পিয়াইন নদিতে ঝর্নার প্রতিচ্ছবি, স্বচ্ছতার আরেক রূপ!!
প্রথম পর্বে ছিলঃ ভরা বর্ষায় আমার সিলেট ভ্রমণ - বিছানাকান্দি, সিলেটের আরেক বিস্ময়!!!
পানতুমাই থেকে বিছানাকান্দি ৩০ কি.মি. এর মত। বিছানাকান্দি দেখা শেষ করে আমরা ঐ নৌকাতেই চললাম পানতুমাই দেখতে। পাহাড় ঘেঁষা আঁকাবাঁকা নদিপথে চলেছি আমরা। মাঝে মাঝেই দেখা যায় আরো পর্যটকের নৌকা, স্কুলগামী ছেলেমেয়েরাও চলেছে নৌকাতেই। প্রতিটি বাড়িই যেন একেকটি দ্বীপ। এদের বাড়ির পাশ দিয়েই নদি, তাই আনুসাঙ্গিক সমস্ত কাজকর্মই নদিতে হচ্ছে। ১০/১২ বছরের বাচ্চা শিশুরাও প্রয়োজনে একাই নৌকা অথবা ভেলা চালিয়ে, তাদের প্রয়োজন সারছে, নদি পাড়ের গাছে উঠে পানিতে লাফিয়ে পড়ে ঝাপাঝাপি করছে। এমন দৃশ্য কত যুগ যেন দেখি না! মুগ্ধ বিস্ময়ে এসব দেখতে দেখতে এক সময় চলে এলাম পানতুমাই। জানি না কতক্ষণ ধরে নৌকায় এলাম, হয়তো ঘন্টাখানেক।
(১)
(২)
(৩)
(৪) এ নৌকায় নতুন বউ আসছে মনে হয় !!
(৫)
(৬)
(৭)
(৮)
(৯)
(১০) আশেপাশের গ্রামের এমনই চিত্র, যা আমাকে মুগ্ধ করেছে!
(১১)এভাবেই পাথর তুলে স্তুপ করে রাখা হয়েছে, পাশে রাখা পাথর ভাঙ্গা মেশিন।
(১২)ছুটে চলছে পাথরবাহী নৌকার দল।
(১৩)আমরা পানতুমাই-এর কাছাকাছি চলে এসেছি।
পানতুমাই চোখ জুড়ানো একটি গ্রাম! সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার একটি গ্রাম এই পানতুমাই। পানতুমাই গ্রামকে বলা হয় বাংলাদেশ-এর সবচেয়ে সুন্দর গ্রাম। অনেকে একে “পাংথুমাই”-ও বলেন, আবার কেউ বলে্ন এটি পানতুমাই। মেঘালয় রাজ্যের সারি সারি পাহাড় , ঝর্না , ঝর্না থেকে বয়ে আসা পানির স্রোতধারা , আর দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ আর সবুজ এই গ্রামটি । এই গ্রাম থেকে খুব কাছে দাঁড়িয়ে দেখা যায় ভারতের বড়হিল ঝর্ণা।
বাংলাদেশের কোল ঘেঁসে প্রতিবেশী ভারতের মেঘালয়ের গহীন অরণ্যের মাঝ থেকে বাংলাদেশের দিকে নেমে এসেছে এই অপরূপা ঝর্নাধারা! ঝর্নাটির স্থানীয় নাম ফাটাছড়ি ঝর্না, আবার কেউ কেউ বলেন বড়হিল ঝর্না। ঝর্নাটি ভারতের মধ্যে পড়লেও পিয়াইন নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে খুব কাছে থেকে দেখা যায় এটি। তাই সব সৌন্দর্য্য উজার করে দিয়েছে আমাদের বাংলাদেশকেই। এর শুভ্র পানির স্রোতধারা এসে মিশে যাচ্ছে আমাদের পিয়াইন নদিতে। পিয়াইন তাই সব সময়েই ভরাযৌবনা। পাশেই বিএসএফের ক্যাম্প। কয়েকটা বড়ই গাছ দেখলাম, ওখানেই বাংলাদেশের শেষ সীমানা। এখানে বিজিবির কোনো ক্যাম্প বা কোন চৌকি নেই। তাই সীমানার কাছাকাছি যাওয়া বিপদজনক। আমরা কিছুটা সীমানা অতিক্রম করেছিলাম। বিএসএফ-এর টহল নৌকা দেখে ওখান থেকেই ফিরেছি। পিচ্চি ছেলেরা ছোট ছোট ডিঙি নৌকা নিয়ে বসেছিল বাংলাদেশের সীমানায়। ওরাই নিয়ে গেল আমাদের ভারতের সীমানার কিছুটা ভিতরে। বলল, “ যাওয়া যাবে। আসেন ভয় নাই।“ নৌকাগুলো এতোই ছোট, দু’জনের বেশী তিনজন ওঠা যাবে না। আমার মনে হচ্ছিল ঝর্ণার এত কাছে নিশ্চয়ই গভীর পানি। আমি সাঁতার জানি কী না তাও ভুলে গেছি । সেই কোন্ ছোটবেলায় নানাবাড়ি গেলে পুকুরে সাতার কেটে গোসল করতাম। বড় হবার পরে আর সাতার কাটার জায়গাই পাইনি।
স্থানীয়দের কাছে শোনা, অনেক আগে ঝর্নার কাছে যাওয়া যেত। বিএসএফ এর ক্যাম্প ছিল না। কিন্তু বাঙালী আর খাষিয়া মারামারি হওয়ার কারণে এখন যাওয়া নিষেধ। আমরা নিরাপদ দূরত্ব রেখে এর অপরূপ সৌন্দর্য্য শুধু দেখলাম আর মনের গহীনে গেঁথে নিলাম!!!
(১৪) এটাই ভারতের বড়হিল ঝর্ণা।
(১৫)এতদূর পর্যন্ত গিয়েছিলাম আমরা।
(১৬) সামনের বড়ই গাছ পর্যন্তই বাংলাদেশের শেষ সীমানা।
(১৭) ভারতের পাহাড়ের সুপারী বাগান।
(১৮) সামনেই ভারতীয় মৎস শিকারী।
(১৯) এই সৌন্দর্য্য শুধুই মুগ্ধ হয়ে দেখবার।
(২০) ওপারেও অনেক পর্যটকের ভীড়।
(২১) টহলরত বিএসএফ।
(২২) ফিরে এলাম একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে!!
(২৩) ফেরার পথে আকাশটাও যেন হাসিমুখে বিদায় জানাল।
তথ্যসুত্রঃ আমাদের নৌকায় মাঝি ছাড়াও একজন গাইড ছিলেন। তার কাছে থেকে আমরা অনেক তথ্য পেয়েছি। স্থানীয় বলতে আমি তাকেই বুঝিয়েছি।
ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:২৬