ধীরে সবদিকেই ঘুরব আমরা।
এটা মুল বাড়ির পানির ট্যাংক, তাই হালকা পাতলা শুধু টবই রেখেছি।
গোলাপ।
চন্দ্রমল্লিকা।
গোলাপ।
গোলাপ।
চন্দ্রমল্লিকা।
এই পানির ট্যাংক-এর উপরে টবে লাগানো আমার এই ফুলগুলো।
সাইকাস কর্নার।
সাইকাস কর্নারে গতবছর ছিল গাঁদায় ভরা। এবছরে মল্লিকা বন।
এই ল্যান্টানার কোন ঋতু নেই, সারা বছরেই ফুটছে।
মস রোজ/ পর্তুলাকা কর্নার।
পাশেই নয়নতারা।
জবা কর্নার। পাশেই মরিচ ধরেছে কত্তগুলো!
দোলনচাঁপা বন।
এরোমেটিক জুঁই নামে বাংলাদেশে পরিচিত, ইংরেজি নামটা ভুলে বসে আছি।
ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হলে, এখানে একটু বসে নেই আমরা। চা পর্বও হয়ে যাক!
বাগান দেখাও মোটামুটি শেষ। ফুলের শেষ নেই। অজস্র, অসংখ্য। আজ আর নয়, সন্ধ্যেও হয়ে এল, এবার ফেরা যাক।
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৩১